দুশ্চিন্তায় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা

করোনা পরিস্থিতিতে পাবলিক পরীক্ষার বিকল্প খুঁজছে সরকার : কমিটি গঠন

স্টাফ রিপোর্টার: বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, বাড়ছে মৃত্যুর হারও। চলছে লকডাউন। আগামী সপ্তাহ থেকে আরও কঠোর লকডাউনের চিন্তা সরকারের। এ কারণে ভীতিও বাড়ছে সাধারণ মানুষের। আর শিক্ষার্থীদের চিন্তা পড়াশোনা নিয়ে। বিশেষ করে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মনে নানা ধরনের অনিশ্চিতয়তা ভর করছে। এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা কবে হবে বা আদৌ হবে কি না, এ নিয়ে নানা প্রশ্ন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলে আসছে, পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। গত বছরের মতো অটো পাশ দেয়ার কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই। যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে, তখনই এসএসসির ক্ষেত্রে ৬০ কার্যদিবস ও এইচএসসির ক্ষেত্রে ৮৪ কার্যদিবস সরাসরি ক্লাসে পড়িয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে।

ইতিমধ্যে শিক্ষা বোর্ডগুলো পরীক্ষাকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে তা ছাপানোর জন্য ইতিমধ্যে বিজি প্রেসে পাঠিয়েছে। এছাড়া পরীক্ষা সংক্রান্ত সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে শিক্ষা বোর্ড। তবে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ চলমান থাকলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। গত ৭ এপ্রিল শিক্ষা বোর্ড থেকে জারি করা এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বল হয়, কোভিড-১৯ বিস্তারের কারণে এসএসসি পরীক্ষা- ২০২১-এর বিলম্ব ফি ছাড়া ফরম পূরণের সময় বর্ধিত করে নতুন সময়সূচি জানিয়ে দেয়া হবে।

আমিরুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক বলেন, নানা শঙ্কা ও অনিশ্চয়তায় আছে পরীক্ষার্থীরা। তাদের ভবিষ্যত্ কোন পথে তা বুঝে উঠতে পারছি না।

তারিক নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী জানায়, একবছরের বেশি সময় স্কুলের বাইরে আছি। বলতে গেলে কোনো ধরনের পড়াশোনাই হয়নি। এর মধ্যে করোনার ভয়ও রয়েছে। সব মিলে ভীতির মধ্যে আছি। সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দেওয়া হলেও তাতে মন বসছে না।

বোর্ডের সূচি অনুযায়ী, প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। কিন্তু করোনার কারণে এবার তার ব্যত্যয় হলো। সর্বশেষ একটি অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছিলেন, ২০২১ সালের জুন মাসে এসএসসি এবং জুলাই-আগস্ট মাসে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারে। আর সে লক্ষ্যেই মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে এসএসসি এবং জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে এইচএসসির ক্লাস শেষ করতে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা থাকলেও করোনা বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে ২৩ মে স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ওই সময়ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে কি বা না, তা নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর।

অভিভাবকরা বলছেন, ২৩ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হলে এসএসসি পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ২০২২ সালের এসএসসির টেস্ট পরীক্ষা নিতে হবে। শিক্ষা বোর্ডগুলোকেও ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আর এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার কমপক্ষে এক মাস পর এইচএসসি পরীক্ষা নিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আবার ২৩ মে যদি কলেজ খোলা সম্ভব হয়, তাহলে ৮৪ কর্মদিবস সরাসরি ক্লাসে পাঠদান শেষ করে অক্টোবরের আগে এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হবে না। আর ২৩ মে কলেজ না খুললে এইচএসসি পরীক্ষা আরো পিছিয়ে যাবে।

অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতিতে পাবলিক পরীক্ষার বিকল্প খুঁজছে সরকার। এ লক্ষ্যে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।

অধ্যাপক নেহাল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, করোনার যে ঊর্ধ্বগতি তাতে কবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে তা আমরা বলতে পারছি না। এ অবস্থায় পাবলিক পরীক্ষা ও শ্রেণি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। স্কুল-কলেজও বন্ধ রয়েছে। তাই পড়ালেখা চালিয়ে যেতে বিকল্প কোনো উপায় খুঁজে পাওয়া যায় কি না, সে লক্ষ্যে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে মতামত জানাব।

করোনার প্রাদুর্ভাবে গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। এসএসসি ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ভিত্তিতে তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। এছাড়াও জেএসসি, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও স্কুলগুলোর কোনো পরীক্ষাই নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে এ বছর গত বছরের চেয়েও করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তাই সরকার বিকল্প উপায় খুঁজছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More