ছন্দ নেই ১৪ দলীয় জোট শরিকদের : ফের সক্রিয় হচ্ছে ২০ দলীয় জোট

আ.লীগের প্রশাসন নির্ভরতা : বৃহত্তর ঐক্য ইস্যুতে কৌশলী ভূমিকায় বিএনপি-জামায়াত

স্টাফ রিপোর্টার: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অভ্যন্তরে ছন্দ ফেরার কোনো লক্ষণ নেই। শরিক দলগুলোর অনেকেই ক্ষুব্ধ। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও জোটের সঙ্গে নেই বাংলাদেশ জাসদ। তারা বিকল্প জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। সম্প্রতি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি নিজেদের জোট সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছে। এদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের অন্তত ৭টি দলের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েই চলছে। গত দুই বছরে জাতীয় কোনো ইস্যু বা নির্বাচনে ১৪ দলের জোটগত কোনো অবস্থান দেখা যায়নি। তবে সর্বশেষ গত ১৫ মার্চ গণভবনে অনুষ্ঠিত ১৪ দলের বৈঠকে এই জোট আগামী জাতীয় নির্বাচনে একসঙ্গে অংশ নেবে বলে ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে, আগামী দিনের আন্দোলন ও নির্বাচনকে সামনে রেখে ফের সক্রিয় হচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন পর একমঞ্চে দেখা গেছে জোট নেতাদের। ইতোমধ্যে জোটের শরিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠিকভাবে বৈঠক করেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এতে শরিকদের ক্ষোভ অনেকটাই কমে আসছে। ঈদুল ফিতরের পর ডাকা হতে পারে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক। সেখানে সরকারবিরোধী আন্দোলন ও নির্বাচনে জয়ী হলে জাতীয় সরকারের রূপরেখাসহ সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও করণীয় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন এবং জাতীয় সরকার কীভাবে গঠন করা হবে, তা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অভ্যন্তরে ছন্দ ফেরার কোনো লক্ষণ নেই। শরিক দলগুলোর অনেকেই ক্ষুব্ধ। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও জোটের সঙ্গে নেই বাংলাদেশ জাসদ। তারা বিকল্প জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। সম্প্রতি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি নিজেদের জোট সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছে। এদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের অন্তত ৭টি দলের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েই চলছে। গত দুই বছরে জাতীয় কোনো ইস্যু বা নির্বাচনে ১৪ দলের জোটগত কোনো অবস্থান দেখা যায়নি। তবে সর্বশেষ গত ১৫ মার্চ গণভবনে অনুষ্ঠিত ১৪ দলের বৈঠকে এই জোট আগামী জাতীয় নির্বাচনে একসঙ্গে অংশ নেবে বলে ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গণভবনের ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তৃণমূলে ১৪ দলকে সংগঠিত করার জন্য দলীয় নেতাদের নির্দেশ দেন। সে নির্দেশ অনুযায়ী জেলার নেতাদের একটি চিঠি পাঠালেও কার্যত ১৪ দলকে সক্রিয় করার উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান হয়নি। জোটের শরিক কয়েকটি দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেন, জোট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার পেছনে আওয়ামী লীগের অনাগ্রহ মূলত দায়ী। এ অনাগ্রহের পেছনে প্রধান দুটি কারণ রয়েছে। এগুলো হলো-ভোটের রাজনীতির সমীকরণ ও সরকারের প্রশাসননির্ভরতা। ভোট বাড়ানোর চেষ্টায় ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের বাম ও প্রগতিশীল দলগুলোর বিরোধ রয়েছে। ফলে এই শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব রাখতে হচ্ছে। আরেকটি কারণ হলো, টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ দেশ চালাতে গিয়ে প্রশাসননির্ভর হয়ে পড়েছে। এতে রাজনৈতিক দলগুলো অনেকটাই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, শরিকদের মধ্যে জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, সাম্যবাদী দল, ন্যাপ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, জাতীয় পার্টি- জেপির শীর্ষ নেতারা আওয়ামী লীগের কর্মকা-ে অসন্তুষ্ট। ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী ছিলেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। জোটের শরিকদের সঙ্গে দূরত্ব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের বৈশিষ্ট্যই এরকম। তারা তাদের কর্মকা- দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে আমাদের আর দরকার নেই।

