পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলো ভারত : আমদানি করতে বিকল্প বাজারের পরামর্শ

ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়লো পাইকারি পর্যায়ে কেজিতে ১৫ টাকা ও খুচরায় ১০ টাকা

স্টাফ রিপোর্টার: পেঁয়াজ রফতানি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করেছে ভারত। সোমবার ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের মহাপরিচালক অভিৎ জাধব স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরপরই বাংলাদেশের বাজারে কয়েকদিন ধরে বাড়তে থাকা নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম আরেক দফা বেড়েছে। এদিন রাজধানীর খুচরা বাজারে সন্ধ্যায় এক ঘণ্টার ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫-১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আর পাইকারি বাজারে আমদানি করা ৩৫ টাকার পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে ভারতের বিকল্প হিসেবে আটটি দেশের বাজারের সন্ধান করতে পরামর্শ দিয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে- মিয়ানমার (বার্মা), আফগানিস্তান, মিসর, তুরস্ক, চীন, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডস।

এদিকে ভারতের মালদা কাস্টমসের যুগ্ম সচিব হিলি স্থলবন্দরে প্রথমে একটি মেইলের মাধ্যমে জানায়- নীতি পরিবর্তনের কারণে ভারতের মালদা কাস্টমস থেকে পেঁয়াজ রফতানি একদিনের জন্য বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সকাল থেকে বেনাপল বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছে ভারত। বন্দর দিয়ে সকালে ৫০ টন পেঁয়াজ দেশে ঢোকার পর সবকটি বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় দেশটির পেঁয়াজ রফতানিকারকদের সংগঠন। বেনাপোলের ওপারে পেট্রোপোল রফতানিকারক সমিতি সূত্র বলছে, প্রতি টন ৭৫০ ডলারের নিচে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি করবে না ভারত। সর্বশেষ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের পক্ষ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার ঘোষণা দেয়া হয়।

ট্যারিফ কমিশনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ টন। সাধারণত স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ও আমদানির মাধ্যমে পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ করা হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পেঁয়াজের স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় ২৫ লাখ ৫৭ হাজার টন। এর মধ্যে ২২ থেকে ২৫ শতাংশ সংগ্রহকালীন এবং সংরক্ষণকালীন ক্ষতি বাদ দিলে স্থানীয় উৎপাদিত পেঁয়াজ থেকে বাজারে মোট সরবরাহ করা হয় ১৯ লাখ ১৭ হাজার টন। এছাড়া ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, দেশে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার টন। যা ২০১৯ সালে ছিল ৬ লাখ ৭৪ হাজার টন এবং ২০১৮ সালে ৬ লাখ ৯৬ হাজার টন। অর্থাৎ ২০১৯ ও ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২০ সালে যথাক্রমে ৩৫ ও ৩৮ শতাংশ পেঁয়াজ কম আমদানি হয়েছে। ফলে আমদানি কম হওয়ায় এ বছর স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজের ব্যবহার বেশি হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণের শুরু পর এপ্রিল মাসের দিকে বাংলাদেশে সব ধরনের আমদানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। স্বাভাবিক আমদানি না থাকার কারণে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ ব্যবহার হয়েছে বেশি।

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, দেশের প্রধান প্রধান পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা যেমন- পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও মানিকগঞ্জে বর্তমানে পেঁয়াজের মজুদের পরিমাণ ৫ লাখ ২৫ হাজার টন। তবে বাংলাদেশে পেঁয়াজের মৌসুম আসতে এখনও ছয় মাস বাকি। এই সময়ে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে প্রায় ১১ লাখ টন। যা আমদানি করেই মেটাতে হবে। অর্থাৎ মার্চের আগ পর্যন্ত সময়ে আরও প্রায় ৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির দরকার পড়বে।

জানতে চাইলে ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (বাণিজ্য নীতি) শাহ মো. আবু রায়হান আলবেরুনী বলেন, ভারতে স্থানীয় বাজারকে প্রোটেকশন দেয়ার জন্য ভারত পেঁয়াজের রফতানি বন্ধ করে। সেজন্য ভারত বাদেও চীন, তুরস্ক, মিসর, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি দ্রুত শুরু করতে হবে। তিনি বলেন, ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দিয়েছে বিকল্প থেকে পেঁয়াজ আমদানির। একই সঙ্গে টিসিবিও আমদানির প্রস্তুতি নিচ্ছে।

হিলি স্থলবন্দর কাস্টমসের উপকমিশনার সাইফুল আলম বলেন, আজ সকাল থেকে হঠাৎ করে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়ে জেনেছি ভারতে পেঁয়াজের অভ্যন্তরীণ সংকট রয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, পেঁয়াজের দাম একটু বেড়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কয়েকটি টিম আমদানি কার্যক্রম দেখতে বেনাপোল ও হিলিতে যাবে। সেখানে দেখবে আমদানির কি অবস্থা। তবে দাম ভারতেও বেড়েছে, বন্যার কারণে চলাচলে সমস্যা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, টিসিবি বড় পরিসরে নামছে। এছাড়া এবার আমরা সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে সর্বোচ্চ পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করব। এদিকে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছিলো ভারত। সে সময় রাজধানীর খুজরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৫০-২৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More