দেশে বন্যা পরিস্থিতি অবন্নতি : দিশেহারা বানভাষী মানুষ : দুর্গতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী

বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের  নদ-নদীর বিপৎসীমার ওপরে

স্টাফ রিপোর্টার: দেশে বন্যা পরিস্থিতি আকস্মিক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১০ নদ-নদীর ১৩ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। সুনামগঞ্জের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন সড়ক ও রেল যোগাযোগ। সিলেট-সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ডুবে যাওয়ায় অন্ধকারে সাড়ে ৪ লক্ষাধিক গ্রাহক। বিভিন্ন অঞ্চলে পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ। দুর্গতদের উদ্ধারে নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। আজ নামছে নৌবাহিনীও।

ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সিলেট ও রংপুর অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। সূত্র জানান, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হাতিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬০ ও চিলমারী পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার ওপরে উঠে যায়। ধরলার পানি কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ৯ ও তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১০৮, সিলেট পয়েন্টে ৭০ ও সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

এছাড়া সারিগোয়াইন নদের পানি সারিঘাটে ২৩, পুরাতন সুরমার পানি দেরাই পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। লরেরগড়ে বিপৎসীমার ১৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল যাদুকাটা নদীর পানি। সোমেশ্বরী নদী কমলাকান্দা পয়েন্টে ৫৬ ও ভুগাই নদী নাকুয়াগাঁও পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

আবহাওয়া সংস্থাগুলোর গাণিতিক মডেলভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৩৬ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারসহ সব প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ১২ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। একই সঙ্গে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হতে পারে।

এদিকে আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সিলেট সদর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সদর, জামালগঞ্জ, দিরাই, দোয়ারাবাজার, ছাতক এবং সুনামগঞ্জের খাদ্য গোডাউন ও সিলেটের কুমারগাঁও পাওয়ার স্টেশনে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

