চলে গেলেন জন নন্দিত অভিয়ন শিল্পী আব্দুল কাদের

স্টাফ রিপোর্টার: পরপারে পাড়ি জমালেন প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের অতিজনপ্রিয় ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের বিখ্যাত চরিত্র ‘বদি ভাই’ খ্যাত অভিনেতা আব্দুল কাদের। নাট্য অন্তঃপ্রাণ এ মানুষটি শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ……. রাজিউন)। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৯ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে ও নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সংস্কৃতি অঙ্গনে। শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। আরও শোক জানিয়েছে অভিনয়শিল্পী সংঘ, ডিরেক্টর গিল্ড, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, বাচসাস, সিজাব, প্রেজেন্টার্স প্ল্যাটফর্ম অব বাংলাদেশ, স্বাধীনতা সাংস্কৃতিক পরিষদ, জাতীয় পার্টিসহ (জেপি) বিভিন্ন সংগঠন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, লকডাউনের শুরুর দিকে (মার্চ) থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন এ অভিনেতা। ওই সময় থেকেই চিকিৎসার জন্য দেশের কয়েকজন চিকিৎসকের কাছে যান তিনি। কিন্তু চিকিৎসকরা তার রোগ নির্ণয় করতে পারেননি। এর মধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ৮ ডিসেম্বর তাকে ভারতের চেন্নাইতে নেয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান তিনি প্যানক্রিয়াসের (অগ্ন্যাশয়) ক্যান্সারে আক্রান্ত। তখন কেমোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসার চেষ্টাও করেছিলেন ভারতীয় চিকিৎসকরা। কিন্তু ক্যান্সার ততদিনে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ায় সেটা আর সম্ভব হয়নি। চেন্নাইয়ের ভেলোর শহরের সিএমসি হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ক্যান্সারের ফোর স্টেজ অর্থাৎ শেষ পর্যায়ে আছেন তিনি। বাধ্য হয়ে তাকে দেশে এনে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই ইন্তেকাল করেন তিনি। বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছেন এ অভিনেতার পুত্রবধূ জাহিদা ইসলাম জেমি।

মৃত্যুর পর হাসপাতাল থেকে আব্দুল কাদেরের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুর ডিওএইচএসে নিজ বাসভবনে। ডিওএইচএস জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় তার প্রথম জানাজা। এরপর রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে লাশ নেয়া হয় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সংস্কৃতিজন ও সাধারণ মানুষ। এরপর বাদ মাগরিব তাকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ি থানার সোনারং গ্রামে ১৯৫১ সালে আব্দুল কাদের জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আব্দুল জলিল, মা আনোয়ারা খাতুন। বন্দর হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স ও এমএ পাস করেন এ অভিনেতা। সিঙ্গাইর কলেজ ও লৌহজং কলেজে শিক্ষকতাও করেন তিনি। সেখান থেকে বিটপী বিজ্ঞাপনী সংস্থায় এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৭৯ সালে কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন আন্তর্জাতিক কোম্পানি ‘বাটা’তে। দীর্ঘ ৩৫ বছর এ প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে চাকরি করেন এ অভিনেতা। সর্বশেষ তিনি বে ইম্পেরিয়াম লিমিটেডের উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

স্কুলজীবন থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে সখ্য আবদুল কাদেরের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’-এ অমল চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নাটকে অভিনয় শুরু তার। ১৯৭২-৭৪ পরপর তিন বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহসীন হল ছাত্র সংসদের নাট্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে আন্তঃহল নাট্য প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন মহসীন হলের নাটক সেলিম-আল দীন রচিত ও নাসিরউদ্দিন ইউসুফ নির্দেশিত ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’-এ অভিনেতা হিসেবে পুরস্কারও লাভ করেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সাল থেকে থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য এবং চার বছর যুগ্ম-সম্পাদকের ও ছয় বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থিয়েটারের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) হিসেবে কাজ করেছেন এ অভিনেতা। এ দলটির হয়ে ৩০টি প্রযোজনায় এক হাজারেরও বেশি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন আবদুল কাদের। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটকের মধ্যে রয়েছে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘এখনও ক্রীতদাস’, ‘তোমরাই’, ‘স্পর্ধা’, ‘দুই বোন’, ‘মেরাজ ফকিরের মা’ ইত্যাদি। নাটকগুলোর বিদেশি মঞ্চায়নেও অংশ নিয়েছেন তিনি। ১৯৭২ সাল থেকে টেলিভিশন ও ১৯৭৩ সাল থেকে রেডিও নাটকে নিয়মিত অভিনয় করেন আব্দুল কাদের।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More