নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল সারাদেশ

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূ নির্যাতনসহ সারাদেশে অন্যান্য ধর্ষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা মেরেহপুরসহ দেশব্যাপী মঙ্গলবারও বিক্ষোভ হয়েছে। মিছিল সমাবেশ করে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের কঠোর শাস্তির দাবি তোলা হয়। নারী নির্যাতনকারীদের বর্বর ও মানুষরূপী পশু আখ্যা দিয়ে বক্তরা বলেন, সারাদেশে নারী ও শিশুর প্রতি অব্যাহত নিপীড়ন নেমে এসেছে। তারা নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। বক্তারা আরও বলেন, বর্তমানে মা-বোনেরা তার ইজ্জত নিয়ে শঙ্কিত, ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপদ নয়। নিত্যদিন এসব ঘটনা দেখে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ লজ্জিত। দেশব্যাপী ধর্ষণ, নারী নির্যাতন কমাতে সরকারকে ঘরে-বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে, যাতে আর কোন মা বোনকে এভাবে নির্যাতিত হতে না হয়। এছাড়া ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় এই অপরাধ মহামারী আকার ধারণ করেছে বলে মনে করেন বক্তারা। সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণের ঘটনার কারণ যতোটা না জৈবিক বিকার, তারচেয়ে ক্ষমতার বিকার। পাহাড়ে, সিলেটের এমসি কলেজে, নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ও বেগমগঞ্জে যেসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তাতে দেখা গেছে ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্যই জৈবিক বিকার ঘটছে। দেশে গণতন্ত্রহীন ক্ষমতার কারণেই একের পর এক ধর্ষণ ঘটছে। এসব ঘটনায় দোষীদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাসপুরে বাড়িতে ঢুকে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন মামলার প্রধান আসামি বাদলকে ৭ দিন এবং ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগকে ২ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার বিকেলে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মাসফিকুল হক এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্তকারী অফিসার বেগমগঞ্জ থানার এসআই মোস্তাক বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে সোমবার একই আদালত এ মামলায় গ্রেপ্তার মো. আব্দুর রহিম ও রহমত উল্লাহর তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এছাড়া ঘটনার মূল হোতা দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেনকে (২৬) অস্ত্র মামলায় রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তাকে আদালতে প্রেরণ করলে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খাতুনের আদালত দেলোয়ারের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দেলোয়ারের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার মাছের খামার থেকে ৭টি তাজা ককটেল ও ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

চুয়াডাঙ্গায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের শহীদ মিনারের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ছাত্র-ছাত্রীরা। এসময় সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. একেএম সাইফুর রশিদ প্রধান অতিথি হিসেবে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন। ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে জাগো বাংলাদেশ, এখনই সময়’ এ শ্লোগানে প্রতিবাদ ও মানববন্ধ কর্মসূচি পালন করে চুয়াডাঙ্গা জেলার ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ। এসময় দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থী ও সরকারি কলেজের কয়েকশত ছাত্রছাত্রী প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিয়ে বেগমগঞ্জের গৃহবধূ নির্যাতনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ঘটনায় জড়িত আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করেন। এসময় সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. সফিকুল ইসলাম ও ছাত্রনেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

