গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে জনগণকে জেগে ওঠার আহ্বান

গণ-অবস্থান থেকে সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ-মিছিলের ডাক

স্টাফ রিপোর্টার: শীতের সকালে হঠাৎ আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিলো রাজধানীর নয়া পল্টনসহ আশপাশের এলাকায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের তাপ যেমন বাড়ছিলো, তেমনি আন্দোলনের উত্তাপও ছড়িয়ে পড়েছিলো নগরময়। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বেলা সাড়ে ১০টায় শুরু হয় গণঅবস্থান কর্মসূচি। প্রায় ৪ ঘণ্টা চলা এ কর্মসূচি শেষ হয় বেলা ২টায়। এ সময় ফকিরেরপুল থেকে শুরু করে কাকরাইল পর্যন্ত পুরো এলাকায় নেতাকর্মীরা রাস্তায় পলিথিনের ওপর বসে অবস্থান নেয়। এলাকাটি জনসমাবেশে রূপ নেয়। এ সময় নেতাকর্মীদের মাথা ছিলো লাল-সবুজ-হলুদ-নীল টুপি যা কর্মসূচিকে ভিন্ন রূপ দিয়েছিলো। দলটির নেতাকর্মীরা, ‘হটাও হাসিনা, বাঁচাও দেশ, খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে’ ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ ‘জ্বালোও জ্বালোও আগুন জ্বালো’, ‘শেখ হাসিনার গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে’ ‘এই মুহূর্তে দরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ইত্যাদি সেøাগান দিয়ে পুরো এলাকা সরব করে রাখে। প্রায় চার ঘণ্টার এই কর্মসূচির ফাঁকে ফাঁকে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাস শিল্পীরা দলীয় এবং দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন করে। অবস্থান কর্মসূচি উপলক্ষ্যে নয়া পল্টনের বিভিন্ন গলিতে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় সরকার গঠন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে গতকাল বুধবার ঢাকাসহ দেশের ১০ বিভাগীয় শহরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপিসহ সরকার বিরোধী দলগুলো। কর্মসূচি থেকে সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনে অংশ হিসেবে ১০ দফাসহ বিদ্যুতের মূল্য কমানোর দাবিতে আগামী ১৬ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগর-জেলা-উপজেলা পৌর সদরে সমাবেশ-মিছিলের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মসূচি থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ, পূর্বপ্রান্তে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, আরামবাগের ইডেন কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণফোরাম, বিজয়নগরের পানির ট্যাংকের কাছ থেকে ১২ দলীয় জোট, পুরানা পল্টনে প্রতীম হোটেলের কাছ থেকে সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট ও কারওয়ান বাজারে এফডিসির কাছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এলডিপিও আলাদা আলাদাভাবে একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আগামী ১৬ জানুয়ারি ১০ দফা দাবি আদায় ও বিদ্যুতের মূল্য কমানোর দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে সকল মহানগর-জেলা-উপজেলা-পৌর সদরে সমাবেশ ও মিছিল হবে। এ সময় কর্মীরা তখন তুমুল করতালি দিয়ে এই কর্মসূচিকে সমর্থন জানায়। ১০ দফা দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা দল এবং কয়েকটি জোট যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে গত ২৪ ডিসেম্বর। অবস্থান কর্মসূচিতে সমাপ্তি টেনে সদ্য কারামুক্ত বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। সবাইকে আরও বেশি করে জেগে উঠতে হবে। জেগে উঠে স্বৈরশাসকের দুঃশাসনের তখতে তাউসকে সরিয়ে সেখানে জনগণের সরকার, জনগণের পার্লামেন্ট গঠন করাতে বাধ্য করতে হবে।’ আওয়ামী লীগ গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেজন্য এখন দলটি পুলিশ ও আমলাদের ওপর নিভর করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা জোর করে দখল করে রাখতে হচ্ছে। এজন্য সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। এই সরকারকে সরিয়ে দেয়ার জন্য, গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য এবং মানুষের ভোটের অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য সব দল একমত হয়েছে। সবাই ১০ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে এই আন্দোলনকে সফল করবে।’ ওয়াসার এমডি তাকসিম প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই কর্মকর্তা আমেরিকাতে নাকি ১৮টা বাড়ি কিনেছেন। একটা বাড়ি নাকি ৫১৫ কোটি টাকা। তাহলে ভাবা যায় কোন দেশে বাস করছি। দেশের একজন সরকারি কর্মকর্তা, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সরকারের কাছ থেকে বেতন নেন, সে আজকে শত শত কোটি টাকা, হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে বিদেশে বাড়ি বানাচ্ছেন। আর আজকে মানিলন্ডারিংয়ের জন্য ছোট-খাটো মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। প্রত্যেকটি ব্যাংক থেকে টাকা লুট করে তারা (ক্ষমতাসীনরা) বিদেশে পাচার করছে। সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে তারা নিয়ন্ত্রণ করে এখানে একটা লুটের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। এই সরকারের লক্ষ্য একটা-তারা অন্যায়ভাবে বেআইনিভাবে জনগণের সমস্ত অধিকারকে হরণ করে, গণতান্ত্রিক অধিকারকে দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিন্তু বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে দেবে না।’ এ সময় বিএনপি মহাসচিব ফরিদপুর ও ময়মনসিংহের গণঅবস্থানের কর্মসূচিতে পুলিশ ও সরকারি দলের হামলার ঘটনার নিন্দা জানান। একই সঙ্গে কারাগারে আটক বিএনপির আব্দুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান, শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, এবিএম মোশাররফ হোসেনসহ বন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে স্থায়ী কমিটির সদ্য কারামুক্ত সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা টোকা দিয়ে নয়, ধাক্কা দিয়ে নয়, একটা সঠিক সাচ্চা ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে চাই, আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে আমরা এই সরকারের পতন ঘটাতে চাই, আমরা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে এই সরকারের পতন ঘটাতে চাই। আমরা কোনোরকম উচ্ছৃঙ্খল-বিচ্ছৃঙ্খলতায় বিশ্বাস করি না।’ সভাপতির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা জানি, এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকলে এই ১০ দফা মানবে না। তাই আমাদের সামনে একটিই চ্যালেঞ্জ এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। আগামী দিনে গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।’ ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের আমিনুল হকের সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আফরোজা খানম রীতা, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, রকিবুল ইসলাম বকুল, মীর নেওয়াজ আলী, সাইফুল আলম নীরব, আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, মজিবুর রহমান, নিপুণ রায় চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন। অঙ্গসংগঠনের মধ্যে মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খান, মহানগর বিএনপির নবী উল্লাহ নবী, যুব দলের মামুন হাসান, মোনায়েম মুন্না, মাহবুবুল হাসান ভুইয়া পিংকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, রাজিব আহসান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, মৎস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, তাঁতী দলের কাজী মুনীরুজ্জামান মুনীর, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, উলামা দলের মাওলনা আবুল হোসেন, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কাদের গনি চৌধুরী, জিয়া পরিষদের আব্দুল কুদ্দুস, ড্যাবের আব্দুস সালাম, এ্যাবের রিয়াজুল ইসলাম রিজু প্রমুখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More