সিলেট: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। বেড়েই চলেছে পানি। বন্যাক্রান্ত বেশির ভাগ উপজেলায় পা রাখার মতো শুকনো মাটি নেই। পানিবন্দি লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে উদ্ধারকাজে নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। আজ থেকে উদ্ধারকাজে নৌবাহিনীও যুক্ত হওয়ার কথা। রানওয়ের কাছাকাছি পানি চলে আসায় তিন দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ওসমানী বিমানবন্দর। কুমারগাঁও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পানি উঠে হুমকির মুখে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। সিলেট শহর (উত্তর সুরমা) ছাড়া জেলার বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ। বন্যার অবনতি হওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয়ও ঠাঁই মিলছে না মানুষের।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, গোয়াইনঘাটের ৮০ ভাগ ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার শতভাগ এলাকা তলিয়ে গেছে। দুই উপজেলায় পা রাখার মতো শুকনো মাটি খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, হাটবাজার, হাওর, নদী সব পানিতে একাকার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে পানি বাড়তে থাকলে উদ্ধারের জন্য আক্রান্ত লোকজন আর্তনাদ করতে থাকেন। কিন্তু রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় এবং নৌকার সংকট থাকায় স্থানীয়ভাবে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় বৃহস্পতিবার অন্ধকারের মধ্যে বিভীষিকাময় রাত কাটান লোকজন। পানি বৃদ্ধি পেয়ে অনেকের পুরো ঘর তলিয়ে যাওয়ায় রাতে ঘরের চাল ও বাসার ছাদে ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাত কাটিয়েছেন। জেলার সদর, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও বিশ্বনাথ উপজেলায়ও বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বানভাসি মানুষের মধ্যে আশ্রয়, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার চলছে। গবাদি পশু নিয়েও মানুষ পড়েছে বিপাকে। অনেকে নৌকায় গবাদি পশু নিয়ে সিলেট শহরে চলে আসছে। কিন্তু সিলেট শহরে এনেও গবাদি পশু রাখার জায়গা ও খাবারের ব্যবস্থা করতে বেগ পেতে হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, সুরমা নদী আর শহরের রাস্তা চেনার উপায় নেই। পানিতে সব একাকার। নগরের সুরমা তীরবর্তী এলাকা তলিয়ে গেছে। উপশহর, সাদারপাড়া, তেররতন, কুশিঘাট, বোরহানাবাদ, সোবহানীঘাট, যতরপুর, ছড়ারপাড়, মাছিমপুর, কামালগড়, কালিঘাট, তোপখানা, কাজিরবাজার, শেখঘাট, কুয়ারপাড়, ঘাসিটুলাসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। ফলে ওইসব এলাকার মানুষ যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন। যত সময় গড়াচ্ছে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্লাবিত এলাকার বেশির ভাগ মানুষ বাসাবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। এ অবস্থায় গতকাল সকালে উদ্ধারকাজসহ সার্বিক সহযোগিতার জন্য সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চান জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান। লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুপুরে সিলেট ও সুনামগঞ্জের আট উপজেলায় সেনাবাহিনীর নয়টি টিম কাজ শুরু করেছে। ‘রেসকিউ বোট’ দিয়ে তারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে পানিবন্দি মানুষ উদ্ধার করে নিয়ে আসছে। সিলেট সেনানিবাসের অধিনায়ক মেজর জেনারেল হামিদুল হক জানান, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সিলেটের তিন ও সুনামগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় সেনাবাহিনী পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারসহ পাঁচটি কাজে তৎপরতা শুরু করেছে। সিলেটের উপজেলাগুলো হচ্ছে সদর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ, সুনামগঞ্জের সদর, দিরাই, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও জামালগঞ্জ। সেনাবাহিনী নিজস্ব নৌকা দিয়ে পানিবন্দি মানুষ উদ্ধার করছে। ঢাকা ও কুমিল্লা থেকে আরও ‘রেসকিউ বোট’ আনা হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয়দের নৌকাগুলোও উদ্ধারকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এদিকে বন্যার্তদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি আজ সকালে নৌবাহিনীরও কাজ শুরুর কথা রয়েছে। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. জানিয়েছেন, রাতের মধ্যেই নৌবাহিনীর সদস্যরা সিলেটে এসে পৌঁছার কথা। সকালে তারা প্রথমে সালুটিকরে অবস্থান নেবেন। পরে সেখান থেকে উপদ্রুত এলাকায় উদ্ধারকাজ শুরু করবেন। বন্যাক্রান্তদের জন্য সিলেট নগরে প্রায় দেড়শ ও বিভিন্ন উপজেলায় ৫ শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কিন্তু আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতেও ঠাঁই মিলছে না মানুষের। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে আসছে। নগরেও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় মানুষের ভিড় বাড়ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ই সব আশ্রয় কেন্দ্র বানভাসি মানুষে ভরে গেছে। রাত ৮টার দিকে ছড়ারপাড়, কামালগড়, কালিঘাট ও আশপাশ এলাকার কয়েকশ লোক সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে আশ্রয় নিতে যান। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র হওয়ায় স্কুলের গেট খুলে দেওয়া হয়নি। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বৃষ্টিতে ভিজে তারা ফিরে যান।

এছাড়া সিলেটের প্রধান পাইকারি বাজার সুরমাতীরবর্তী কালিঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। বাজারের দোকানপাটে ৪-৫ ফুট পানি উঠেছে। দোকান ও গুদামের জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় গতকাল বিকাল থেকে কালিঘাটের পাশের সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় ব্যবসায়ীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ীকে জিনিসপত্র স্কুলে নিয়ে সংরক্ষণ করতে দেখা গেছে। তবে বেশির ভাগ দোকান ও গুদামের মালামাল ইতোমধ্যে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন বন্যায় কালিঘাটের পাইকারি ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

আরও জানা গেছে, ছাতক ও সুনামগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্র পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারণে বন্যাকবলিত ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৫০০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুনামগঞ্জে ৩ লাখ ৮০ হাজার মানুষ এখন বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে। সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি খারাপের দিকে ধেয়ে চলেছে। ভারী বৃষ্টিতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে রাস্তাঘাট, দোকানপাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। বাসাবাড়িতে অনেক মানুষ কোমরপানি, গলাপানি পর্যন্ত বন্দি থাকার পর গতকাল ভোরে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বের হয়ে পড়েন। নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশু সবাই নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটছেন। মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। তবে কোনোমতে আশ্রয়ের জায়গা পেলেও চরম খাদ্য ও পানি সংকটে তারা।

