জয়পুরহাটে বাসে ট্রেনের ধাক্কা নিহত ১২

স্টাফ রিপোর্টার: জয়পুরহাট সদরের পুরানাপৈল লেভেলক্রসিংয়ে শনিবার সকালে ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় বাস। এতে বাসটিতে থাকা ১২ জন মারা গেছেন। আহত হন আরও ৫ জন। এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। তারা বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ দুর্ঘটনায় ট্রেনের দুটি বগি লাইনচ্যুত হলে উত্তরবঙ্গ, উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ ও ঢাকার মধ্যে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েন বহু যাত্রী। ৮ ঘণ্টা পর বিকেল ৩টায় রেলপথ সচল হয়। ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জয়পুরহাট থেকে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলিতে যাচ্ছিলো ‘বাঁধন পরিবহন’ নামের যাত্রীবাহী বাস (বগুড়া জ-১১-০০০৮)। সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে পুরানাপৈল লেভেলক্রসিং পার হওয়ার সময় দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী ‘উত্তরা এক্সপ্রেস’ বাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে বাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। বাসটির একটি অংশ ট্রেনের ইঞ্জিনে আটকে যায়, বাকি অংশ লেভেলক্রসিংয়ের পাশের মসজিদের কাছে ছিটকে পড়ে। এ অবস্থায়ই এগোতে থাকে ট্রেনটি। এর মধ্যে দুটি বগির ৬টি চাকা লাইনচ্যুত হলে প্রায় ৫০০ গজ দক্ষিণে গিয়ে ট্রেনটি থেমে যায়।
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলেই বাসটির সুপারভাইজার ও ৯ যাত্রী মারা যান। আহতদের নেয়া হয় জয়পুরহাট হাসপাতালে। সেখান থেকে সংকটাপন্ন পাঁচজনকে পাঠিয়ে দেয়া হয় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বগুড়ার ছিলিমপুর মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই রকিবুল হাসান জানান, পথে জুলহাস উদ্দিন নামে একজন, ভর্তির পর জিয়াউর রহমান নামে আরেকজন মারা যান। তিনজন হাসপাতালে ভর্তি। বাসচালক মামুনুর রশিদ (২৫) ও যাত্রী ওমর ফারুক (৪৩), অন্যজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার কুঠিবাড়ী ব্রিজ এলাকার শরিফুল ইসলামের ছেলে আবদুল লতিফ (২৭), হিচমি গ্রামের মানিকের ছেলে রমজান (২৩), জয়পুরহাট শহরের চিত্রাপাড়া মহল্লার নিশি ম-লের ছেলে রেজাউর করিম রেজা ওরফে তরুন (২৭), পাঁচবিবি উপজেলার পাটাবুকা জিয়ারমোড় এলাকার সিরাজ উদ্দিনের ছেলে জিয়াউর রহমান (৫৫), আটাপাড়া গ্রামের মোশারফ হোসেন মঞ্জুর ছেলে মন্জুরুল নাসিম (২৮), আটুল গ্রামের ডা. আলতাফ হোসেনের ছেলে সরোয়ার হোসেন বাবু (২৮) ও আরিফুর রহমান রাব্বি (২৪), ক্ষেতলাল উপজেলার ইটাখোলার মংলার ছেলে সুমন (৩৪), আক্কেলপুর উপজেলার চকবিলা গ্রামের দুদু কাজীর ছেলে সাজু (৩৪), টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর উপজেলার চিতুলিয়াপাড়ার শুকুর ম-লের ছেলে জুলহাস উদ্দিন (৬১), নওগাঁর রানীনগর উপজেলার বিজয়াকান্দী গ্রামের গোড়া মিয়ার ছেলে বাবলু (২৫), সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার শাহীপাড়া গ্রামের সমতুল্লাহর ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৭)। জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, বিকেলে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পুরানাপৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম সৈকত জানান, পুরানাপৈল রেলগেটটি খোলা ছিলো। কুয়াশার কারণে বেশি দূরে কিছু দেখা যাচ্ছিলো না। বাসচালকও হয়তো সতর্ক ছিলেন না। এ কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটতে পারে। তিনি বলেন, ওই রেলগেটে তিনজন গেটম্যান রয়েছে। ওই সময়ে যার দায়িত্ব ছিলো তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার সময় জয়পুরহাট রেলস্টেশনে মাস্টারের দায়িত্বে থাকা আবদুল হামিদ জানান, নয়ন ও রহমান নামে দুই গেটম্যান দায়িত্বে ছিলেন। ঘটনার পর থেকে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের গঠিত ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান পশ্চিমাঞ্চলের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন। এ কমিটিতে চার কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসনের তিন সদস্যের কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) রেজা হাসান। কমিটিকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More