দেশে দ্রুত রূপ পরিবর্তন করছে করোনাভাইরাস

ঈদের পর সর্বনিম্ন শনাক্ত ॥ ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ১৫৯২ ও মৃত্যু ৩২

স্টাফ রিপোর্টার: বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ অনেক দ্রুতগতিতে রূপ পরিবর্তন (মিউটেশন) করছে। বিশ্বে পরিবর্তনের হার ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে এটা ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। কোভিড-১৯ জিনোম সিকোয়েন্সিং নিয়ে বিসিএসআইআর জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এ নিয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান আফতাব আলী শেখ।

গবেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসে মোট ২৮টি প্রোটিন থাকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্পাইক প্রোটিন, যার মাধ্যমে এটি বাহককে আক্রমণ করে। করোনার নমুনা বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছেন, স্পাইক প্রোটিনে ৬১৪তম অবস্থানে অ্যাসপার্টিক অ্যাসিডের পরিবর্তন হয়ে প্লাইসিন হয়েছে। এতে ‘জি৬১৪’ নাম্বার ভ্যারিয়েন্টটি শতভাগ ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করেছে। এই আধিপত্যের কারণে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। দেশে এ পর্যন্ত ৩২৫টি করোনাভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জীবন নকশা বের করা হয়েছে। এর মধ্যে বিসিএসআইআরের জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির গবেষকরা ২৬৩টি করোনাভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জীবন নকশা বের করেছেন। এই ২৬৩টি ভাইরাসের জিন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, দেশে করোনাভাইরাসগুলোর জিনোমিক পর্যায়ে ৭৩৭টি পয়েন্টে রূপান্তর (মিউটেশন) হয়েছে। এর মধ্যে অ্যামিনো অ্যাসিড পর্যায়ে ৩৫৮ নন-সিনোনিমাস অ্যামিনো অ্যাসিডে প্রতিস্থাপন ঘটেছে। এ ছাড়া স্পাইক প্রোটিনের জিনে ১০৩টি নিওক্লিটাইড রূপান্তরের (মিউটেশন) মধ্যে ৫৩টি নন-সিনোনিমাস অ্যামিনো অ্যাসিডে প্রতিস্থাপন ঘটেছে। এর মধ্যে পাঁচটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, যা বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া যায়নি। গবেষকরা বলছেন, সারাবিশ্বে সব মিলিয়ে ছয় ধরনের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ২৬৩টি করোনাভাইরাস পর্যবেক্ষণ করে বিসিএসআইআরের গবেষকরা চার ধরনের ২৪৩টি জিআর ক্লেড, ১৬টি জিএইচ ক্লেড, তিনটি জি ক্লেড এবং একটি ও ক্লেড করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছেন। এছাড়া করোনার নমুনাগুলোর শতভাগ ক্ষেত্রে মোট চারটি মিউটেশনে পুনরাবৃত্তি লক্ষ্য করা গেছে। এসব পরিবর্তন দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য প্রধানত দায়ী। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সের কাজ করে আমরা এটি সম্পর্কে আরও জানতে পারবো। তাই করোনার জিনোম সিকোয়েন্সের কাজটি চলবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ হাজার ৩৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ১ হাজার ৫৯২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, যা গত ঈদের পর সর্বনিম্ন। একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৪২৩ জন, যা শনাক্তের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। এর আগে ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৩৫৬ জন করোনা রোগী শনাক্তের তথ্য জানানো হয় গত ৩ আগস্ট। ঈদের ছুটির কারণে ওই ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয় মাত্র ৪ হাজার ২৪৯টি। শনাক্তের হার ছিল ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ। এরপর গতকালই প্রথম দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা দেড় হাজারের ঘরে নেমে আসল। সেই সঙ্গে কমেছে শনাক্তের হার, যা গত সাড়ে তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো ৪ হাজার ৪৭৯ জনের। মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ১৫৭ জনের। মোট সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ২১ হাজার ২৭৫ জন। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৬৮ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এর আগের দিন পর্যন্ত সুস্থতার হার ছিলো ৬৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ছিলো ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের ২৫ জন পুরুষ ও ৭ জন নারী। ২৯ জন হাসপাতালে ও ৩ জন বাড়িতে মারা গেছেন। এর মধ্যে ১৭ জন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব। ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪ জন ও ২ জনের বয়স ছিলো ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। মৃতদের মধ্যে ১৭ জন ঢাকা বিভাগের, ৪ জন করে খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের, ৩ জন সিলেট বিভাগের, ২ জন রাজশাহী বিভাগের এবং ১ জন করে রংপুর ও বরিশাল বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। করোনা দ্রুত রূপ বদলাচ্ছে বাংলাদেশে : মহামারী করোনাভাইরাসের রূপ বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে বলে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)-এর এক গবেষণায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের রূপ পরিবর্তনের হার ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ, যেখানে বিশ্বে এই পরিবর্তনের হার ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরা হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More