টিকটকের আড়ালে পাঁচশতাধিক নারী ভারতে পাচার

পাচারকারীচক্রের হোতা কে এই রাফি

স্টাফ রিপোর্টার: টিকটকের মডেল বানানো ও ভারতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভনে নারী পাচারকারীচক্রের অন্যতম মূলহোতা ছিলেন আশরাফুল ইসলাম ওরফে বস রাফি। দীর্ঘ ৮ বছর ভারতের বেঙ্গালুরুতে বসবাসের সুবাদে তামিল ভাষা রপ্ত করেন তিনি। ফলে বেঙ্গালুরুসহ ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে যারা অনৈতিক কার্যক্রমে জড়িত তাদের সঙ্গে রাফির সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সবশেষ পাঁচ বছরে টিকটকের আড়ালে প্রায় ৫শ জনকে ভারতে পাচার করেছে এই রাফি। সোমবার দিবাগত রাতে ঝিনাইদহ ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে রাফিসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তারা হলো বস রাফির অন্যতম নারী সহযোগী সাহিদা বেগম ম্যাডাম সাহিদা (৪৬), মো. ইসমাইল সরদার (৩৮) ও মো. আব্দুর রহমান শেখ ওরফে আরমান শেখ (২৬)।
জানা গেছে, রাফির বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপায়। প্রায় দশ বছর ধরে তিনি নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত। অষ্টম শ্রেণি পাস রাফি আট বছর ধরে ভারতের বেঙ্গালুরুতে বসবাস করে। প্রথমে সেখানে গাড়ি চালক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে রেস্তোরাঁয় চাকরি করতেন। আর সেখানে অবস্থান করার সময় বস রাফি তামিল ভাষা শেখেন। এতে বেঙ্গালুরুসহ ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে যারা অনৈতিক কার্যক্রম করে তাদের অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি টিকটক করার প্রলোভনে প্রায় ৫শ নারীকে পাচার করা হয়। এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন এই রাফি। প্রতি নারীর পাচারের বিনিময়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতেন বস রাফি। এর আগে বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি তরুণীকে বিবস্ত্র করে পৈশাচিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এই ঘটনায় ৬জনকে গ্রেফতার করে দেশটির পুলিশ। পরে রাজধানীর হাতিলঝিল থানায় নির্যাতনের শিকার তরুণীর বাবা একটি মামলা করেন।
র‌্যাব জানায়, এই চক্রে ৫০ জনের বেশি সদস্য রয়েছে। যারা বিভিন্নভাবে কাজ করে নারীদের ফাইভ স্টার হোটেলে চাকরির প্রলোভন দেখাতেন। রাফির চক্রে যারা দালাল ছিল তারা এসব মেয়েকে বলতো সেখানে (ভারতে) তারা স্মার্টলাইফ লিড করছে। ভিডিওকলে বিভিন্ন বিলাসী জীবনযাপনের কথাও বলতো। টিকটক হৃদয় ছাড়াও তার অন্যান্য এজেন্ট দেশে কাজ করতো। এছাড়া রাফির সঙ্গে নারী সহযোগী হিসেবে ম্যাডাম সাহিদা ও তার দুই মেয়ে কাজ করতেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, টিকটক হৃদয় অনলাইনে টিকটক ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপের তরুণীদের টিকটক মডেল বানানো এবং অন্যান্য প্রলোভন দেখিয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবনে আকৃষ্ট ও অভ্যস্ত করাতো। তাদের পাশের দেশে বা উন্নত দেশে বিভিন্ন মার্কেটে, সুপারশপ, বিউটি পার্লারসহ বিভিন্ন চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বস রাফির মাধ্যমে পাচার করা হতো। অবৈধ উপায়ে তাদের সীমান্ত পার করে নেয়া হতো। পাচারের পর তাদের বিভিন্ন নেশা করিয়ে জোরপূর্বক অশালীন ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করতো।
রাফিচক্রের মাধ্যমে পাঁচশতাধিক নারীকে পাচার করা হয়েছে বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা। নারী পাচারকারীচক্রের মূল বিষয় তুলে ধরা র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ওই ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা ২৭ মে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার আইন ও পর্নোগ্রাফি আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় টিকটক হৃদয়সহ অজ্ঞাতনামা আরও চারজনকে আসামি করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে র‌্যাব ঘটনার ছায়াতদন্ত শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় ৩১ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা ও র‌্যাব-৩-এর অভিযানে ঝিনাইদহ সদর, যশোরের অভয়নগর ও বেনাপোল থেকে আশরাফুল ইসলাম ওরফে বসসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করতেন তারা। আর এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ খুলে বিভিন্ন বয়সের নারী ও তরুণীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন টিকটক হৃদয়। এই গ্রুপে যেসব তরুণী ছিলেন, তাদের মডেল বানানোসহ ও বিভিন্ন চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করতেন। পরবর্তীতে ভারতে বিভিন্ন সুপারশপ ও বিউটি পার্লারে চাকরি দেয়ার কথা বলে বস রাফির সহযোগিতায় এসব তরুণীকে বিদেশে পাচার করতেন। ভারতে তাদের পাচারের পর প্রথমে একটি সেফ হাউজে নেয়া হতো।
র‌্যাব জানায়, সেফ হাউজে তাদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এবং জোর করে মাদক সেবন করতে বাধ্য করানো হতো। মাদক সেবনের পর তাদের জোরপূর্বক যৌন নির্যাতন করে ভিডিও ধারণ করা হতো। যাতে তাদের পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইল করা যায়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More