দেশের ৪৫ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ : সরাসরি রোদে না থাকার পরামর্শ চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই : তীব্র গরমে নাভিশ্বাস

স্টাফ রিপোর্টার: বছরের উষ্ণতম নিদাঘের দিনলিপি চলছে। এপ্রিল ততোটা উষ্ণ ছিলো না। চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহেও তাপমাত্রা মোটামুটি সহনীয় ছিলো। কিন্তু বুধবার থেকে তাপমাত্রা চড়তে শুরু করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের বড় অংশ জুড়ে ছিলো মাঝারি তাপপ্রবাহ। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের যতো অংশ জুড়ে তাপের বিস্তার, তা চলতি বছর দেখা যায়নি। রাজধানীতেও প্রচ- গরম পড়েছে। রাজধানীর তাপমাত্রা গতকাল ছিলো চলতি বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা বেড়েছে ২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের ৪৫টি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ এবং থার্মোমিটারের পারদ উঠেছে ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রিতে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গা। গতকাল বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৪ শতাংশ। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার মানুষের জীবনযাত্রা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী এমন তাপপ্রবাহ আরো অন্তত তিন দিন চলতে পারে, যদি বায়ুপ্রবাহের বর্তমান গতিপ্রকৃতি একই রকম থাকে। ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাস্থ্য বিভাগ দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সরাসরি রোদে না থাকার পরামর্শ দিয়েছে। আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানিয়েছেন, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজারহাট, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলাসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মাঝারি তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৪২-এর বেশি হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে গণ্য হয়। চলতি মরসুমে এক থেকে তিনটি মৃদু ও মাঝারি এবং এক থেকে দুটি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। সেক্ষেত্রে এক থেকে দুটি ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আরো প্রায় দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা। আর্দ্রতার কারণে গরমের অনুভূতি হতে পারে আরো বেশি। সিরাজগঞ্জসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু তাপপ্রবাহ আরো বিস্তার লাভ করতে পারে। আজ শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে সারা দেশে। আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে এবং তাপমাত্রা আরো সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। তাপপ্রবাহও অব্যাহত থাকবে। আগামীকাল শনিবারও সারা দেশে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। রোববার দেশের পাঁচটি বিভাগ, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেটে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া এবং বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে আবহাওয়া থাকবে শুষ্ক এবং আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। এ সময় দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। সোমবার ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু স্থানে এবং রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেসঙ্গে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং তাপপ্রবাহেরও কিছুটা প্রশমন হতে পারে।
চুয়াডাঙ্গায় তীব্র গরমে জনজীবনে চরম ভোগান্তি নেমে এসেছে। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি দেশের আজকের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল মাত্র ৩৪ শতাংশ। এর আগে বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি। একদিনেই তাপমাত্রা বেড়েছে ২ দশমিক ৪ ডিগ্রির বেশি, যা জনদুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা ছিলো ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি এবং বাতাসে আর্দ্রতা ছিলো ৪০ শতাংশ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরমও বেড়েছে দ্রুত। জেলার শহর ও গ্রামীণ এলাকায় গরমে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে পড়েছে। খোলা আকাশের নিচে কাজ করা শ্রমজীবী মানুষজন রোদে হাঁসফাঁস করছেন। অনেকেই হিটস্ট্রোক, পানিশূন্যতা ও দুর্বলতায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল সূত্র। এদিকে তীব্র গরম ও রোদের তাপের কারণে শ্রমিক, দিনমজুর, ভ্যান-রিকশা চালকরা গরমে অস্থির হয়ে পড়ছেন। একটু প্রশান্তির খোঁজে গাছের ছায়া ও ঠান্ডা পরিবেশে গা এলিয়ে দিচ্ছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা-ঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে। আবার অনেকে জরুরি প্রয়োজন ও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচ- তাপদাহ উপেক্ষা করে কাজে বের হচ্ছেন। অনেক পথচারী ছাতা মাথায় দিয়ে চলাচল করছেন। চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের কয়েকজন খেটে খাওয়া দিনমজুর জানান, গত দুই দিন গরম পড়ছে। আজ রোদের তীব্রতা অনেক। খুব কষ্ট হচ্ছে কাজ করতে। দুপুর হলেই ক্লান্তিতে শরীর চলছে না। বিকেলের আগেই বাড়িতে ফিরে যেতে হচ্ছে। এমন গরম পড়লে কাজ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। চুয়াডাঙ্গা শহরের এক ডাব বিক্রেতা বলেন, গত তিন দিন যাবত ডাব বিক্রি বেড়েছে। যত গরম বেশি পড়বে তত বিক্রি হবে। তবে বেলা বাড়লেই লোকজনের আনাগোনা খুবই সীমিত হয়ে যাচ্ছে।
আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে জানিয়ে চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলার উপর দিয়ে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যা আগামী ১৩ মে পর্যন্ত ক্রমেই বাড়তে পারে। ৪০ ডিগ্রি পার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর থেকে কমতে পারে। চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, ‘আজকের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এই গরমের তীব্রতা কমবে না।’ আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই তাপপ্রবাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। স্বাস্থ্য বিভাগ দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সরাসরি রোদে না থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More