গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে জিপিএ-৫ ছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ নেই

বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বেশি বেকায়দায় : মেধার মূল্যায়ন না হওয়ায় বাড়ছে অসন্তোষ

স্টাফ রিপোর্টার: ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন। এর মধ্যে জিপিএ৫ পেয়েছেন এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। ফলে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পড়তে হচ্ছে বিপাকে। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পাওয়ায় এর চেয়ে কম জিপিএ পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীরা গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগই পাবেন না। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মনে করছেন, গুচ্ছভুক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয় যে পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটি এক রকম প্রহসন।
জানা যায়, এ বছর ২৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছভর্তিতে যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ২০টি, কৃষি ছয়টি এবং প্রকৌশল গুচ্ছে যুক্ত হয়েছে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া বাকি ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের মতো করে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।
গত বৃহস্পতিবার সাধারণ ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি গুচ্ছের ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বৈঠক হয়। ভর্তিচ্ছু আবেদনকারীর বিজ্ঞান শাখার জন্য ন্যূনতম জিপিএ ৭, বাণিজ্য শাখার জন্য ন্যূনতম জিপিএ ৬.৫ এবং মানবিক শাখার জন্য ন্যূনতম জিপিএ ৬ থাকতে হবে। তবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ৩ থাকতে হবে। এসব যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা কোনো প্রকার ফি ছাড়াই প্রাথমিক আবেদন করতে পারবেন। তাদের মধ্য থেকে দ্বিতীয় ধাপের জন্য নির্বাচিতরাই শুধু ভর্তি পরীক্ষায় বসতে পারবেন। গুচ্ছভুক্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একযোগে যতোজন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়ার সুযোগ রয়েছে, মেধার ভিত্তিতে ততোজন শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচিত করা হবে।
জানা যায়, সাধারণ ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি গুচ্ছভুক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা ২০ হাজারের ওপরে। তবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে সর্বোচ্চ দেড় লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। যেহেতু ফলের ভিত্তিতে দ্বিতীয় ধাপের জন্য নির্বাচিত করা হবে, তাই যারা জিপিএ ৫ পেয়েছেন, তাদের বাইরে অন্য কারো এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ নেই।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, গুচ্ছভুক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটি প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ ২০২০ সালে যেহেতু এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেয়া হয়নি, তাই মেধার মূল্যায়ন হয়নি। অথচ সেই ফলকে ধরে যদি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে প্রকৃত মেধাবী যারা হয়তো কোনো কারণে জিপিএ ৫ পাননি, তাদের অবমূল্যায়ন করা হবে।
মো. রাহাত নামের একজন শিক্ষার্থী জানান, প্রাথমিক আবেদনে লোক-দেখানোর জন্য খুবই কম জিপিএ রাখা হয়েছে। এখন দুই পরীক্ষায় জিপিএ ৬ বা ৭ পেয়ে যদি পরীক্ষায়ই বসা না যায়, তাহলে তাদের প্রাথমিক আবেদন নেয়ার কী দরকার? এইচএসসিতে অটো পাস দিয়ে একবার মেধার মূল্যায়ন করা হলো না আবার ভর্তি পরীক্ষায়ও যদি কম জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে না পারেন, সেটি হবে দ্বিতীয়বারের মতো মেধার অবমূল্যায়ন। আবেদনকারী সব শিক্ষার্থীকে যদি একবারে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হয়, তাহলে দুইবারে নেয়া যেতে পারে। এতে আবেদনকারী সবাই পরীক্ষা দিতে পারবেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গুচ্ছভুক্ত অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই আছে ছোট ও নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে দুই পরীক্ষায় জিপিএ ৮ পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারতেন। কিন্তু এবার গুচ্ছভুক্ত হওয়ায় এবং একযোগে একবার পরীক্ষা নেয়ায় সামান্য কম জিপিএ পেলেও ভর্তি পরীক্ষায়ই বসার সুযোগ মিলছে না।
জানা যায়, এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। জিপিএ ৪ থেকে ৫-এর মধ্যে রয়েছেন চার লাখ ৯৯ হাজার ৭৪০ জন, জিপিএ সাড়ে ৩ থেকে ৪-এর মধ্যে রয়েছেন তিন লাখ ৪১ হাজার ৪৪ জন, জিপিএ ৩ থেকে সাড়ে ৩-এর মধ্যে রয়েছেন দুই লাখ ১৭ হাজার ৯৬৩ জন। তবে বিজ্ঞান বিভাগ থেকেই জিপিএ ৫ পেয়েছেন এক লাখ ২৩ হাজার ৬২০ জন, মানবিক বিভাগ থেকে ১৯ হাজার ৬৬৪ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ১০ হাজার ৩৩০ জন। ফলে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদেরই বেশি বেকায়দায় পড়তে হবে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, অনেক শিক্ষার্থীই সামান্য কারণে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাননি। তারা ভালোভাবে পড়ালেখা করলেও করোনার কারণে এইচএসসি পরীক্ষায় বসতে পারেননি। ফলে অটো পাসের কবলে পড়ে তাঁরা এইচএসসিতেও জিপিএ ৫ পাননি। ২০২০ সালে জিপিএ ৪ থেকে ৫ পাওয়া যে চার লাখ ৯৯ হাজার ৭৪০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন, তাদের বেশির ভাগই মেধাবী। অথচ গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে মেধাবী হয়েও অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায়ই বসতে পারবেন না।
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের গুচ্ছভুক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা সীমিত। আমরা যেভাবে পরীক্ষা নেব, এতে বিজ্ঞান বিভাগের সব শিক্ষার্থী হয়তো পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবে না। আমরা আগের ভর্তি পরীক্ষায় দেখেছি, জিপিএ ৫ ছাড়া সাধারণত বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগও পায় না। তবে আমরা চেষ্টা করছি, বিশ্ববিদ্যালয় ও তাদের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মিলিয়ে কিভাবে সর্বোচ্চসংখ্যক শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় বসানো যায়।’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More