আওয়ামী লীগের এমন মনোভাব কেন জানতে চাইলে দিলীপ বড়ুয়া বলেন, এখন তো আন্দোলন-সংগ্রাম নেই। সেজন্য আওয়ামী লীগ হয়তো ভোটের হিসাব করছে। সেজন্য হেফাজতকে কাছে টানছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বুঝতে পারছে না আমরা তাদের জন্য বোঝা নই, হেফাজতই তাদের জন্য বোঝা হবে। সর্বশেষ গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ১৪ দলকে শক্তিশালী করার বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংকটও ঘনীভূত হবে, ১৪ দলের ‘অ্যাকটিভিটি’ও দৃশ্যমান হবে।

ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘এখন আওয়ামী লীগের কাছে আমাদের চেয়ে হেফাজতে ইসলামের কদর বেশি। ফলে ১৪ দলের শরিকদের নিষ্প্রয়োজন মনে করে ক্ষমতাসীনরা। জোট এখন তাদের কাছে বাড়তি ঝামেলা। আমাদের জোটগত কর্মকা- নেই বললেই চলে। শরিকরা যে যার পথে চলছে।’

আওয়ামী লীগের গাছাড়া মনোভাবের কারণে ১৪ দলের ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির জন্য ক্ষতির কারণ হবে বলে মনে করে জাসদ। দলটির সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, ‘ইদানীং ঐক্যের ক্ষেত্রে একটু ঢিলেঢালা অবস্থা দেখা যাচ্ছে। একদিকে সরকার প্রশাসন-আমলানির্ভর হয়ে দেশ পরিচালনা করছে; অন্যদিকে সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতিসহ যেসব বিষয়ে ১৪ দলের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কথা বলা দরকার, সেগুলোয় গাফিলতি দেখা যাচ্ছে। এই গাছাড়া ভাবটাই ঐক্যকে বিনষ্ট করে। আমরা মনে করি, এ ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা এখনো রয়েছে। তবে আদর্শিক বিষয়গুলোকে ধারণ করে ঐক্য পরিচালনা না করলে এটা কাগুজে খেলনার মতো হয়ে যাবে।’

বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, বর্তমানে ১৪ দল নিষ্ক্রিয়। এটা নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো আগ্রহ নেই। জোটকে সক্রিয় করার বিষয়ে কোনো উদ্যোগও নেই।

তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ১৪ দলীয় জোটকে আরও বিস্তৃত করতে চায় আওয়ামী লীগ। জোটের অভ্যন্তরীণ সমস্যা আলোচনার মধ্যে দিয়ে সমাধান করা হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ অবশ্যই জোটের শরিকদের মূল্যায়ন করে। সেজন্যই একাধিক শরিক দলের নেতা মন্ত্রী হতে পেরেছিলেন। বর্তমানে জোট নিষ্ক্রিয়-এ কথা সত্য নয়। গত দুই বছরে করোনার কারণে জোটের শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ কম হয়েছে। ১৪ দলের ঐক্য ছিল, আছে, থাকবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ১৪ দলীয় জোট একটি আদর্শিক ভিত্তির ওপরে গঠিত। অনেক সময় ছোটখাটো অভিমান, অভিযোগ ওঠে। এগুলো সময়মতো ঠিক হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ১৪ দলে বিভক্তির কোনো আশঙ্কা নেই। বরং জোটের বাইরে থাকা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলগুলোকে ১৪ দলে নিয়ে আসতে আমাদের আগ্রহ আছে।

