পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে মামলা : চার জেলায় আসামি ৮ হাজারের বেশি

 

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় নারায়ণগঞ্জে ৫ হাজার, মানিকগঞ্জে ২ হাজার ৫০০, সিরাজগঞ্জে ১১০ এবং নেত্রকোনায় ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপিসহ এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

আমাদের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শহরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষে গুলিতে শাওন প্রধান নিহতের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৫ হাজার ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শাওন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ছোড়া ইট ও আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে গুরুতর জখম হয়ে শাওন মারা যান। বৃহস্পতিবার রাতে শাওনের বড় ভাই মিলন প্রধান বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় এ মামলা করেন। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমীর খসরু সাংবাদিকদের মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, শাওন নবীনগর এলাকার একটি ওয়ার্কশপে মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। বৃহস্পতিবার সকালে শাওন ওয়ার্কসশপের মালামাল কেনার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে শহরের উদ্দেশে রওনা দেন। দুপুর একটার দিকে শাওনের ভাই মিলন মুঠোফোনে খবর পান, শাওনের লাশ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে। পরে মিলন হাসপাতাল গিয়ে তার ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে মিলন মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মী ইট-পাটকেল ও লোহার রড, হকিস্টিকসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় মিছিল করে এবং পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়ে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। শাওন দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় পাকা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ইট-পাটকেল ছোড়েন, ককটেল বিস্ফোরণ করে ও অবৈধ অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করতে থাকলে ওই ইট-পাটকেল ও অবৈধ অস্ত্রের গুলিতে শাওন মাথায় ও বুকে গুরুতর জখম হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। পরে রাস্তায় থাকা লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক শাওনকে মৃত ঘোষণা করেন। শুক্রবার সকালে মামলার বাদী মিলনের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, তার ভাইকে যারা হত্যা করেছে, তিনি তাদের বিচার চান।

আমাদের মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৩ জনের নাম উলেস্নখ করে ২ হাজার ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে থানায় মামলা করেন মানিকগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক মো. আব্দুল লিটন।

এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা জেলা শহরের সেওতা এলাকার শহীদ তজু সড়কে যান চলাচল বন্ধ রেখে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী সেস্নাগান দিতে থাকে। রাস্তা বন্ধ না করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার অনুরোধ করলেও তারা রাস্তার ওপর অবস্থান নেন। একপর্যায়ে তারা পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে লিপ্ত হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বাঁশি বাজিয়ে তাদের ওপর মৃদু লাঠিচার্জ করা হয়। এরপর আসামিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ সরকার ও কনস্টেবল শাহীনসহ ৭ পুলিশ সদস্য আহত হন। তারা ২টি মোটর সাইকেল ভাঙচুরসহ ব্যাপক ক্ষতি করেন। মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রউফ সরকার জানান, আসামিদের মধ্যে প্রথম ৩ জনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অন্যদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আমাদের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার ভোর রাতে সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহ্ আলম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, সহ-সভাপতি অমর কৃষ্ণ দাস, যুগ্ম সম্পাদক রাশেদুল হাসান রঞ্জনসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ১১০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউপির পূর্ব গুপিরপাড়ার খায়রুল ইসলাম (১৯) ও শিয়ালকোল ইউপির সারটিয়া গ্রামের মেহেদী হাসানকে (২৮) আটক করা হয়। পরে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির শুক্রবার বিকালে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আমাদের নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, জেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে ৫ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন খানকে প্রধান আসামি করা হয়। শুক্রবার সকালে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে নেত্রকোনা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) খন্দকার আল মামুন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। খন্দকার শাকের আহমেদ বলেন, মামলায় ৩৩ জনের নামসহ ৪০০-৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের শুক্রবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More