বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মদদ দিয়েছিলো জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত খুনিদের জিয়া সব ধরনের মদদ দিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, খুনিরা নিজেই সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছে যে, জিয়াউর রহমানের মদদেই তারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। শুধু জিয়াই নয়, তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও খুনিদের মদদ দেয়াসহ একই কাজ করেছে। তার স্বামী (জিয়াউর রহমান) দিয়ে গেছেন জাতির পিতার হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি, আর তিনি (খালেদা জিয়া) এসে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে তাদের ইনডেমনিটি দিয়ে গেছেন। রোববার বিকেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে সভাপতির বক্তব্যে ১৫ আগস্টের ভয়াল হত্যাকা-ের কথা স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। আবেগতাড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নস্যাৎ করে দিতেই বঙ্গবন্ধুসহ আমাদের পরিবারের সব সদস্যকে হত্যা করা হয়। খুনি রশীদ, ফারুক, হুদা, ডালিম, নূর, শাহরিয়ার, মাজেদ- এরা সবাই সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলো। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করতে কে তাদের মদদ দিয়েছিলো? উৎসাহিত করেছিলো?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষ আমরা উদযাপন করবো, কত আশা আমাদের ছিলো। করোনাভাইরাসের জন্য যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবে পারিনি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য- সারা বাংলাদেশে বৃক্ষরোপণ করা এবং রক্তদান কর্মসূচি পালন করা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। আমি জানি, এবার বন্যায় অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীভাঙনে তারা আক্রান্ত। এর জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। একটি মানুষ যেনো গৃহহারা না থাকে, সেজন্য যা করার তা আমরা করে যাব। কারণ জাতির পিতার স্বপ্নই ছিলো বাংলাদেশের মানুষ অন্ন পাবে, বস্ত্র পাবে, উন্নত জীবন পাবে। সেই উন্নত জীবন দেয়ার জন্য যা যা করণীয়, আমরা তা করবো। আজ জাতির পিতার মৃত্যুবার্ষিকীতে দাঁড়িয়ে চলুন আমরা সেই প্রতিজ্ঞা নিই যে- পিতা তোমায় কথা দিলাম, তোমার বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে আমরা হাসি ফোটাবো। এই বাংলা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলবে। এই বাংলার মানুষ উন্নত জীবন পাবে- এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা, এটাই আমাদের শপথ।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে জিয়াউর রহমান জড়িত থাকার নানা তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুরই ক্যাবিনেটের মন্ত্রী বেইমান মোশতাক ও জিয়াউর রহমানরা জড়িত ছিলো। অথচ এই জিয়াউর রহমানকে মেজর থেকে মেজর জেনারেল পর্যন্ত পদোন্নতি দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুই। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বিবিসিতে সাক্ষাৎকার দিয়ে খুনি কর্নেল রশীদ ও ফারুক নিজেরাই বলেছে যে, জিয়াউর রহমানের মদদেই এই হত্যাকা- (বঙ্গবন্ধু) ঘটাতে তারা সক্ষম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর নিয়ম ভেঙে বেইমান মোশতাককে রাষ্ট্রপতি করা হয়। আর রাষ্ট্রপতি হয়েই মোশতাক জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান বানায়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না থাকলে কেন জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান হিসেবে মোশতাক বেছে নেবে? বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সব ধরনের মদদ দিয়েছিলো এই জিয়াই। তিনি বলেন, বেইমান-মীরজাফররা বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে না। মীরজাফরও তিন মাসের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেনি, খুনি মোশতাকও পারেনি।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি জারিসহ জিয়াউর রহমানের বিভিন্ন ধরনের কর্মকা-ের উদাহরণ তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বর জেল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত খুনিদের বিদেশে পাঠানো, বিদেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলো এই জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের যাতে বিচার না হয়, সেজন্য ইনডেমনিটি জারি করা হয়েছিলো। আমাদের বিচার চাওয়ার কোনো অধিকার ছিলো না, সেটি পর্যন্ত কেড়ে নেয়া হয়েছিলো। তিনি বলেন, সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই শেষ হয়নি, বঙ্গবন্ধু পরিবারের আর কে কে বেঁচে আছে, তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা কর হয়। ভয়ে আমাদের পরিবারের যারা বেঁচে ছিলেন, তারা অনেকেই ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ নিষিদ্ধ করা হয়, কেউ নাম নিলে তাকে খুঁজে পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। রাষ্ট্রপতির মেয়ে হয়েও আমাদের (শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা) নাম-পরিচয় গোপন করে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছে। আর খুনিরা বিভিন্ন দূতাবাসে আরাম-আয়েশে জীবন কাটিয়েছে। সেই দৃশ্যগুলোও আমাদের দেখতে হয়েছে।

জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিলো বলেই ব্রিটিশ এমপি টমাস উইলিয়ামের নেতৃত্বে গঠিত আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটিকে বাংলাদেশে আসতে ভিসা দেয়া হয়নি উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৮০ সালের ১৬ আগস্ট লন্ডনে আমরা শোকসভা করি। সেখানে ব্রিটিশ এমপি টমাস উইলিয়ামকে প্রধান করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের জন্য একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন করা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, টমাস উইলিয়ামকে তদন্তের জন্য ঢাকায় পাঠানোর। কিন্তু তখন রাষ্ট্রপতি পদে থাকা জিয়াউর রহমান টমাস উইলিয়ামকে ঢাকায় আসতে ভিসা দেয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিলো বলেই ভীত হয়ে ওই তদন্ত কমিশনকে ঢাকায় আসার ভিসা দেয়নি এই জিয়া।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More