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে সুনামগঞ্জবাসী। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুরে হাজার হাজার বসতঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। ছাতক ও সুনামগঞ্জ শহরের শত শত বসতঘরের নিচতলা কোমরপানিতে ডুবে আছে। উজানের ঢল ও দিনভর ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে হুহু করে পানি ঢুকছে। সাংসারিক জিনিসপত্র চৌকি-খাটের ওপরে তুলে রেখেও শেষরক্ষা করতে পারছেন না। টিভি, ফ্রিজসহ কোটি কোটি টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী এখন বানের পানিতে নিমজ্জিত। পুরো সুনামগঞ্জ শহরের ৯০ ভাগ বসতঘরে পানি। ছাতক শহরের শতভাগ এলাকা নিমজ্জিত হয়ে আছে। সুনামগঞ্জ ও ছাতক পৌর এলাকার প্রধান সড়ক হাঁটুপানি থেকে কোমরপানিতে ডুবে আছে। শহরের প্রধান সড়কগুলোয় অনায়াসে নৌকা চলছে। ৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের পাঁচ স্থান কোমরপানিতে ডুবে থাকায় সুনামগঞ্জের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন ছাতক, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা। এসব এলাকার প্রধান সড়ক এখন সাঁতার কাটার মতো নিমজ্জিত। নৌকা ছাড়া এসব উপজেলায় যাওয়ার বিকল্প কোনো বাহন নেই। সুনামগঞ্জ শহরের তেঘরিয়া, সাহেববাড়ির ঘাট, উকিলপাড়া, নুতনপাড়া, শান্তিবাগ, হাছননগর, পাঠানবাড়ী জেলরোড, মধ্যবাজার, পশ্চিমবাজার, বড়পাড়া, আরপিনগর, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী, হাজীপাড়া, নবীনগরের ৫ শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার ব্যবসায়ী।

রংপুর: তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে রংপুরের চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি নিম্নাঞ্চল, চর, দ্বীপচরের কয়েক হাজার পরিবার। গবাদি পশু-পাখিসহ মানুষ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। চরের মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে মাইকিং করা হয়েছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, উজানের পাহাড়ি ঢলে এক সপ্তাহ ধরে তিস্তার পানি বাড়ছে আবার কমছে। গতকাল সকাল ৭টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে কিছুটা উঠলে দুপুরে তা কমে এসেছে। তবে আগামী ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টায় উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এ বৃষ্টিপাতের কারণে পানি আবারও বাড়তে পারে। এদিকে তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়া, পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলার নিম্নাঞ্চল, চর, দ্বীপচরগুলোয় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পানিবন্দি চরের কয়েক হাজার পরিবার। গবাদি পশুসহ আসবাবপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন দুর্গতরা। লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদী বলেন, ‘তিস্তার পানি বাড়লে আমার ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে তিন ওয়ার্ডের প্রায় ১ হাজার মানুষ পানিবন্দি।’

কুড়িগ্রাম: উজানের পাহাড়ি ঢলের পানি আকস্মিক কমে রৌমারী ও রাজীবপুরের বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছে। অন্যদিকে ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদে নতুন করে পানি বাড়ছে। তবে দুই উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের বন্যার্তদের দুর্ভোগ এখনো কমেনি। অনেক এলাকায় কাঁচা-পাকা সড়ক এখনো নিমজ্জিত। ফলে যোগাযোগ সমস্যায় রয়েছেন এসব বন্যার্ত। ৩৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি থাকায় পাঠদান কার্যক্রম চালু করতে পারেনি শিক্ষা বিভাগ। ওই দুই উপজেলায় বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।

