দ্বিতীয় ধাপে ৮ শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে কাল

প্রচার-প্রচারণা শেষ : আজ কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হবে নির্বাচনী সরঞ্জাম
স্টাফ রিপোর্টার: দ্বিতীয় ধাপে আট শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কাল বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এসব ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনী প্রচার শেষ হয়েছে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যেসব এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের চাহিদা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া যেসব জায়গায় ইতোপূর্বে সহিংস ঘটনা ঘটেছে সেখানেও বাড়তি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। আইনি জটিলতার কারণে বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এ ধাপে ৮৩৫টি ভোট হতে পারে। ৮১ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সেখানে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ভোট হবে। আর পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্যদের সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ওইসব ইউনিয়ন পরিষদে ভোটের কোনো দরকার হবে না। আরও জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে মঙ্গলবার মাঠে নেমেছেন বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। মাঠে রয়েছেন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। এসব নির্বাচনের প্রচার মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। আজ কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী মালামাল পাঠানো হবে।
দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, দামুড়হুদা উপজেলার চার ইউপি নির্বাচনে শেষ হয়েছে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে দামুড়হুদা সদর, জুড়ানপুর, কার্পাসডাঙ্গা ও কুড়ুলগাছি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রায় সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচন অফিস। আজ বুধবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হবে নির্বাচনের সরঞ্জাম।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ চার ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ২৩ হাজার ৫শ ৮জন। পুরুষ ৬২হাজার ৪৯০জন ও মহিলা ভোটার ৬১হাজার ১৮জন। দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৩২ হাজার ৭৫১ জন । এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১৬ হাজার ৫শ ৮১জন ও মহিলা ভোটার ১৬ হাজার ১শ ৭০ জন। এ ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১৪টি কেন্দ্রে। জুড়ানপুর ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৩০হাজার ১২৪জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫হাজার ১শ ৫৭জন ও মহিলা ভোটার ১৪হাজার ৯শ ৬৭জন। এ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১২টি কেন্দ্রে। কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ৩৬ হাজার ৯১৬জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৮হাজার ৭শ ৪৪জন ও মহিলা ভোটার ১৮হাজার ১শ ৭২জন। এ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১৫টি কেন্দ্রে। কুড়–লগাছি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২৩হাজার ৫৯৬জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১ হাজার ৯শ ৪২জন ও মহিলা ভোটার ১১হাজার ৬শ ৫৪জন। এ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৯টি কেন্দ্রে। এই চারটি ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৬জন, সাধারণ আসনে পুরুষ ১৭২ জন, সংরক্ষিত আসনে নারী ৫৪জন, প্রিজাইডিং অফিসার ৫০জন, সহকারী পিজাইডিং অফিসার ৩৭৭জন, পোলিং অফিসার ৭৫৪জন।
এই চারটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাচন অফিসার ইসহাক আলী ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ যৌথভাবে জানান, ইতোমধ্যে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ হয়েছে। প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের। আজ দুপুরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে ব্যালট বাক্সসহ অন্যান্য ভোটের সরঞ্জাম। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মাঠে কাজ করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচন অনুষ্ঠান সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চারটি ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ৪ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ । একজন পরিদর্শকের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্য ও আনসার সদস্যের সমন্বয়ে দায়িত্ব পালন করবে ৬টি মোবাইল পাটি ও ৩টি স্টাইকিং ফোর্স। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে একজন এসআইসহ ৫জন পুলিশ ও ১৫জন আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত টিম দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি আরও জানান, দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নে ৭টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। জুড়ানপুর ইউনিয়নে ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নে ১২টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে।
দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লুৎফুল কবির জানান, কুড়–লগাছি ইউনিয়নে ৪টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সবচেয়ে বেশি নজরদারীতে থাকবে বলেও জানান তিনি। একজন পরিদর্শকের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্য ও আনসার সদস্যের সমন্বয়ে দায়িত্ব পালন করবে দুটি মোবাইল পাটি ও ১টি স্টাইকিং ফোর্স। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন এসআইসহ ৫ পুলিশ ও ১৭ আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন কাল বৃহস্পতিবার। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২জন, সংরক্ষিত ৩ নারী আসনের সদস্য পদে ১৮ জন ও ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডেও সদস্য পদে ৩২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে মনির হোসেন ও বিল্লাল হোসেন এ নির্বাচন থেকে সরে দাাঁড়িয়েছেন। এবারের নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রার্থী নেই। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নৌকা প্রতীকের ইসাবুল ইসলাম মিল্টন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হাতপাখা প্রতীকের মাও. মো. সাইফুল্লাহ প্রতিদ্বন্দ্বি করছেন। এ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপির মঈন উদ্দিন ময়েন। আদালত থেকে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তিনি চেয়ারম্যান পদ হারিয়েছেন। এবারের নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হননি।
এদিকে এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরেপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাও. মো. সাইফুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন সদস্য পদপ্রাথী উৎকণ্ঠা ও সংশয় প্রকাশ করেছেন। সংশয় প্রকাশকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সদস্য প্রার্থীও রয়েছেন। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরেপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত করতে তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত ইশাবুল ইসলাম মিল্টন (নৌকা) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাও. মো. সাইফুল্লাহ (হাতপাখা) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সীমান্ত ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২৩ হাজার ৭৪৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ হাজার ৬৬ ও মহিলা ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ৬৮০ বলে উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More