চলমান এক সপ্তাহের লকডাউন বেড়ে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বৃদ্ধি : আরও বাড়তে পারে

শ্রমজীবী ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীরা দুর্দশায়

স্টাফ রিপোর্টার: সামনে ঈদ, চলছে লকডাউন। করোনা সংক্রমণ ক্রমেই বাড়ছে। এবারে লকডাউনে সায় অধিকাংশেরই। তাই অপেক্ষাকৃত কম লোকই রাস্তায় বেরোচ্ছে। কিন্তু যারা অসচ্ছল, দিনে এনে দিনে খায় তাদের অবস্থা ত্রাহি। রোজকার কর্ম না থাকায় আয় নেই। ঘরে বসে সঞ্চয় ভেঙে খাবে এমন পরিস্থিতিও নেই এই শ্রেণির লোকদের। ফলে, করোনাভীতি আর জীবনপ্রীতি দুটো নিয়ে এক কঠিন টানাপোড়েন চলছে। কারো ঘরে শিশু রয়েছে। এই করোনায় কর্মহীন হয়ে শিশুখাদ্য কেনার সামর্থ্যও হারিয়েছেন অনেকে। তারা জানে না কতো দিন এ পরিস্থিতি থাকবে।
হাঁটে-ঘাটে-মাঠে এখন আর মানুষের সেই ভিড় নেই। রাস্তায়ও নেই ভেঁপুর বড় আওয়াজ। এই শহরে যারা দিনমজুরি করে খায়, কিংবা নিজেই নিজের চাকরি অর্থাৎ স্বকর্মসংস্থানে নিয়োজিত তারা ভালো নেই। একথা ঠিক যে, জীবন তো আগে। কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম চাহিদার পূরণ তো লাগবে। সেই অবলম্বনও অনেকের নেই। ভাসমান যারা, তারা যাবে কোথায়, খাবে কী?
নিম্ন-আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের সবাই সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতেও নেই। ফলে, এই লকডাউনের জীবনে তাদের দরকার দুই বেলা খাবার নিশ্চিত করা। দিনমজুর চুন্নু মিয়া বলেন, আগের লকডাউনে অনেকেই খাবারদাবার দিতো। এখন কেউ কিছু দিচ্ছে না। তার মতে, লকডাউন তো দিতেই হবে। কিন্তু এই সময়ে যদি সাহায্য পাওয়া যেত, তাহলে আর কষ্ট হতো না। লকডাউনে ভাতা চালু হলে ঘরের বাইরে বেরোতে হতো না।
এক সপ্তাহের লকডাউন দ্বিতীয় সপ্তাহ বা ১৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গুঞ্জন আছে আরও বাড়বে। নয়তো উপায় কী? যে হারে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে, তীব্র হচ্ছে অক্সিজেন সংকট। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা, তাতে কঠোর লকডাউনের বিকল্প নেই। তবে ব্যবসাবাণিজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য যেমন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে (যদিও তার সুষ্ঠু বিতরণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে), তেমনি খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের জন্য নগদ অর্থ সহায়তার ব্যবস্থা করা জরুরি। এর নাম লকডাউন ভাতা হলেও ক্ষতি কী? উন্নত দেশগুলোতে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাইকে কোভিডকালীন সময়ে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। নাগরিকদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে, উৎপাদনসক্ষমতা বজায় রাখতে অন্তত খাবার নিশ্চিত করতে হবে এমনটি বলছেন বিশেষজ্ঞরাও। করোনার বিস্তার ঠেকাতে লকডাউন এবং দীর্ঘ মেয়াদে ছুটির কারণে দেশে বেকার বেড়েছে। কাজহীন হয়ে পড়েছেন বহু পরিবহন শ্রমিক, রিকশাচালক, দিনমজুর, হোটেল-রেস্তোরাঁকর্মী, ছোট দোকানদার। আর নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছেন আরো অনেকে।
অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, অতিক্ষুদ্র থেকে শুরু করে মাঝারি কিংবা বড় সব খাতই ধরাশায়ী হয়েছে করোনার থাবায়। অপেক্ষাকৃত বড় অনেকেই সাময়িক পরিস্থিতি সামাল দিতে পারলেও ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তারা আর টিকে থাকতে পারছেন না। ফলে, বাংলাদেশে দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আরো বেড়ে গেল।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশের ৫ কোটি ১৭ শ্রমশক্তি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত রয়েছে। যা দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৮৫ ভাগ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত হওয়ায় এই বিপুল পরিমাণ মানুষ রয়েছেন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। লকডাউনের ফলে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, যেকোনো দুর্যোগ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ওপরই সবার আগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। করোনা ভাইরাসের অভিঘাতও এই শ্রেণির শ্রমিকদের ওপরই প্রথমে পড়েছে। অথচ দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে এই অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের রয়েছে বড় ভূমিকা। আর দুর্যোগ কেটে গেলেও যে কাজে ফিরবেন, সে নিশ্চয়তা নেই তাদের। এজন্য কাজ হারানো এই মানুষগুলো রয়েছেন বেশি ঝুঁকিতে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার অভিঘাতে স্থবির অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে সমাজের সবার হাতেই টাকার সরবরাহ থাকতে হবে। শুধু উৎপাদকদের হাতে টাকা গেলে হবে না। উৎপাদিত পণ্য কিনবেন যিনি, তার হাতেও টাকা থাকতে হবে। নইলে পণ্য কিনবেন কীভাবে?

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More