দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্তরা আগের চেয়ে দ্রুত মারা যাচ্ছেন : আইইডিসিআর

স্টাফ রিপোর্টার: করোনাভাইরাস সংক্রমণে টানা তৃতীয় দিনের মতো শতাধিক মৃত্যু দেখলো দেশ। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। আগের দুই দিন ১০১ জন করে মারা যান। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত করোনায় ১০ হাজার ৩৮৫ জনের মৃত্যু হলো দেশে। আর এপ্রিলের ১৮ দিনেই মারা গেলেন ১ হাজার ৩৩৯ জন। সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এত কম সময়ে এত বেশি মৃত্যু আগে কখনো হয়নি। এর আগে করোনায় সর্বাধিক মৃত্যু হয়েছিলো গত বছরের জুলাইয়ে। ওই মাসের ৩১ দিনে মারা গিয়েছিলেন ১ হাজার ২৬৪ জন। আর চলতি এপ্রিলের ১৮ দিনেই মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১ হাজার ৩০০। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ হাজার ৪০৪টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ৩ হাজার ৬৯৮ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১৯ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। মৃত্যু বাড়লেও তিন দিন ধরে শনাক্তের হার কিছুটা নিম্নমুখী। গত ১৭ এপ্রিল ২১ দশমিক ৪৬ শতাংশ ও ১৬ এপ্রিল ২৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ শনাক্ত হারের তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। অবশ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে এসেছিলো। মাসজুড়ে শনাক্তের হার ৪ শতাংশের নিচে ছিলো। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৬ হাজার ১২১ জন। গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৭ লাখ ১৮ হাজার ৯৫০ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৬ লাখ ১৪ হাজার ৯৩৬ জন। মারা গেছেন ১০ হাজার ৩৮৫ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত এক দিনে মারা যাওয়া ১০২ জনের মধ্যে ৫৯ জন ছিলেন পুরুষ ও ৪৩ জন নারী। ৯৭ জন হাসপাতালে ও ৫ জন বাড়িতে মারা গেছেন। বয়স বিবেচনায় মৃতদের মধ্যে ৬৩ জন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব, ২৩ জন পঞ্চাশোর্ধ্ব, ১৪ জন চল্লিশোর্ধ্ব ও ২ জনের বয়স ছিলো ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে ৬৮ জন ঢাকা, ২২ জন চট্টগ্রাম, ৩ জন রাজশাহী, ১ জন খুলনা, ৪ জন বরিশাল ও ৪ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানানো হয় ও ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
দ্রুত মারা যাচ্ছেন কভিড আক্রান্তরা: করোনাভাইরাস মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্তরা আগের চেয়ে দ্রুত মারা যাচ্ছেন। আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হারও বেড়েছে গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি তীব্রতা নিয়ে। মহামারীর প্রভাব পড়ছে মানসিক স্বাস্থ্যেও। গত শনিবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছরের মার্চে কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬৩৮ জন। এপ্রিলের ১৫ তারিখ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৯৪১ জনের। সে অনুযায়ী দুই সপ্তাহেই মৃত্যুর হার এক লাফে ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এ বছর এপ্রিলে আগের বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যুর হারের চেয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল মাসের সঙ্গে এ বছরের একই সময়ের তুলনা করে দেখা গেছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কেউ মারা যায়নি, মার্চে পাঁচজন আর এপ্রিলে ১৬৩ জন মারা গেছেন। আর চলতি বছরের এই তিন মাসে মারা গেছেন যথাক্রমে ২৮১, ৬৩৮ এবং ৯৪১ জন।
২৮ জানুয়ারি থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে আইইডিসিআর বলছে, এ সময় আক্রান্তদের ৪৪ শতাংশই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ৩৩ শতাংশ রোগী প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে, ১৭ শতাংশ বাড়িতে এবং ৬ শতাংশ অন্যান্য উপায়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, যারা মারা গেছেন, তাদের ৫২ শতাংশই উপসর্গ শুরুর পাঁচ দিনের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২৬ শতাংশ ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এবং ১২ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হন উপসর্গ শুরুর ১১ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে মারা গেছেন ৪৮ শতাংশ এবং ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৬ শতাংশ রোগীর। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে আইইডিসিআর জানিয়েছে, ‘কভিড-১৯ রোগী খুব দ্রুত মৃত্যুবরণ করছেন।’ করোনাভাইরাস মহামারীতে সংক্রমণের আতঙ্ক, চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা, মৃত্যুভয়, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, বেকারত্বের কারণে মানসিক সমস্যা বেড়েছে বলেও জানিয়েছে আইইডিসিআর। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জরিপের ফলাফল তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মানসিক রোগের হার ছিলো ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে ৬ দশমিক ৭ শতাংশের মধ্যে বিষণœতা এবং ৪ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষে ভুগেছেন দুশ্চিন্তায়। আইইডিসিআর বলছে, কভিড মহামারীর সময় বাংলাদেশে পরিচালিত কয়েকটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৪৬ শতাংশের মধ্যে বিষণœতা, ৩৩ শতাংশের মধ্যে দুশ্চিন্তার লক্ষণ পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কভিড-১৯ চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীরা চাপ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More