চলমান ‘কঠোর লকডাউন’ আরো এক সপ্তাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত : প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায়

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ কমাতে চলমান ‘কঠোর লকডাউনের’ মেয়াদ আরো এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিলে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
সোমবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১১টায় মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে ভার্চুয়ালি আন্তমন্ত্রণালয়ের এ বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের লকডাউন বাড়ানোর বিষয়টি জানানো হয়। এর আগে চলমান কঠোর লকডাউন আরো এক সপ্তাহ বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। রোববার রাতে কমিটির ৩১তম সভায় লকডাউন বাড়ানোর প্রস্তাব গৃহীত হয়। দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় প্রথম দফায় গত ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়, যে বিধি-নিষেধের ধারাবাহিকতা চলে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর দ্বিতীয় ধাপে ১৪ এপ্রিল থেকে সারা দেশে ‘কঠোর লকডাউন’ শুরু হয়। এটি শেষ হবে ২১ এপ্রিল। তার আগেই জাতীয় কমিটির লকডাউন বাড়ানোর এই সুপারিশ এলো।
অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লার সভাপতিত্বে রোববার রাতে এক ভার্চুয়াল সভায় করোনা সংক্রমণের অবস্থা ও প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সারা দেশে কভিড-১৯ এর উচ্চ সংক্রমণ ও ক্রমবর্ধমান মৃত্যুতে সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি কমপক্ষে দুই সপ্তাহের জন্য পূর্ণ লকডাউন সুপারিশ করেছিল। সরকার এর মধ্যে ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করেছে। কমিটি এতে সন্তোষ প্রকাশ করে। যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে দুই সপ্তাহের কম লকডাউনে কার্যকর ফলাফল আশা করা যায় না। দেশের অর্থনীতি সচল রাখার স্বার্থে শিল্প-কলকারখানা খোলা রাখার বিষয়টি কমিটি উপলব্ধি করে। তবে বেসরকারি দপ্তর, ব্যাংক খোলা রাখা, ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল, ইফতার বাজারে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ভিড় লকডাউনের সাফল্যকে অনিশ্চিত করেছে। সভায় স্বাস্থ্য, ফায়ার সার্ভিস ও অন্য জরুরি সেবা ছাড়া সব কিছু বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। খোলা রাখা জরুরি সেবার তালিকাও প্রকাশ করার অনুরোধ করেছে কমিটি। অন্যথায় বিরূপ পরিস্থিতির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। উদাহরণ হিসেবে চলমান লকডাউন এ চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ডিউটির জন্য চলাচলে বাধা ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কথাও উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া কাঁচাবাজার উন্মুক্ত স্থানে স্থাপনের প্রস্তাব দিয়ে আরো এক সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউনের সুপারিশ করেছে কমিটি। পরবর্তী সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে সংক্রমণের হার বিবেচনা করে আবার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। ধীরে ধীরে লকডাউন শেষ করার পরিকল্পনা প্রস্তুত রাখার পরামর্শ দেয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে ডিএনসিসি কভিড হাসপাতাল চালু হওয়ায় সরকারকে অভিনন্দন জানানো হয়। রোগী ভর্তির বাড়তি চাপ থাকায় দ্রুত আরও সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হয়র‌্যানমুনা পরীক্ষা সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে কমিটি ইতোমধ্যে সরকারী নমুনা পরীক্ষা বিনামূল্যে করার পরামর্শ দিয়েছে। পিসিআর টেস্ট কিটের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় বেসরকারি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষার মূল্য পুনর্নির্ধারণের পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে করে যেমন পরীক্ষার সংখ্যা বাড়বে, তেমনিভাবে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসবে ও সাশ্রয়ীমূল্যে পরীক্ষা করা যাবে। সরকারি ল্যাবরেটরিতে চাপ কিছুটা কমবে। এতে রোগীদের পরীক্ষা ও রিপোর্ট দ্রুত প্রদান করে আইসোলেশন নিশ্চিত করা যাবে যা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি/বেসরকারি সব হাসপাতাল, ক্লিনিকে গর্ভবতী করোনা/নন করোনা মায়েদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিন্তে করার জন্য অনুরোধ করা হয়। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে অবশ্যই গর্ভবতী মায়েদের সেবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। নতুন ডিএনসিসি হাসপাতালে গর্ভবর্তী মায়েদের একটা কর্নার এ বিশেষায়িত (আইসিইউ) ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়। প্রতিটি হাসপাতাল তার নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী চেইন অব রেফারেন্স সিস্টেম মেনে চলবেন।
সব মৃদু করোনা রোগীর বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য টেলিমেডিসিন সেবা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে কোয়ালিটি সেবা নিশ্চিত করার জন্য টেলিমেডিসিন সেবা নিয়মিত মনিটরিং জোরদার করা প্রয়োজন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More