দেশে একদিনে করোনা আক্রান্ত ১১৫২৫ রোগী শনাক্ত, ১৬৩ মৃত্যু

ভয়ঙ্কর রূপ পাওয়া করোনাভাইরাস মহামারীতে দেশে এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ১১ হাজারের ঘরও ছাড়িয়ে গেল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সাড়ে ৩৬ হাজার নমুন পরীক্ষা করে রেকর্ড ১১ হাজার ৫২৫ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও ১৬৩ জনের। দেশে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের বিস্তার শুরুর পর নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই বাড়ছিল। মঙ্গলবার তা ৩১ দশমিক ৪৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা গত বছরের অগাস্টের পর সর্বোচ্চ। ওই সময় ৩ অগাস্ট শনাক্তের হার ছিল ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ। তার আগে গত বছরের ১২ জুলাই দৈনিক শনাক্তের হার পৌঁছেছিল ৩৩ দশমিক শতাংশে যা বাংলাদেশে সর্বোচ্চ।
ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে গত ৩০ জুন সারা দেশে লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি হয়। তার আগের দিন ৩০ জুন রেকর্ড ৮৮২২ জন রোগী শনাক্তের খবর এসেছিল। সোমবার তা ছাড়িয়ে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছায় ৯ হাজার ৯৬৪ জনে। একদিন বাদেই তা প্রথমবারের মত দশ হাজার ছাড়িয়ে গেল। দৈনিক শনাক্তের সঙ্গে মৃত্যুতেও রেকর্ড হয়েছিল সোমবার, সারা দেশে ১৬৪ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মঙ্গলবার সেই সংখ্যা কমেছে শুধু একজন। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৯ লাখ ৬৬ হাজার ৪০৬ জনে। তাদের মধ্যে ১৫ হাজার ৩৯২ জনের প্রাণ গেছে করোনাভাইরাসে। গত এক দিনে কেবল ঢাকা বিভাগেই ৫০৯৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের প্রায় ৪৪ শতাংশের বেশি। চট্টগ্রাম বিভাগে এক দিনে শনাক্ত রোগী দেড় হাজার ছাড়িয়েছে, খুলনায় ছাড়িয়েছে ১৮ শ। আর যে ১৬৩ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৪৬ জনই ছিলেন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। ঢাকা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরও ৫ হাজার ৪৩৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬০৫টি ল্যাবে ৩৬ হাজার ৬৩১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৭ লাখ ৯৪ হাজার ১৯৩টি নমুনা।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, যা আগের দিন ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ ছিল। দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ২২ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইডিসিআর জানিয়েছে, গত জুন মাসে দেশে কোভিড-১৯ রোগীদের নমুনা থেকে ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করে দেখা গেছে, ৭৮ শতাংশই ডেল্টা ধরনের। ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় ৩ হাজার ৭১৫ জন, টাঙ্গাইল জেলায় ৪১৩ জন, ফরিদপুরে ১৬৩ জন, নারায়ণগঞ্জে ১৬৪ জন, রাজবাড়ীতে ১৩৯ জন, গোপালগঞ্জে ১০৬ জন এবং কিশোরগঞ্জে ১০২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৬৬২ জন, কুমিল্লায় ২৮২ জন, নোয়াখালীতে ১৩৪ জন, কক্সবাজারে ১২৫ জন এবং ফেনীতে ১০৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ৩৪২ জন, বগুড়ায় ২৩৮ জন, পাবনায় ১৮৬ জন এবং নওগাঁয় ১৮১ জন নতুন রোগী মিলেছে। খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়ায় ৪৩২ জন, খুলনায় ৩৪৯ জন, যশোরে ২৭৯ জন, ঝিনাইদহে ২৩০ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১৪০ জন, বাগেরহাটে ১২৭ জন এবং সাতক্ষীরায় ১১৩ জনের মধ্যে ধরা পড়েছে সংক্রমণ। রংপুর বিভাগের দিনাজপুরে আরও ১৮৩ জন এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ১১৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এছাড়া অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে সিলেট জেলায় ২৪৭ জন, বরিশাল জেলায় ১৭৮ জন, ঝালকাঠিতে ১০৪ জন এবং ময়মনসিংহ জেলায় ১৬৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম সোমবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, করোনাভাইরাসের সামাজিক বিস্তার ঘটায় কোভিড ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম পর্যায়ে; হাসপাতালে এখন যে রোগীরা আসছেন, তাদের ৫০ শতাংশই গ্রামের। তারা ‘দেরি করে হাসপাতালে আসায়’ চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু বেশি হচ্ছে।
“আমরা সবগুলো উপজেলায় কথা বলেছি। সবার পর্যবেক্ষণ একটাই, রোগীদের অনেকেই অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে ৪০-৫০ এ নেমে গেলে হাসপাতালে আসছেন। অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে গেলে ব্রেইন ড্যামেজ আগেই হয়ে যায়। এ ধরনের রোগীদের বাঁচানো খুব কঠিন হয়। গ্রামের রোগীরা অসতর্ক, গ্রামের বয়স্ক মানুষ হাসপাতালে আসেন অনেক পরে, এ কারণে মৃত্যুর হার বেশি হচ্ছে।” গত এক দিনে খুলনা বিভাগে যে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ১৭ জনই ছিলেন কুষ্টিয়া জেলার। আর ঢাকা বিভাগে মারা যাওয়া ৪৫ জনের মধ্যে ১৬ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার বাসিন্দা। এছাড়া চট্গ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে ২৪ জন করে মোট ৪৮ জন, রংপুর বিভাগে ১১ জন, বরিশাল বিভাগে ৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ জন এবং সিলেট বিভাগে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।

মৃত ১৬৪ জনের মধ্যে ৯১ জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ২৯ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ২৭ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ৫ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।

তাদের ৯৮ জন ছিলেন পুরুষ, ৬৫ জন ছিলেন নারী। ১২৬ জন সরকারি হাসপাতালে, ২৯ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ৫ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৩ জনকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় নেওয়া হয় বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা ৯ লাখ পেরিয়ে যায় গত ২৯ জুন।

প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ৪ জুলাই তা ১৫ হাজার ছাড়ায়।

বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৮ কোটি ৪২ লাখ ছাড়িয়েছে। আর ৩৯ লাখ ৮৬ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More