এদিকে নানা ইস্যুতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিরোধ বাড়ায় ১৪ দলের কোনো কর্মসূচিতে থাকছে না বাংলাদেশ জাসদ। তবে তারা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়নি। জোটের বাইরে গিয়ে দলের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন বাংলাদেশ জাসদের নেতারা। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার পর কয়েক দফায় জাসদ ভেঙে পৃথক দল গঠন হয়। এ দলগুলোর মধ্যে জেএসডি, বাসদ, বাংলাদেশ জাসদ রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছে। সাবেক জাসদ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না নাগরিক ঐক্য নামে একটি দল গঠন করে সক্রিয় আছেন। বাংলাদেশ জাসদের পক্ষ থেকে এ দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গঠন বা একটি দলে একীভূত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিএনপি ও জোটের কয়েক নেতা বলেন, জামায়াতকে কেন্দ্র করে জোট ও বৃহত্তর ঐক্য নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছিল, তা অনেকটাই সমাধান হয়েছে। আপাতত জামায়াত জোটেই থাকবে। যদি তারা স্বেচ্ছায় চলে যায় সেক্ষেত্রে তাদের আটকাবেও না। জামায়াতকে জোটে রেখেই বৃহত্তর ঐক্যে কৌশলী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডান-বামসহ সরকারবিরোধী সব দল নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য হলেও শুরুতেই একসঙ্গে কর্মসূচি দেওয়া হবে না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারসহ নানা ইস্যুতে যুগপৎ কর্মসূচি দেওয়া হবে। পরে সবাই একমঞ্চ থেকে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি ঘোষণা করবে। জামায়াত থাকলে বামসহ কয়েকটি দল একমঞ্চে আসবে না। সেক্ষেত্রে সব দল একমঞ্চে উঠলেও সেখানে থাকবে না জামায়াত। একই দাবিতে তারা যুগপৎ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। সূত্র জানায়, জামায়াতের কারণে জোটের শরিক বা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যাতে দূরত্ব সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সতর্ক বিএনপির হাইকমান্ড। ২০ এপ্রিল রাজনীতিকদের সৌজন্যে ইফতার পার্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো বিএনপি। কিন্তু আপাতত সেই ইফতার পার্টি হচ্ছে না। কৌশলগত কারণে অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হয়েছে। ঐক্যপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার পর সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দল নিয়ে বিএনপি এক মঞ্চে উঠতে চায়। কিন্তু ঐক্যপ্রক্রিয়ায় মাঝপথে এমন আয়োজন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। জোটের শরিক হিসাবে এ ইফতারে জামায়াতকে আমন্ত্রণ জানাতেই হবে। আবার জামায়াতকে আমন্ত্রণ জানালে বামপন্থি ও সমমনা কয়েকটি দল অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে পারে, যা ভবিষ্যতে বৃহত্তর ঐক্যের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে। সব দিক বিবেচনা করে ঐক্যের স্বার্থে বাতিল করা হয়েছে রাজনৈতিক দলের ইফতার অনুষ্ঠান।

জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটাতে বৃহত্তর ঐক্যের বিকল্প নেই। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। বৃহত্তর ঐক্য মানে ২০ দল বা অন্য শরিকদের এড়িয়ে চলা নয়। আমরা সবাইকে নিয়েই এগোতে চাই।

তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোটে কোনো বিভেদ বা অনৈক্য নেই। করোনাসহ নানা কারণে শরিকদের মধ্যে যোগাযোগ কম ছিল। ইফতারকে কেন্দ্র করে আমরা সবাই একসঙ্গে বসছি। জোটের ঐক্য কীভাবে আরও সুদৃঢ় করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছি। আশা করি ঈদের পর জোটের বৈঠক ডাকা হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, জোট থেকে জামায়াতকে বের করে দেয়া হচ্ছে, এটা আপনাদের পত্রিকার ভাষা। বাস্তবে ২০ দল অনেক ঐক্যবদ্ধ। আমরা জোটে আছি এবং থাকব।

তিনি বলেন, আন্দোলনের লক্ষ্যে জোটকে সম্প্রসারিত বা বৃহত্তর ঐক্য গঠনের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা মনে করি, এটা হওয়া উচিত।

বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জোট অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। জোটের রাজনীতি বাদ দিয়ে ‘একলা চলো নীতিতে’ হাঁটতে থাকে বিএনপি। শরিকরাও যার যার মতো করে চলতে থাকে। ফলে দিনদিন বাড়ে দূরত্ব। ২০২০ সালের ৫ জুলাই সবশেষ জোটের বৈঠক হয়। করোনার কারণে ওই বৈঠকটি হয়েছিল ভার্চুয়ালি। তাছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনকে কেন্দ্র করে এলডিপিসহ জোটের কয়েকটি শরিক দলের সঙ্গে বিএনপির প্রকাশ্য বিরোধ সৃষ্টি হয়। জাতীয় মুক্তিমঞ্চ নামে আলাদা একটি প্ল্যাটফরম দাঁড় করান লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ। সেই মঞ্চে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ জোটের কয়েকটি শরিক অংশ নেয়। এ নিয়ে বিএনপি ও অলির মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ সৃষ্টি হয়।

জানা যায়, জোটে যথাযথ মূল্যায়ন না করার কারণেই ক্ষুব্ধ হন অলি। বিষয়টি বিএনপির হাইকমান্ডও বুঝতে পারে। অবশেষে অলির সঙ্গে দূরত্ব ঘোচানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অলি আহমদের সঙ্গে তার বাসায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। তিন ঘণ্টার ওই বৈঠকে অতীতের ক্ষোভ, বঞ্চনাসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর সব ভুলে সামনে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন অলি আহমদ।

এলডিপি ছাড়াও জোটের সব শরিক দলের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ক্ষোভ, বঞ্চনা, জামায়াতকে রাখা-না-রাখার পাশাপাশি বৃহত্তর ঐক্যসহ ভবিষ্যতের করণীয় নিয়ে তাদের মতামত নেওয়া হয়েছে। বৃহত্তর ঐক্যের বিষয়ে প্রায় প্রতিটি শরিক দলই ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। তবে জোটকে যাতে অবমূল্যায়ন করা না হয়, সেদিকে গুরুত্ব দিতে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। ২০ দলীয় জোটকে রেখেই বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া হয়।

জানতে চাইলে জোটের অন্যতম শরিক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, এ সরকারকে হটাতে আন্দোলন করতেই হবে। বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে আমি থাকব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তবে জোটের অন্য দলের সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে, তা জানি না। তিনি আরও বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন জোটগতভাবে না হয়ে যুগপৎ হতে পারে। যার যার অবস্থান থেকে তারা রাজপথে থাকবে।

জানা যায়, অনানুষ্ঠানিক আলোচনার পাশাপাশি বিএনপির হাইকমান্ডের কয়েকটি সিদ্ধান্তকেও ইতিবাচকভাবে দেখছেন শরিকরা। বিশেষ করে নির্বাচনে জয়ী হলে যারা একসঙ্গে রাজপথে থাকবে, তাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের ঘোষণায় শরিকদের মধ্যে স্বস্তি দেখা গেছে। দীর্ঘদিন রাজপথে একসঙ্গে আন্দোলন করছেন। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর সবারই কিছু চাওয়া-পাওয়ার বিষয় থাকে। এ নিয়ে ছোট প্রায় সবার মধ্যে একটা অনিশ্চয়তা কাজ করে। সরকার গঠনের পর সবাইকে মূল্যায়নের ঘোষণায় শরিকদের মধ্যে সেই অনিশ্চয়তা থাকবে না। বরং কিছুটা পাওয়ার আশায় সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে। তাছাড়া আগাম এমন ঘোষণা দেয়ায় জোটের যেসব শরিক জাতীয় সরকারের দাবিতে সোচ্চার ছিল, তারাও সেখান থেকে পিছু হটতে শুরু করেছে।

জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের শরিক এনপিপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, নানা কারণে জোটের শরিকদের মধ্যে দূরত্ব ছিল। জোটকে ঐক্যবদ্ধ করতে বিএনপি কাজ শুরু করেছে। শরিকদের এখন ভুল বোঝাবুঝি বা অনৈক্য নেই বললেই চলে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারকে বিদায় করতে ঐক্যের বিকল্প নেই। বিএনপি বৃহত্তর ঐক্যের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা ইতিবাচক। তবে অন্য দলকে টানতে গিয়ে জোটের মধ্যে যাতে বিভেদ সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

জোটের শরিক এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, শরিকদের কেউ কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়াকে বাদ দিয়ে জনগণের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা সে লক্ষ্যে কাজ করছেন। আশা করি, সামনের দিনে জোট আরও বেশি সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধ হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More