জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ সমমনারা ফিরছে নতুন প্লাটফর্মে

জিহাদের উদ্দেশ্যে ঘর ছাড়েন, চরাঞ্চলে নেন সশস্ত্র হামলার প্রশিক্ষণ : র‌্যাব

স্টাফ রিপোর্টার: কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ দুজনসহ সাত তরুণ গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতারের আগে এরা সেফ হাউসে পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চর এলাকায় সশস্ত্র হামলা, বোমা তৈরি, শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদবিষয়ক প্রশিক্ষণ নেন। এ সাতজনকে কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকা থেকে বুধবার গ্রেফতার করে র‌্যাব। এরা হলেন-হোসাইন আহম্মদ, মো. নেছার উদ্দিন ওরফে উমায়ের, বনি আমিন, ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত, মো. হাসিবুল ইসলাম, রোমান শিকদার ও মো. সাবিত। এ সময় নতুন জঙ্গি সংগঠনটির তিন ধরনের প্রচারপত্র, বিস্ফোরক তৈরির নির্দেশিকাসংবলিত পুস্তিকা, নব্য জঙ্গি সংগঠনের কর্মপদ্ধতির উগ্রবাদী বই ও ভিডিও উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার সাতজনের মধ্যে চারজন নতুন রিক্রুট এবং তিনজন তাদের তত্ত্বাবধায়ক ও প্রশিক্ষণদাতা। র‌্যাব জানিয়েছে, নতুন গড়ে ওঠা এক জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়ে ‘সশস্ত্র জিহাদের’ উদ্দেশ্যে তারা ঘর ছাড়েন। নিষিদ্ধ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন থেকে কিছু সদস্যকে নতুনভাবে একীভূত করে ২০১৭ সালে এ নব্য জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৯ সালে সংগঠনটি ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়া’ (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) হিসেবে নামকরণ করা হয়। সমাজ থেকে বাইরে নিয়ে এসে তরুণদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী করে তোলেন জঙ্গি সংগঠনের নেতারা। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে আট তরুণ নিখোঁজ হন। এ বিষয়ে ২৫ আগস্ট কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় জিডি করে পরিবার। র‌্যাব ভুক্তভোগীদের উদ্ধারে ও জড়িতদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। র‌্যাব জানতে পারে, নিরুদ্দেশ ওই তরুণদের কয়েকজনকে শেষবার দেখা গিয়েছিলো চাঁদপুরে। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এবং সবকিছু বিবেচনা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সে সময় ধারণা হয়, জঙ্গিবাদে জড়িয়েই লাপাত্তা হয়েছেন ওই তরুণরা। র‌্যাব, পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরাও তাদের খোঁজে মাঠে নামেন। র‌্যাব মুখপাত্র আল মঈন বলেন, কুমিল্লার সাত তরুণের সঙ্গী ঢাকার কল্যাণপুরের শারতাজ ইসলাম নিলয় নামে আরেক তরুণ বাড়ি ছাড়ার এক সপ্তাহ পর ১ সেপ্টেম্বর ঘরে ফিরে আসেন। র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এক মাস অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১। এরা সবাই নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়ায় যুক্ত হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য ঘর ছেড়েছিলেন। নিষিদ্ধ দুই জঙ্গি সংগঠন জেএমবি ও আনসার আল ইসলাম থেকে বেরিয়ে কিছু লোক এ সংগঠন গড়ে তুলছেন। নতুন সদস্যদের বোঝানো হয়েছে, আগের সংগঠনগুলোর থেকে এ সংগঠনটি অনেক শক্তিশালী হবে। কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ রিফাত ও হাসিবুল এক বছর ধরে কুমিল্লার মসজিদুল কোবার ইমাম হাবিবুল্লাহর সংস্পর্শে ছিলেন। হাবিবুল্লাহই তাদের উগ্রবাদে দীক্ষিত করেন। ২৩ আগস্ট তারা বাড়ি ছেড়েছিলেন। পরে তাদের সঙ্গে গোপালগঞ্জ ও ঢাকার উত্তরা থেকে নিখোঁজ হাসিবুল ও সাবিতের দেখা হয়। তবে হাবিবুল্লাহর সন্ধান এখনো পায়নি র‌্যাব। ইতোমধ্যে ৬ সেপ্টেম্বর ঘর ছাড়ার প্রস্তুতির সময় চার তরুণকে হেফাজতে নিয়ে পরিবারে ফিরিয়ে দেয় র‌্যাব। জানা গেছে, ২৩ আগস্ট সকাল ১০টায় নিলয়সহ নিখোঁজ পাঁচ তরুণ নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে কুমিল্লা টাউন হল এলাকায় আসেন। পরে সোহেলের নির্দেশনায় তারা দুই ভাগ হয়ে লাকসাম রেলক্রসিংয়ের কাছে হাউজিং স্টেট এলাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। নিলয়, সামি ও নিহাল একসঙ্গে রওনা হন। কিন্তু ভুলে তারা চাঁদপুর শহরে চলে যান। তারা ভুল বুঝতে পেরে চাঁদপুরের একটি মসজিদে অবস্থান নেন। এ সময় কর্তব্যরত পুলিশ তাদের সন্দেহজনক আচরণের কারণে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশ তাদের পাশের একটি হোটেলে রেখে যায় এবং পরদিন বাসায় চলে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু তারা রাতেই হোটেল থেকে কৌশলে পালিয়ে যান। তারা তাদের পূর্বনির্ধারিত জায়গায় গেলে সোহেল ও অন্য এক ব্যক্তি তাদের লাকসামের একটি বাড়িতে নিয়ে যান। ওই বাড়িতে আগেই অন্য তিনজন অবস্থান করছিলেন। পরে নিলয়, নিহাল, সামি ও শিথিলকে কুমিল্লা শহরের একটি মাদরাসার মালিক নিয়ামত উল্লাহর হাতে তুলে দেন সোহেল। নিয়ামত উল্লাহর তত্ত্বাবধায়নে এক দিন থাকার পর সোহেল চারজনকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। নিহাল, সামি ও শিথিলকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির কাছে বুঝিয়ে দিয়ে নিলয়কে একটি লঞ্চের টিকিট কেটে পটুয়াখালীতে পাঠান। পটুয়াখালীতে নিলয়কে গ্রহণ করেন বনি আমিন। বনি আমিন তাকে স্থানীয় এক মাদরাসায় নিয়ে যান এবং হুসাইন ও নেছার ওরফে উমায়েরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। বনি আমিন নিলয়কে তিন দিন তার বাসায় রাখেন। তার বাসায় অতিথি আসায় পরে নিলয়কে হুসাইনের মাদরাসায় রেখে আসেন। নিলয় মাদরাসা থেকে পালিয়ে যান। ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার কল্যাণপুরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। পরে র‌্যাব নিলয়ের দেয়া তথ্যে বনি আমিনকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। বনি আমিনের তথ্যমতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এলাকা থেকে নেছার উদ্দিন ওরফে উমায়েরকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হুসাইন আহমদ, রিফাত, হাসিব, রোমান শিকদার ও সাবিতকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাব জানতে পারে হাসিব ও রিফাত এক বছর আগে কুমিল্লার কোবা মসজিদের ইমাম হাবিবুল্লাহর কাছে সংগঠনের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা পান। হাবিবুল্লাহ তাদের উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করে ফাহিম ওরফে হানজালার কাছে নিয়ে যান।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More