প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন : ২০২৩ সালে থেকে হবে বাস্তবায়ন

বাতিল হবে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক সমাপনী ও অষ্টম শ্রেণির জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা : নবম-দশমে কোনো বিভাগ থাকছে না
স্টাফ রিপোর্টার: বড় পরিবর্তন আসছে শিক্ষাক্রমে। শিক্ষাকে আনন্দময় করতে ঢেলে সাজানো হচ্ছে পুরো কারিকুলাম, বাস্তবায়ন করা হচ্ছে একগুচ্ছ নতুন পরিকল্পনা। প্রস্তাবিত কারিকুলামে পরীক্ষার পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়নকেও। ২০২৩ সালে এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে পুরো কারিকুলাম বাস্তবায়ন করবে সরকার। আগামী বছর প্রথমিক ও মাধ্যমিকে ১০০ করে মোট ২০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ শিক্ষাক্রমের পাইলটিং করা হবে। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে কারিগরি ও মাদরাসা পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। নতুন কারিকুলামে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না। ধারাবাহিক মূল্যায়ন করা হবে এসব শ্রেণিতে। এ ছাড়া এসএসসি পরীক্ষার আগে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পাবলিক পরীক্ষা থাকবে না। বাতিল হবে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক সমাপনী ও অষ্টম শ্রেণির জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষাও। বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসা বিভাগের বিভাজন থাকবে না নবম ও দশম শ্রেণিতে। সব শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলকভাবে পড়তে হবে কারিগরির একটি ট্রেড কোর্স। আর একাদশ ও দ্বাদশের ফল সমন্বয় করে এইচএসসির ফল ঘোষণা করা হবে। গতকাল দুপুরে এ কারিকুলামের নানা বিষয় তুলে ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এর আগে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার খসড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হয়।
শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, করোনার কারণে নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন বিলম্বিত হয়েছে। তা ছাড়া এটি আরও আগে শুরু করা যেত। নতুন কারিকুলামে পুরো শিক্ষাক্রম হবে শিক্ষাকেন্দ্রিক ও আনন্দময়। বইয়ের বোঝা কমানো ও শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে চাপ কমানো আমাদের লক্ষ্য। ছাত্র-ছাত্রীরা যেন মুখস্থনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, ক্লাসে পড়ে শিখতে পারে এজন্য এ উদ্যোগ। শিক্ষার্থীদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশের জন্য সৃজনশীল কাজের মধ্য দিয়ে পাঠদান করতে চাই। এখন শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজের চাপ বেশি থাকে। এ চাপ যেন কম থাকে, তারা স্কুলেই যেন পড়াটা শিখতে পারে এজন্য কারিকুলাম করা হবে। তারা নির্দিষ্ট একটি স্তরে যেন নির্দিষ্ট বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করতে পারে। সে পারদর্শিতা অনুযায়ী তাদের সনদ দেওয়া হবে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধের দৃষ্টিভঙ্গি যেন শিখতে পারে এজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক শেষে একটি সনদ পেল, ক্লাস এইট শেষে একটি সনদ পেল তার মানে যে প্রত্যেক ক্ষেত্রে সনদ দিতে হবে। আমি যদি ক্লাস শেষ করি সেখানেও তো সনদ দেয়ার ব্যবস্থা থাকতে পারে। সনদের জন্য শিক্ষা নয়, পারদর্শিতা নিশ্চিত করতে চাই। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা সূত্র জানান, প্রস্তাবিত কারিকুলামে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা হওয়ার সুযোগ নেই। গতকালের সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলামসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী নতুন কারিকুলামে পরীক্ষার পাশাপাশি ক্লাসরুমের ধারাবাহিক মূল্যায়নে গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা না থাকলেও করা হবে ধারাবাহিক মূল্যায়ন। এতে তাদের পরীক্ষাভীতি থাকবে না।
জানা গেছে, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সমাজ ও বিজ্ঞান বিষয়ে শ্রেণিকক্ষে মূল্যায়ন করা হবে ৬০ ভাগ। আর বছর শেষে সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা হবে ৪০ ভাগ। ধর্ম, শারীরিক শিক্ষাসহ অন্য বিষয়গুলোয় কোনো পরীক্ষা হবে না। শ্রেণিকক্ষে শিখনকালীন মূল্যায়ন বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে এসব বিষয়ে। একইভাবে ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ও গণিতেও শ্রেণিকক্ষে শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে ৬০ ভাগ। আর পরীক্ষার মাধ্যমে সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে ৪০ ভাগ। ধর্ম, আইসিটি, শিল্পসংস্কৃতিসহ অন্যগুলোয় পরীক্ষা ছাড়া শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। তবে নবম ও দশম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ও গণিতে শিখনকালীন মূল্যায়ন করা হবে ৫০ ভাগ। সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন হবে ৫০ ভাগ। বাকি বিষয়গুলোয় পরীক্ষা না নিয়ে শ্রেণিকক্ষে শিখনকালীন ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে।
শিক্ষা মন্ত্রলণালয় সূত্র বলছেন, ২০২৩ সালে প্রাথমিকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এ কারিকুলাম চালু হবে। ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে এ কারিকুলামে পাঠদান করা হবে। পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন করা হবে ২০২৫ সালে। ২০২৫ সালের মধ্যে পুরোটা কারিকুলামই বাস্তবায়ন করবে সরকার। এ ছাড়া নবম ও দশমে আলাদা পাঠ্যক্রম থাকবে। এতে থাকবে না বিজ্ঞান, মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষার মতো কোনো বিভাগ বিভাজন। তবে সব ছাত্রছাত্রীকে বাধ্যতামূলকভাবে কারিগরির একটি ট্রেড কোর্স পড়তে হবে। দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপর নেওয়া হবে এসএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতেও থাকবে আলাদা পাঠ্যবই। আর প্রতি বর্ষের শেষে একটি চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়া হবে। একাদশ ও দ্বাদশের ফল সমন্বয় করে দেওয়া হবে এইচএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষার ফল। এ দুই শ্রেণিতে নম্বর বণ্টনেও থাকবে ভিন্নতা। একাদশ ও দ্বাদশে আবশ্যিক বিষয়গুলোয় শ্রেণিকক্ষে শিখনফলের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে ৩০ ভাগ। পরীক্ষার মাধ্যমে সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে ৭০ ভাগ। ৭০ ভাগের ওপরই ছাত্রছাত্রীদের পাবলিক পরীক্ষা দিতে হবে। ঐচ্ছিক বিষয়গুলোর সবকটিতেই শ্রেণিকক্ষে শিখনফলের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন ১০ বিষয় : জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সূত্রমতে প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হবে। এরপর একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শাখা পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হবে। বর্তমানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কিছু অভিন্ন বই পড়তে হয় এবং নবম শ্রেণিতে গিয়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা এসব শাখায় ভাগ হয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত যে ১০টি বই পড়ানো হবে সেগুলো হচ্ছে- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More