নীলফামারী: নীলফামারীতে উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। গতকাল সকাল ৬টায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে ডিমলা উপজেলার তিস্তাবেষ্টিত ছয় ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের ৪ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানান, তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ও ৯টায় ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর দুপুর ১২টায় কিছুটা কমে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচে নামে। এর আগে বৃহস্পতিবার সেখানে পানির প্রবাহ ছিল বিপৎসীমা বরাবর। ওই পয়েন্টে নদীর পানির বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ৬০ মিটার। তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ী, খগাখড়িবাড়ী, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ও গয়াবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রাম ও চরের ৪ সহস্রাধিক পরিবার বন্যাকবলিত বলে জানান জনপ্রতিনিধিরা।

বগুড়া: বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীর কাছাকাছি এলাকায় পানি প্রবশে করছে। বিপৎসীমার কাছাকাছি পানি থাকায় নদীর কাছের পাট ও ধৈঞ্চা খেত ক্ষতির মুখে। পানিতে আক্রান্ত ফসলগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক। সারিয়াকান্দিতে দায়িত্বে থাকা গেজ রিডার পরশুরাম জানিয়েছেন, গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত যমুনার সারিয়াকান্দির কালিতলা পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১৬.৪০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে বাঙালি নদী পানির উচ্চতা ছিল ১৫.৬০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

লালমনিরহাট: ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে সকালে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও বিকালে ব্যারাজ পয়েন্টে কমতে শুরু করে। বিকাল সাড়ে ৩টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে ধরলার পানি বিকেল ৩টার পর থেকে শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অস্বাভাবিক গতিতে পানি বাড়ায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তিস্তা ও ধরলা পাড়ের বাসিন্দারা। এরই মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় অন্তত ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদিন সকাল ৬টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ৫২.৭৪ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হয় (স্বাভাবিক ৫২.৬০)। বিকাল ৩টার পর পানি কমে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তা ও ধরলার পানি বৃদ্ধিতে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, তাঁতীপাড়া, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজানের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউনিয়নের রানীগঞ্জের ৭, ৮ নম্বর ওয়ার্ড, সিঙ্গামারী ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউনিয়নের পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চরবৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চরখুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকু-া ইউনিয়নের তিস্তাতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ: দ্রুত বাড়ছে যমুনার পানি। এরই মধ্যে কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে গেছে। পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে যমুনার অরক্ষিত শাহজাদপুর, কাজিপুর, চৌহালী ও এনায়েতপুর অঞ্চলে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। বন্যা ও ভাঙন আতঙ্ক নদীতীরবর্তী মানুষের মধ্যে। সকালে শহরের হার্ডপয়েন্ট এলাকায় যমুনার পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৮৯ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ৩৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানি রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ৯০ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ৪১ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া জেলার অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ফুলজোড়, ইছামতি, বড়ালসহ অন্যান্য নদ-নদী ও খাল-বিলের পানি বেড়েই চলেছে।

শেরপুর: সাত দিনের ব্যবধানে আবারও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা। বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভারী বর্ষণ ও ভারতে মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা হঠাৎ ঢলের পানিতে ভাসছে ঝিনাইগাতীর বিস্তর অঞ্চল। মহারশী ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলা সদরের বিভিন্ন অফিস, বাজার ও গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এক রাতে মহারশী ও সোমেশ্বরীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর, ধানাশাইল, গৌরীপুর, হাতিবান্ধা, মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের ২০ গ্রামের নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। নদীর প্রবল স্রোতে এলাকার রামেরকুড়া, দিঘীর পাড়, চতলের বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলা সদর ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবাহিত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। কোনোরকম প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় কয়েক হাজার মানুষ বিপাকে পড়েছে। এ ছাড়া সীমান্তের পাহাড়ি নদীর সবকটিতেই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও বৃহ্মপুত্র নদের পানি জামালপুর-শেরপুর পয়েন্টে এখনো বিপৎসীমার প্রায় ৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া বিকালে চেল্লাখালী নদীর ওপর দুটি লোহার ব্রিজ প্রবল পানির স্রোতে ভেসে গেছে। ভোগাই নদীর সাত জায়গায় পাড় ভেঙে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ভোগাইর পানি নালিতাবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর চেল্লাখালীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নেত্রকোনা: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অব্যাহত বর্ষণে বাড়ছে নেত্রকোনার দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী ও কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি। দুইদিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে গতকাল সকাল থেকে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সোমেশ্বরীর পানি। দ্রুত নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সকাল থেকে তীরবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। যদিও কয়েক ঘণ্টা পর পানি নেমে যায়। এর পরও অতিবৃষ্টিতে উপজেলার নিচু সড়কসহ এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, মসজিদ, বাজারসহ বেশ কিছু বাড়িঘর।

