জীবন-জীবিকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট পাশ

স্টাফ রিপোর্টার: নির্দিষ্টকরণ বিল পাশের মধ্য দিয়ে বুধবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পাশ হয়েছে। অনুমোদিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে এ বাজেট পাশ হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২১’ পাশের প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে তা পাশ হয়। এরপর সংসদে উপস্থিত সবাই টেবিল চাপড়ে অর্থমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এর আগে ৩ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সংসদ অধিবেশনে ২ দিন আলোচনা হয়। এরপর বুধবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে এ বাজেট পাশ হয়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর আজ বৃহস্পতিবার নতুন অর্থবছর থেকে তা বাস্তবায়ন শুরু হবে। বুধবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বেলা ১১টার দিকে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনের শুরুতেই মঞ্জুরি দাবিতে আলোচনা করার কথা জানান। বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা এসব দাবিতে আলোচনা করেন। কণ্ঠভোটে বাজেট পাশ হয় বেলা সাড়ে তিনটার দিকে। তবে মহামারির কারণে গতবারের মতো এবারও বাজেটের ওপর আলোচনা হয়েছে সীমিত আকারে। এর আগে আগামী অর্থবছরের বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খাতের ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপির সংসদ সদস্যরা ৬২৫টি বিভিন্ন ধরনের ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন। এর মধ্যে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। কয়েকজন সংসদ সদস্যের ছাঁটাই প্রস্তাব নিষ্পত্তির পর ‘নির্দিষ্টকরণ বিল ২০২১’ পাস হয়। গত ৩ জুন অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। পরে দুই দিন আলোচনা করে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পাশ হয়। পরে সপ্তাহখানেক বিরতি দিয়ে টানা চার দিন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা চলে। পরে আরও ১০ দিন বিরতি দিয়ে ফের দুই দিন বাজেটের ওপর আলোচনা হয়। সব মিলিয়ে শতাধিক সংসদ সদস্য এবার বাজেটের ওপর আলোচনা করেন। সম্পূরক বাজেটসহ বাজেটের ওপর ছয় দিনে ১৫ ঘণ্টার মতো আলোচনা হয়। নতুন বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয় ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮ কোটি টাকা, এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, এর মধ্যে ৬৯ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেই যাবে। রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে ১ লাখ ৪ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা, আমদানি শুল্ক থেকে ৩৭ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৫৪ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৫৬ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। বৈদেশিক অনুদান থেকে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। এবারই প্রথম জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ ধরে ঘাটতি বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে। টাকার অঙ্কে ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক খাত থেকে নেয়া হবে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। তবে অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে নেয়া হবে ৫ হাজার ১ কোটি টাকা। পাশাপাশি ঋণ করার কারণে বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হয়। এজন্য আগামী বছরে সুদ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬৭ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশই থাকছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More