ঝিনাইদহে পিচ উঠে যাওয়া সেই সড়ক পরিদর্শনে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত টিম

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: নির্মাণের ২০ দিনের মাথায় পিচ উঠে যাওয়া ১৯ কোটি টাকার রাস্তা পরিদর্শন করেছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের তিন সদস্যের প্রতিনিধি টিম। শুক্রবার বিকেলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপসচিব (বাজেট শাখা) মো. আব্দুল মোক্তাদেরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম সড়কটির বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা সড়ক নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণের নমুনা সংগ্রহ করেন।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপসচিব (বাজেট শাখা) মো. আব্দুল মোক্তাদের মোবাইল ফোনে জানান, আমরা সড়কটির বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেছি। বিভিন্ন কাগজপত্র সংগ্রহ করেছি। এই ঠিকাদার যেসকল সড়ক নির্মাণ করেছে সেগুলোর কাগজপত্র সংগ্রহ করেছি। এই সড়ক নির্মাণের কাজে দুর্নীতি হয়েছে কিনা সেটা গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। আমরা আগামী তিনদিনের মধ্যে সচিব মহোদয়ের নিকট আমাদের প্রতিবেদন দাখিল করবো।

গত বুধবার সকালে কালীগঞ্জ-ডাকবাংলো সড়কের সিংদহ আলাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের অংশে পিচ উঠে যায়। এ সময় স্থানীয়রা হাত দিয়ে কার্পেটিং তুলে ফেলতে দেখা যায়। এর আগে নির্মাণের তিনদিনের মাথায় কার্পেটিং উঠে যাওয়ায় প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার পিচ ঢালাই উঠিয়ে ফেলে ঠিকাদার। ২২ কিলোমিটার রাস্তার মাত্র তিন কিলোমিটার শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে তা উঠে যেতে শুরু করে। গত ২০ দিনে অনেক স্থানে ফেটে গেছে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে রাস্তার কাজ করায় এমনটি হয়েছে বলছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও স্থানীয় জনগণ। যদিও ঠিকাদারের দাবি, বৃষ্টির মধ্যে অল্প কিছু অংশে রাস্তার কাজ করার কারণে এমন হয়েছে। তবে, রাস্তা তৈরির তিন বছরের মধ্যে কোনো ক্ষতি হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা ঠিক করে দেবেন বলে উল্লেখ করেছেন ঠিকাদার। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে গান্না হয়ে ডাকবাংলো পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার রাস্তা মজবুতিসহ ওয়ারিংয়ের কাজ চলছে তিন বছর ধরে। ২০ দিন আগে কালীগঞ্জ নিমতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে পাকাকরণের জন্য কার্পেটিং বা পিচকরণের কাজ শুরু করে। চার থেকে পাঁচ দিনে তিন কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন করে। এরপর বৃষ্টির জন্য কাজ বন্ধ রাখেন।

কিন্তু এরই মধ্যে সড়কের শ্রীরামপুর এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার অংশে রাস্তার পিচ ঢালাই উঠে গেছে। কোথাও বড় বড় ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে থাকলে কয়েক মাসের মধ্যে তা সম্পূর্ণ উঠে যাবে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীরা। একই ভাগে গত বুধবার থেকে একই রাস্তার আলাইপুর, সিংদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় রাস্তার কার্পেটিং উঠে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেন্ডারে রাস্তার কাজ পান খুলনার ‘মোজাহার এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। রাস্তার ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ কোটি টাকা। কিন্তু হাতবদল হয়ে রাস্তার কাজটি করছেন ঝিনাইদহের ঠিকাদার মিজানুর রহমান মাসুম মিয়া। টেন্ডার শেষে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের কাজ শুরু হয় তিন বছর আগে। রাস্তা খোঁড়া এবং ইট বালুর কাজ শেষ হয়েছে ছয় মাস আগেই। এরপর সম্প্রতি শুরু করেছে কার্পেটিংয়ের কাজ। কাজের পরিবর্তিত ঠিকাদার মিজানুর রহমান ওরফে মাসুম মিয়া রাস্তার কাজ নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

সড়কটির কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের কারণে এমনটি হয়েছে। তবে সিডিউল অনুযায়ী সড়কের কাজ সম্পন্নের তিন বছরের মধ্যে কোনো সমস্যা হলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেরামত করবেন। এরই মধ্যে রাস্তার সমস্যা হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More