জানা গেছে, দুর্গাপুরের চকলেঙ্গুগুরা, শিবগঞ্জ, ডাকুমারা, কুল্লাগড়া, কামারখালী, গাঁওকান্দিয়াসহ নদীতীরবর্তী এলাকায় শতাধিক মানুষ পানিবন্দি। এ ছাড়া অতিবৃষ্টির পানি উপচে সড়ক বন্ধ হওয়ায় এবং ড্রেনগুলো দিয়ে ঢলের পানি বাজারে প্রবেশ করায় দুর্গাপুর, মেছুয়া বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজারে হাঁটুপানি হয়েছে। এদিকে কলমাকান্দা উপজেলার উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানির নিচে শহরের প্রধান সড়কগুলো। ফলে গ্রামীণ জনপদের হাটবাজার, হাসপাতাল চত্বর, উপজেলা পরিষদ চত্বরে পানি ঢুকেছে। এদিকে প্রচুর বজ্রবৃষ্টিতে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে বারবার। নষ্ট হচ্ছে ট্রান্সফরমার। ফলে রাত থেকে অনেক এলাকায় ছিল না বিদ্যুৎ সরবরাহ। এদিকে দুর্গাপুরে কাজ করছে না গ্রামীলফোনের নেটওয়ার্ক। যোগাযোগ হচ্ছে শুধু বাংলালিংক নেটওয়ার্কে।

বরিশাল: বরিশাল বিভাগের চার নদীর পানি প্রতিদিন দুবার বিপৎসীমা অতিক্রম করছে। ভাটির সময় পানি নেমে যাচ্ছে। অন্যদিকে বরিশাল মহানগরের কোলঘেঁষে বয়ে যাওয়া কীর্তনখোলাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানিও বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই। উজানের পানির ঢল আর পূর্ণিমার জোর প্রভাবে সমুদ্রের জোয়ারের চাপ হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড, বরিশালের কর্মকর্তারা।

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী বুহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌঁনে ৬টায় ভোলা খেয়াখাট এলাকায় তেঁতুলিয়া নদীর পানি বিপৎসীমা (২.৯০ মিটার) অতিক্রম করে ৩.০৪ মিটার লেভেল দিয়ে প্রবাহিত হয়। একই ভাবে ওইদিন বিকালে ভোলার তজুমদ্দিনে সুরমা ও মেঘনার পানি বিপৎসীমা (২.৮৩) অতিক্রম করে ৩.৫০ মিটার লেভেলে, এ দুই নদীর ভোলার দৌলতখান এলাকায় বিপৎসীমা (৩.৪১ মিটার) অতিক্রম করে ৩.৭২ মিটার লেভেলে, বিষখালী নদীর বরগুনা পয়েন্টে বিপৎসীমা (২.৮৫ মিটার) অতিক্রম করে ২.৮৯ মিটার লেভেলে এবং একই নদীর পাথরঘাটা পয়েন্টে বিপৎসীমা (২.৮৫ মিটার) অতিক্রম করে ৩.৪৫ মিটার লেভেল দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া বিষখালী নদীর ঝালকাঠি পয়েন্টে বিপৎসীমা (২.০৮ মিটার) ছুঁইছুঁই করে ২.০০ মিটার লেভেলে, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে বলেশ্বর ও পায়রা নদীর পানি (২.৮১ মিটার) ছুঁইছুঁই করে ২.৭৮ মিটার লেভেলে এবং বলেশ্বর নদের পিরোজপুর পয়েন্টের পানি বিপৎসীমা (২.৬৮ মিটার) কাছাকাছি ২.৫৫ মিটার লেভেলে প্রবাহিত হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More