জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি: প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারছি। বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে সম্মান অর্জন করেছি। এই অর্জনের পেছনে অনেক ত্যাগ, অনেক তিতিক্ষা রয়েছে। আমাদের বহু নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে। আমি তাদেরকেও আজকের দিনে স্মরণ করি।
গতকাল সোমবার দুপুরে ম্যানেজমেন্ট ইনফর্মেশন সিস্টেম (এমআইএস)-এর মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ‘জিটুপি’ পদ্ধতিতে সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যক্তিগত মোবাইলফোনের একাউন্টে সম্মানি ভাতা প্রেরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। এর ফলে এখন থেকে প্রতিমাসে ১ লাখ ৬৮ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা ঘরে বসেই মোবাইলফোনের মাধ্যমে ১২ হাজার করে টাকা সম্মানি ভাতা পাবেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানস্থল ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন। দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা মুক্তিযোদ্ধারা তার সরকারের সময় অবহেলায় থাকতে পারে না। এখন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ১২ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। তবে আমি মনে করি, এই সময় ১২ হাজার টাকা কিছুই নয়। একে আমরা ২০ হাজার টাকা করে দেব। এটা করতে একটু সময় নেবে, কারণ, বাজেটে টাকা বরাদ্দসহ সবকিছুর ব্যবস্থা করতে একটু সময় লাগবে। তবে, এটা আমরা করে দেব। ২০ হাজার টাকা করেই মুক্তিযোদ্ধারা সবাই পাবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের এখন আর কারো জন্য অপেক্ষা করতে হবে না, কারো কাছে ধরণা দিতে হবে না, এমআইএস (ম্যানেজমেন্ট ইনফর্শেন সিস্টেম)-এর ভিত্তিতে টাকাটা সরাসরি যার প্রাপ্য তার হাতে পৌঁছে যাবে। সরকার থেকে জনগণ অর্থাৎ জিটুপির মাধ্যমে সরাসরি টাকা পৌঁছে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ওই নির্বাচনে ২ শতাংশ ভোটও পায়নি। সারা বাংলাদেশে সেনাবাহিনী ডেপ্লয় করে দিয়ে জনগণের ভোট চুরি করে। চুরি করে সে (খালেদা জিয়া) দাবি করে-সে আবারও প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু তা মেনে নেয়নি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য এবং কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া একই সময় ঢাকা, গাজীপুর, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম, পাইকগাছা, খুলনা, হাইমচর, চাঁদপুর, বড়লেখা, মৌলভীবাজার থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী পরে এসব স্থানের উপকারভোগী মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের ওপর একটি অডিও ভিজ্যুয়াল পরিবেশনা প্রদর্শিত হয়।
এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কল্যাণ ট্রাস্ট বোর্ডের মিটিং ছিল, সেখানে এতগুলো ভাগ না করে আমরা বলেছি নিচের যে কয়টা শ্লট আছে সেগুলো এক জায়গায় করে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ২০ হাজার টাকায় বৃদ্ধি করব। অর্থাৎ বীরশ্রেষ্ঠ এবং বীর উত্তম ছাড়া বাকি যারা আছেন আমি মনে করি, সবাইকে একসঙ্গে করে দেয়াটাই ভালো। কারণ, সবাই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে মুজিববর্ষে গৃহহীনদের ঘর-বাড়ি করে দেয়ার জন্য মুজিববর্ষ এবং আসন্ন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে সরকারের গৃহীত কর্মসূচির আওতায় দেশের সব গৃহহীনকে ঘরে দেয়ার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ হাজার গৃহনির্মাণেরও ঘোষণা দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৪ হাজার ১২২ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো গৃহ থাকবে না, তারা ঠিকানাবিহীনভাবে কষ্ট করে থাকবেন। এটা আমি যতদিন সরকারে আছি তা অন্তত হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শহিদ পরিবার মাসিক ৩০ হাজার টাকা, মৃত যুদ্ধাহত পরিবারকে মাসিক ২৫ হাজার টাকা, সাত বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ পরিবারকে মাসিক ৩৫ হাজার টাকা, বীর উত্তম খেতাবধারীগণ মাসিক ২৫ হাজার টাকা, বীর বিক্রম খেতাবধারীগণ মাসিক ২০ হাজার টাকা এবং বীর প্রতীক খেতাবধারীগণ মাসিক ১৫ হাজার টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন। তিনি বলেন, এত ভাগ ভাগ না করে সবাইকে এক জায়গায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More