পরিচয় মিলেছে সেই ভুয়া নবাব আসকারীর পরকীয়া করে বিয়ে : স্ত্রীর সঙ্গেও প্রতারণা

স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে আসল পরিচয় মিলেছে নবাব খাজা আলী হাসান আসকারী নামধারী ভুয়া নবাবের। তার প্রকৃত নাম কামরুল ইসলাম হৃদয়। বিহারি বংশোদ্ভূত এ ভুয়া নবাবের বাবা আব্দুস সালাম। তিনি এখনো বেঁচে আছেন। হৃদয়ের মায়ের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করে কামরাঙ্গীর চরের একটি ভাড়া বাসায় বাস করছেন। এছাড়া ভুয়া নবাবের সহযোগী হিসেবে গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে আহাম্মদ আলী, রাজা ও রানা তার আপন তিন ভাই। অন্যদিকে মামুন নামে এক ব্যক্তির স্ত্রী মেরিনা আক্তারকে ভাগিয়ে এনে বিয়ে করেছিলেন ভুয়া নবাব। এফিডেভিট করে নবাবপতœীর নাম দিয়েছিলেন হেনা আসকারী। সর্বশেষ ভুয়া নবাব, তার স্ত্রী ও এক শ্যালকের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গায় নতুন একটি প্রতারণা মামলা করেছেন এক ব্যক্তি। বিদেশ পাঠানো ও চাকরি দেয়ার কথা বলে ওই ভুক্তভোগীর কাছ থেকে তারা ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন বলে মামলায় অভিযোগ।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নবাব এস্টেটের সম্পত্তি দখলের পাশাপাশি এ ভুয়া নবাবের টার্গেট ছিলো মাদরাসার শিক্ষক। সহজ সরল মানুষদের মাধ্যমেই বিস্তার করতেন নিজের প্রতারণার জাল। তবে মূল টার্গেট ছিলো নবাব এস্টেটের সম্পত্তি দখল। এ কারণে জন্মনিবন্ধনের ভিত্তিতে তৈরি করেছিলেন পাসপোর্টও। জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্ট দিয়ে তৈরি করেছিলেন জাতীয় পরিচয়পত্র। এর আগে শফিকুল ইসলাম নামে প্রতারণা করেছিলেন এ ভুয়া নবাব। কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভুয়া নবাবের আসল পরিচয় পাওয়া গেছে। রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আসল পরিচয় প্রকাশে অস্বীকার করলেও আমরা তার আত্মীয়স্বজনকে খুঁজে বের করেছি। এখন তার প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া অর্থের খোঁজ করা হচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় চিঠি পাঠানো হয়েছে।’ ভুয়া নবাবের চাচাতো ভাই তাজুল ইসলাম ছাড়াও তার আপন তিন ভাই আহাম্মদ আলী, রাজা ও রানা বর্তমানে সিটিটিসির হেফাজতে। আপন তিন ভাই মুখ না খুললেও তদন্ত সংশ্লিষ্টদের চাচাতো ভাই তাজুল বলেছেন, ভুয়া নবাবের আসল নাম কামরুল ইসলাম হৃদয়। আগে পুরান ঢাকার ২১ নম্বর গৌরসুন্দর রায় লেনে তাদের যৌথ পরিবার একসঙ্গে থাকতো। হৃদয়ের বাবা তার ভাগের সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন। ১০-১২ বছর ধরে তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি আরও জানান, হৃদয়রা সাত ভাই, দুই বোন। হৃদয়ের মা নাইমা খাতুন অনেক আগে মারা গেছেন। হৃদয়ের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম ও এক ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী মারা গেছেন। আমিনুল ইসলাম নামে আরেক ভাই কামরাঙ্গীর চরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন। আর বাকি তিন ভাই আহাম্মদ আলী, রাজা ও রানা তার সঙ্গেই থাকেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, হৃদয়ের সঙ্গে থাকা আপন ভাই আহাম্মদ আলী তার ম্যানেজার হিসেবে, রাজা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা কাজে হৃদয়কে সহায়তা করতেন। আর রানা ছিলেন তার দেহরক্ষী। তবে ভুয়া নবাবপতœী মেরিনার বাবা হাতেম আলী পুলিশকে জানিয়েছেন, আসকারীকে তারা সত্যিকারের নবাবের বংশধর হিসেবেই জানতেন। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর তারা তার আসল পরিচয় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
পরকীয়া করে বিয়ে, স্ত্রীর সঙ্গেও প্রতারণা: ভুয়া নবাব আসকারী ২০১৬ সালে পরকীয়া করে মামুন নামে এক ব্যক্তির স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেন। গ্রেফতারের পর গণমাধ্যমে নবাবের ছবি দেখে কাউন্টার টেররিজম কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন মামুন। তিনি জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে যাত্রীবাহী বাসের মধ্যে আসকারীর সঙ্গে তার পরিচয়। পরে নিকুঞ্জে আসকারীর ‘মি. ক্যাশ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কয়েক দিন চাকরিও করেন। এ সূত্রে ওই বছরই মিরপুরে পয়লা বৈশাখের একটি অনুষ্ঠানে তার স্ত্রী মেরিনা খাতুনের সঙ্গে ভুয়া নবাবকে পরিচয় করিয়ে দেন। ২০১৬ সালে মেরিনা তাকে তালাকনামা পাঠিয়ে আসকারীকে বিয়ে করেন। তাদের একটি পুত্রসন্তানও আছে।
প্রতারণার সহযোগী ঢাকা ডায়াগনস্টিক ও মেডিনেট মেডিকেল: পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতারক আসকারীর প্রতারণার কাজে মোহাম্মদপুরের ‘ঢাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ ও পল্টনের ‘মেডিনেট মেডিকেল’ সহায়তা করতো বলে তারা জানতে পেরেছেন। ইতোমধ্যে ঢাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দুজন কর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতারক আসকারী বিদেশে পাঠানোর জন্য লোক সংগ্রহ করে মেডিকেল করার নামে প্রত্যেকের থেকে অর্থ নিতেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এনে মেডিকেল করানো হতো ঢাকা ডায়াগনস্টিক ও মেডিনেটে। মেডিকেল করার নামে আদায়কৃত অর্থের একটি অংশ পেতেন এই মেডিকেলের কর্মকর্তারা।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More