প্রধান উপদেষ্টার সাথে আইনশৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের বৈঠক : প্রেস সচিব সংবাদ সম্মেলন রোজার আগেই ভোট ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার: লন্ডন বৈঠকের ঘোষণা অনুযায়ী রোজার আগেই (ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বুধবার আইনশৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। নির্বাচন আয়োজন সংশ্লিষ্টদের সব ধরনের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতির নির্দেশ দেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, স্পেশাল অ্যাসিস্ট্যান্স অব হোম অ্যাফেয়ার্স, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সেক্রেটারি, আইজিপি, কোস্টগার্ড প্রধান, বিজিবির ডিজি, আনসারের মহাপরিচালকসহ উচ্চপদস্থরা উপস্থিত ছিলেন। রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ সময় উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, অপূর্ব জাহাঙ্গীর ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।
শফিকুল আলম বলেন, বৈঠকের মূল বিষয় ছিল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি নিয়ে। নির্বাচনের ২টা সম্ভাব্য সময় আগেই জানানো হয়েছে। ১টা হলো-প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে ভাষণে এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। পরবর্তীতে জানানো হয় যদি প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়, সংস্কার হয়ে যায়, তাহলে রমজানের আগেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে গতকাল প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা কিছু জরুরি নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রথম নির্দেশনা ছিল নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক যত প্রস্তুতি, সব আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে। এর মধ্যে অনেক বিষয় আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে ১৭ হাজার নতুন রিক্রুটমেন্ট করা হচ্ছে নির্বাচন সামনে রেখে। তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ যাতে এ সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয় সেই নির্দেশ দিয়েছেন। নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ করার অনেক পাঁয়তারা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগামী মাসগুলোতে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
বৈঠকে জানানো হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আট লাখের মতো সদস্য নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবে। প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুরো আট লাখ সদস্যকেই প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং তা ডিসেম্বরের মধ্যে। এবার অনেক নতুন ভোটার ভোট দেবেন। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে তরুণ ভোটাররা ভোট দিতে পারেননি। প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন ১৮ থেকে ৩৩ বছর বয়সিদের একটা পৃথক ভোটার তালিকা করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখতে। তাদের জন্য কেন্দ্রগুলোতে আলাদা ভোটিং বুথ রাখার বিষয়টা দেখতে বলেছেন।
প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োজিত করা একটা ইস্যু। কোথায় কোথায় নিয়োজিত করা হবে, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কীভাবে নিয়োজিত করা হবে, কতজন আনসার থাকবে, কতজন পুলিশ থাকবে, বিজিবি বা সেনাবাহিনী কীভাবে থাকবে সেগুলো নিয়ে মিটিংয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের আগে ডিসি, এসপি, ওসি, টিএনও- এসব পদে রদবদল করতে বলা হয়েছে।
নির্বাচনকালীন প্রশাসনে রদবদল প্রসঙ্গে ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, লটারির মাধ্যমে রদবদল করা যায় কিনা তা দেখতে বলা হয়েছে। গত সরকারের আমলে একটা উপনির্বাচনে নির্বাচন কমিশন সিসি টিভি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করে পুরো একটা আসনে নির্বাচন বাতিল করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে আইন সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনের এ ক্ষমতাটা খর্ব করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এ ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া যায় কিনা তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তো প্রশিক্ষণ দেয়া হবেই, ভোটারদেরও প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নারী ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারেন তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে যেসব পোলিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের বাদ দিয়ে এবার নির্বাচনি কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া যায় কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আট লাখ সদস্যের মধ্যে ৫ লাখ ৭০ হাজার আনসার ও এক লাখ ৪১ হাজার পুলিশ। বৈঠকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৪৭ হাজারের মতো ভোট কেন্দ্র থাকবে। ১৬ হাজারের মতো ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এই ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করা যায় এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ জন্য পুলিশের শরীরে ক্যামেরা রাখা, প্রত্যেকটি কেন্দ্র সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা, সিসিটিভি মনিটরিং নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। নির্বাচনের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ হয়। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের ভোট বিষয়ে প্রশিক্ষণের অভাব থাকে। তাদের প্রশিক্ষণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগে নির্বাচনের সময় পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীর চার দিনের একটা ডেপ্লয়মেন্ট হতো, এবার সাত দিনের মধ্যে ডেপ্লয়মেন্ট করার কথা বলা হয়েছে, যাতে ভোটের আগে যে কোনো সহিংসতা প্রতিহত করা যায়। নির্বাচনে ভোটারদের যেন ভালো অভিজ্ঞতা হয়। প্রথমবার যারা ভোট দেবেন এটা তাদের জন্য গৌরবের। সে যেন ভালো অনুভব করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, আগে নির্বাচনের সময় ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হতো। এবার নির্বাচনের সময় ইন্টারনেট সচল রাখার ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। অতীতে মিডিয়ার নাম করে দলীয় কর্মীদের নির্বাচনে সম্পৃক্ত করতে দেখা গেছে। এবার প্রকৃত গণমাধ্যমকর্মীরাই শুধু কাজ করতে পারবেন। এ জন্য আগে থেকেই কাজ করতে বলা হয়েছে। গণমাধ্যমের আচরণবিধি আগে থেকে প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে, যাতে গণমাধ্যমগুলো জানতে পারে তাদের এক্সেস কতটুকু। এবারের নির্বাচনে প্রায় দুই লাখ পর্যবেক্ষক সম্পৃক্ত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। পর্যবেক্ষকের নামে যাতে কেউ দলীয় কর্মীকে নির্বাচন কেন্দ্রে পাঠাতে না পারে এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More