জীবননগর ব্যুরো: ‘সারাদেশে ধর্ষণ রুখে দাও; স্লোগান নিয়ে জীবননগরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইয়্যুথ অ্যাসেম্বলীর উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে বাসস্ট্যান্ড চত্বরে অনুষ্ঠিত কর্মসুচিতে ইয়্যুথ অ্যাসেম্বলীর সাথে স্থানীয় কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও যোগ দেয়। ইয়্যুথ অ্যাসেম্বলির জীবননগর উপজেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক মিথুন মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন শেষে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তারা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ও সিলেটের এমসি কলেজসহ সারাদেশব্যাপী আতঙ্কজনকভাবে ছড়িয়ে পড়া ধর্ষণ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান। বক্তারা নারী ধর্ষণ, নারীর শ্লীলতাহানি, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। ধর্ষকের কঠোর বিচার চেয়ে বক্তব্য রাখেন জীবননগর উপজেলা লোকমোর্চার সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ অমল, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েসা সুলতানা লাকি ও জীবননগর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম আর বাবু। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ইয়্যুথ অ্যাসেম্বলীর জেলা সমন্বয়কারী আব্দুস সালাম, বন্ধু রক্তদান কেন্দ্রের ঐশ^র্য্য সাহা, তালহা ফাউন্ডেশনের জুবায়ের আহমেদ ও এসএসডিওর সভাপতি তৌহিদ হোসেন। উপজেলা লোকমোর্চার সমন্বয়কারী আব্দুল আলীম সজল ও ইয়্যুথ অ্যাসেম্বলীর উপজেলার সমন্বয়কারী আসাদুজ্জামান লিটন কর্মসূচির সমন্বয় করেন।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, ‘সুস্থ সমাজের কীট ধর্ষকের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠো বাংলাদেশ’ এ স্লোগানে ইসলামী যুব আন্দোলন মেহেরপুর জেলা শাখার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মেহেরপুর জেলা ইসলামী যুব আন্দোলনের সভাপতি আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে মেহেরপুর কোর্ট জামে মসজিদ থেকে বের হয়ে মিছিলটি  মেহেরপুর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মেহেরপুর পৌরসভার সামনে পৌঁছে। এ সময় সেখানে সমাবেশ করার   শেষ মুহূর্তে পুলিশ বাধার মুখে পড়ে। র‌্যালি ও সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে মুজিবনগর যুব ইসলামী আন্দোলনের সেক্রেটারি মাওলানা আমিনুল ইসলাম, ইসলামী যুব আন্দোলন মেহেরপুরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুফতি তরিকুল ইসলাম, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ইসলামী যুব আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশ চলাকালে পুলিশের বাধা দেয়ায় তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

এদিকে মেহেরপুর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শহরে মিছিল সমাবেশ করতে হলে পুলিশের পূর্বানুমতি নেয়া লাগে। তাদের পূর্বানুমতি না নিয়ে মিছিল ও সমাবেশ করায় বাধা দেয়া হয়।

অপরদিকে, মেহেরপুর অংকুর সংগঠনের পক্ষ থেকে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে ধর্ষণের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও মৌন প্রতিবাদ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সামনে মৌন প্রতিবাদ করে। পরে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু করে মেহেরপুর পৌরসভা মোমবাতি হাতে র‌্যালি করে। অংকুর সংগঠনের নেতৃত্বে মেহেরপুরের বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা এই মানববন্ধন ও মৌন প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করে।

সারাদেশে ধর্ষণ, নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাদের এ গর্জে উঠা। তারা ধর্ষণ, নির্যাতন-নিপীড়নকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ওই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিল করে। ওই সময় মেহেরপুর জেলা এনসিটিএফ’র সভাপতি এসএম মেহেরাব  হোসেন, অংকুর সংগঠনের সভাপতি নাসিম রানা বাঁধন, সাধারণ সম্পাদক জাবির আল সাবা, জাগো মেহেরপুরের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল আলিম, অংকুর সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক হিমেল বিশ্বাস, সদস্য নির্ঝর, মহতী, বুয়েটের শিক্ষার্থী প্লাবন শেখ, আনিকা আক্তার সহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সমাজে সচেতনতাবৃদ্ধি ও ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করণের দাবিতে মেহেরপুরের গাংনীতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার বেলা এগারটার দিকে গাংনী প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে সচেতন শিক্ষার্থীর ব্যানারে জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনে যোগ দেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্র জাহিদুল ইসলাম আবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ৫ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ধর্ষকের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফাঁসি নিশ্চিত করণ, চলাচলের রাস্তা আলোকিত করতে হবে, সামাজিক মূল্যবোধ ও সেল্ফ ডিফেন্স সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ, পুলিশ প্রশাসনের আরো জোরালো ও সতর্ক অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে, ধর্ষিত নারীর দ্রুত ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন করার জন্য আলাদা ইউনিট স্থাপন এবং সপ্তাহের সাত দিনই খোলা রাখতে হবে। মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুর রউফ ইমন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র শফিউল ইসলাম সজন, লিমন ইসলাম, আসাদুল্লাহ আল গালিব, স্টেট ইউনিভার্সিটির সালেক মাসুদ, ইউডা বিশ^বিদ্যালয়ের আল মুজাহিদ রতন ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের আবির হামজা প্রমুখ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More