ড্রামে যুবতীর লাশ : প্রেমিক পুলিশ কনস্টেবলসহ গ্রেফতার ৪

রাজশাহীতে ডোবায় পড়ে থাকা ড্রামের ভেতর থেকে উদ্ধার তরুণীর লাশের পরিচয় মিলেছে। উন্মোচিত হয়েছে হত্যার নেপথ্য। গ্রেফতারের পর হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ওই যুবতীর প্রেমিক লাশের পরিচয় জানান।
নিহত ওই তরুণীর নাম ননিকা রানী রায় (২৪)। তিনি ঠাকুরগাঁও সদরের মিলনপুর গ্রামের বাসিন্দা। ননিকা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে সদ্য লেখাপড়া শেষ করেছেন। সর্বশেষ তিনি মহানগরীর একটি ক্লিনিকে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মহানগরীর পাঠানপাড়া এলাকার একটি মেসে থাকতেন ননিকা। রোববার রাতে তার লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে রোববার ভোরে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা ওই তরুণীর খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত পুলিশ কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকারকে (৪৩) গ্রেফতার করেছে। পরে নিমাইয়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দিনভর অভিযান চালিয়ে মাইক্রোবাসচালকসহ তার আরও তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করে পিবিআই। এ ছাড়া এ সময় জব্দ করা হয় লাশ বহনকারী মাইক্রোবাসটিও (ঢাকা মেট্রো গ-১৩-১৮২৮)। পিবিআই রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গ্রেফতার পুলিশ কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকারের বাড়ি পাবনার আতইকুল্লা উপজেলার চরাডাঙ্গা গ্রামে। তিনি রেল পুলিশের (জিআরপি) রাজশাহী থানায় কর্মরত। রাজশাহী পিবিআইয়ের একটি টিম রোববার সকালে নাটোরের লালপুরে বোনের বাড়ি থেকে নিমাইকে গ্রেফতার করে। এর পর তিনি নিহত তরুণীর পরিচয় নিশ্চিত করেন। এ ছাড়া গ্রেফতারকৃত নিমাইয়ের সহযোগীরা হলেন— রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ আদারিপড়ার কবির আহম্মেদ (৩০), শ্রীরামপুর এলাকার সুমন আলী (৩৪) এবং মাইক্রোবাসচালক বিলশিমলা এলাকার আব্দুর রহমান (২৫)। পুলিশ কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তাদের গ্রেফতার করা হয়।
পিবিআই জানায়, মহানগরীর তেরখাদিয়া এলাকার একটি বাড়িতে ওই তরুণীকে হত্যা করা হয়। ওই বাড়িটি জিআরপির কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র গত ৬ এপ্রিল ভাড়া নেন। তার স্ত্রীও পুলিশ কনস্টেবল। তিনি বগুড়ায় কর্মরত। রোববার বিকালে পিবিআই সদস্যরা ওই বাড়িতে তদন্তে যায়। পিবিআই আরও জানায়, কনস্টেবল নিমাই হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, ছয় থেকে সাত বছর ধরে ননিকা রানীর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও হয়। সম্প্রতি ননিকা বিয়ের জন্য চাপ দেয়। এ কারণে তাকে হত্যার পর ড্রামে লাশ ভরে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয়। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে পিবিআই। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ জানান, গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। নিহত তরুণীর প্রেমিক কনস্টেবল নিমাই তার পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। সোমবার (১৮ এপ্রিল) আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে। আরও অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন জানানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিমাই চন্দ্র সরকার গত সাত বছর ধরে রাজশাহী জিআরপি থানায় কর্মরত। এর আগে তিনি রাজশাহী মহানগর পুলিশে (আরএমপি) কর্মরত ছিলেন। আরএমপির গোয়েন্দা শাখায় চাকরি করার সময় অফিসের পাশের বাড়ির এক কলেজছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নগ্ন ভিডিও তৈরি করেন তিনি। ভিডিওটি কম্পিউটারের দোকান থেকে সেই সময় মানুষের হাতে হাতে চলে যায়। এ কারণে সেই সময় তাকে বরখাস্ত করা হয়। পরে নানা কৌশলে চাকরি ফিরে পেয়ে রেল পুলিশে যোগ দেন নিমাই।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ এপ্রিল মহানগরীর উপকণ্ঠ বাইপাস সড়কের সিটিহাটের কাছে একটি ডোবায় ড্রামের মধ্যে এক তরুণীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা।পরে খবর পেয়ে শাহমখদুম থানা পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় শাহমখদুম থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে একটি মামলা করেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More