তরুণীর বাবা ভাবতেন, মেয়ে তার শ্বশুর বাড়ি

ভারতে তরুণীকে নির্যাতনের ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশে তার বাবা ভেবেছিলেন, মেয়ে তার চাঁদপুরের শ্বশুরবাড়িতে রয়েছেন। অথচ বহু দূরে ভারতের কোনো এক রাজ্যে ঘটনাটি ঘটেছে জানার পর মেয়েকে ফিরে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন; পাশাপাশি জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন ঢাকার ফুটপাতের এই দোকানদার।
“যেভাবেই হোক আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন। আমার মেয়ে এত দূর, অন্য দেশে আছে তা কল্পনাও করতে পারিনি।” কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা এই ব্যক্তি জানান, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা তার মেয়েটি মগবাজার এলাকার বাসিন্দা চাঁদপুরের এক ছেলের সঙ্গে প্রেম করে সাত বছর আগে বিয়ে করে। তাদের তিন বছর বয়সী এক মেয়ে আছে।সাড়ে তিন বছর আগে জামাই কুয়েতে গেলে মেয়েটি মাঝে মধ্যে ঢাকায় এসে থাকত। তার জীবন ভালোই চলছিল। দেড় বছর আগে মেয়ে ‘মগবাজারে তার স্বামীর বন্ধু হৃদয়ের মাধ্যমে’ দুবাই যাওয়ার ভাবনার কথা জানালে তিনি নিষেধ করেছিলেন মেয়েকে। তারপরও মেয়ে নাছোড়বান্দা ভাবপ্রকাশ করে বলে তিনি জানান। ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তারের খবর এসেছে দেশটির সংবাদমাধ্যমে। ২২ বছরের ওই তরুণীকে বিবস্ত্র করে শারীরিক নির্যাতনের পর দল বেঁধে ধর্ষণ করা হয়। গ্রেফতার সবাই একই গ্রুপের এবং সবাই বাংলাদেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের দুইজন নারীও রয়েছেন। এই ঘটনায় ঢাকার হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে নির্যাতনের শিকার মেয়েটির বাবা ‘টিকটকার’ হৃদয় বাবুসহ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতন: বেঙ্গালুরুতে গ্রেপ্তারদের দুজন ‘পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ’ বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতনের ভাইরাল ভিডিও: ঢাকায় মামলা, ভারতে গ্রেপ্তার ৬ বৃহস্পতিবার এনডিটিভি জানায়, নির্যাতনের ওই ঘটনাটি ঘটেছে ছয় দিন আগে। বিভৎস কায়দায় নির্যাতনের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরে নির্যাতনের শিকার হওয়া তরুণীর বাবা বলেন, “ফুটপাতে জুস বিক্রি করি, পড়াশোনাও করিনি, কতকিছু বুঝি না।ছোট্ট নাতনিকে আমার কাছে রাখতাম, আর মেয়ে চাঁদপুরেই থাকত। “এক বছর ধরে মেয়ের কোনো খবর নেই। মনে করেছিলাম, মেয়ে চাঁদপুরে স্বশুর বাড়িতে আছে। কিন্তু এখন দেখি মেয়ে আমার ভারতে, কেমন একটা নির্যাতনের শিকার।” মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার দুই মেয়ে এক ছেলে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি, আর স্ত্রীসহ চারজনকে নিয়ে মগবাজার এলাকায় বসবাস করছি।কিন্তু করোনাভাইরাসের সময় সব এলোমেলো হয়ে যায়। “সংসার আর চলছিলো না বলে পুরো পরিবারকে গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ পাঠিয়ে দেই। ঢাকায় একা থাকতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে যাই। তাই এর মাঝে আর মেয়ের খবর নেওয়া হয়নি।” তার মেয়ে ছোটবেলা থেকেই ‘একটু চঞ্চল প্রকৃতির’ ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, তার পড়াশোনা না জানা মেয়ে এভাবে ভারতে যেতে পারে না। তাকে ফুঁসলিয়ে পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে গেছে। বেঙ্গালুরু সিটি পুলিশের কমিশনার কামাল পান্ট টুইটারে জানান, নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি তরুণীকে পাচারের জন্য ভারতে আনা হয়েছিল। তিনি এখন অন্য একটি রাজ্যে রয়েছেন। তাকে বেঙ্গালুরুতে নেওয়ার জন্য পুলিশের একটি দল গেছে। তাকে বেঙ্গালুরুতে নেওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তার জবানবন্দি নেওয়া হবে। এবিষয়ে হাতিরঝিল থানার ওসি মো. আব্দুর রশীদ বলেন, “গণমাধ্যম থেকে আমরা কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়েছি। তবে অফিসিয়াল চ্যানেলে এখনো ভারতের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।”
ঢাকা মহানগর পুলিশ বলছে, নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী ও নির্যাতনকারীদের একজন ঢাকার মগবাজার এলাকার বাসিন্দা। সাইবার পেট্রোলের অংশ হিসেবে ভিডিওটি তাদের নজরে আসে। নির্যাতনকারী একজনের চেহারার সঙ্গে মগবাজার এলাকার এক যুবকের ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট করা ছবির মিল পাওয়া যায়।সেখান তার পরিচয় রিফাতুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় বাবু বলে শনাক্ত করা হয়। ২৬ বছর বয়সী হৃদয়কে মগবাজারের অধিবাসীদের অনেকেই চেনেন। হৃদয়ের মা ও মামা পুলিশকে বলেছেন, ‘উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের’ কারণে চার মাস আগে তাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে বাসার কারো সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই। ঢাকার পুলিশ বলছে, হৃদয় ভারতের পুনেতে অবস্থান করার কথা তার পরিবারকে বলেছিলেন। ওই ভিডিওতে নির্যাতনের সময় হৃদয়ের সঙ্গে যাদের দেখা গেছে, তাদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
ডিএমপির তেজগাঁওয়ের উপ কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, অভিযুক্ত এবং ঘটনার শিকার তরুণীকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেবে পুলিশ।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More