নতুন সূচিতে কতোটা বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে?

স্টাফ রিপোর্টার: দেশে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে নতুন নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকার। যা জুলাই মাসের ১৯ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রথম দিকের পরিকল্পনায় কাক্সিক্ষত ফলাফল না আসায় সরকার এখন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে অফিস সময় পরিবর্তন করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সপ্তাহে দু’দিন বন্ধ ঘোষণা করেছে। যা আগামীকাল থেকে কার্যকর হবে। পরিবর্তিত সময়ে অনুয়ায়ী সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা। ব্যাংকিং কার্যক্রম সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা চলবে। নতুন সূচিতে কতটা বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে তা এখনও হিসাব কষতে পারেনি সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ। নতুন সূচিতে কতটা বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এই বিষয়ে এখনও ক্যালকুলেশন করা হয়নি। নতুন সূচিতে কতটা বিদ্যুৎ সাশ্রয় এবং কি সুবিধা আসবে জানতে চাইলে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ, পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমত উল্লাহ গতকাল বলেন, এটা শুধু ঘোষণা মাত্র। এর কোনো গুরুত্ব খুঁজে পান না তিনি। সরকারের এই ঘোষণাকে প্রতারণা হিসেবে দেখছেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি এটাকে অপ্রয়োজনীয় বলে অ্যাখায়িত করেছেন। তিনি বলেন, শিল্পকারখানার সময়ে অফিস আদালতও খোলা থাকবে। দুপুরে লোডতো হবেই।

এদিকে ঢাকায় প্রতিদিনই লোডশেডিং হচ্ছে। এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টার লোডশেডিং করার কথা থাকলেও দুই থেকে তিন ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। ঢাকার বাইরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন এলাকায় লোডশেডিং এর পরিমাণ আরও বেশি। কোনো কোনো এলাকায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ৭ই আগস্ট এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে লোডশেডিং কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ অন্তত অর্ধেকের বেশি লোডশেডিং থেকে বেরিয়ে আসবে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর হিসাব অনুযায়ী, গত ২১শে আগস্ট কর্মদিবসে সারা দেশে সন্ধ্যায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয় ১৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। এই সময়ে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬৩৮ মেগাওয়াট। তাতে লোডশেডিং ধরা হয় ৫১৮ মেগাওয়াট। প্রাক্কলিত সর্বনিম্ন উৎপাদন ধরা হয় ১০ হাজার ৯৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুতের। যদিও দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে সাড়ে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি।

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, সূচি করে লোডশেডিংয়ের প্রথম ১০/১১ দিন সারা দেশে ১ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়। এ সময়ে রাত ৮টার পর দৈনিক দোকানপাট, শপিং মল বন্ধ করার কারণে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। সরকার চেয়ে ছিল দোকানপাট বন্ধ থেকে ১ হাজার মেগাওয়া বিদ্যুৎ সাশ্রয় করবে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাকি অতিরিক্ত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য সব জায়গায় সমানভাব রুটিন অনুযায়ী এখন লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এই সিস্টেমেই সরকার এগুতে চায় বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

গত ১৮ই জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকের পর দেশে গত ১৯শে জুলাই থেকে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রতিদিন এক সপ্তাহ জোন ভিত্তিক একঘণ্টা করে লোডশেডিং করার কথা বলা হলেও কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশি লোডশেডিং করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকরা। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া রাত ৮টার পর শপিং মলসহ দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কার্যকর এবং উপাসনালয়ে প্রার্থনার সময় ছাড়া এসি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বানও জানানো হয় সরকারের তরফে। রাত ৮টার পর দোকানপাট, মার্কেট, শপিং মল খোলা থাকলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। রাত ৮টা থেকে কোনোরকম দোকানপাট, শপিংমল, আলোকসজ্জা-সব বন্ধ থাকবে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ বিভাগকে বলা হয়েছে, তারা খুব কঠিনভাবে এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবেন। যদি কেউ অমান্য করেন তাদের বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করার কথা বলা হয়েছিল।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More