বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদেরও বের করা হবে: প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার জন্য জিয়াউর রহমানকে আবারও অভিযুক্ত করে বলেছেন, ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কারা ছিল তা একদিন বের হবে। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা নয়, একটি আদর্শকে হত্যা করা হয়েছে। এদেশের বিজয়কে নস্যাত্ করা এবং একটি জাতির মর্যাদা নষ্ট করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষ্যে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে কৃষক লীগ আয়োজিত রক্ত ও প্লাজমা দান কর্মসূচির উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ধানমন্ডি ৩২নম্বরে অবস্থিত জাতির পিতা স্মৃতি জাদুঘরসংলগ্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত মূল আয়োজনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। এ সময় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিল।
এ সময় বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রসঙ্গ তুলে তিনি আরো বলেন, ‘হত্যার বিচার হয়েছে। তবে এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে কারা ছিল একদিন সেটাও আবিষ্কৃত হবে। কিন্তু আমাদের কাজ একটা ছিল প্রত্যক্ষভাবে যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের বিচার করা।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা এই দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা ছিল মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করা। উন্নয়ন করাটাকে আমি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। তাই পেছনে কে ষড়যন্ত্র করছে সেদিকে না গিয়ে আমার প্রথম কাজ হচ্ছে এই দেশের ক্ষুধার্ত ও দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ও জীবনমান উন্নয়ন। এ সময় জাতির পিতাকে হত্যার সঙ্গে জড়িত আত্মস্বীকৃত খুনি ফারুক-রশিদের বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাত্কারের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাবেক সেনাশাসক জিয়াউর রহমান নেপথ্য শক্তি হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন এবং ধারাবাহিকভাবে খুনিদের পুরস্কৃত করে জিয়া, এরশাদ এবং খালেদা জিয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। তিনি বলেন, ফারুক-রশিদ বিবিসিকে যে ইন্টারভিউ দিয়েছে সেখানে তারা বলেছিল, জিয়াউর রহমান তখন উপসামরিক প্রধান ছিল। তার সঙ্গে তাদের (খুনিদের) যোগাযোগ ছিল। জিয়া বলেছিলেন, তারা সফল হতে পারলে তাদের সঙ্গে থাকবেন। জিয়ার পথ ধরেই জেনারেল এরশাদ ও খালেদা জিয়া এই খুনিদের বাংলার মাটিতে রাজনীতি করার অধিকার দেন এবং পৃষ্ঠপোষকতা করেন।
জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে খুনীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘দেশের নাগরিক হিসেবে পিতৃহত্যার বিচার চাওয়ার তাদের কোনো পথ ছিল না। উপরন্তু খুনিদের পুরস্কার হিসেবে জিয়াউর রহমান বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি, ব্যবসার সুযোগ করে দিয়ে বিপুল অর্থের মালিক করে দেয়।’ কাজেই মুশতাক-জিয়ার সখ্যতা এবং তাদের এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা স্পষ্ট উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত হয়ে যায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়ার পথ ধরে আমরা দেখেছি জেনারেল এরশাদ এই খুনীদের রাজনীতি করার, রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেয় এমনকি ভোট চুরি করে পার্লামেন্টেরও মেম্বার করে।’
তা থেকে একধাপ উপরে গিয়ে খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করে খুনি রশিদকে পার্লামেন্টে বিরোধী দলের নেতার চেয়ারে বসায় এবং আরেক খুনিকে পার্লামেন্টে সদস্য করে তাদেরকে পুরস্কৃত করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৯৬ পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে জাতির পিতা হত্যাকা-ের বিচারের রায় ঘোষণার দিনেও হরতাল ডেকে সে সময় বিরোধী দলে থাকা খালেদা জিয়া বিচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন। যদিও সেই বিচারের রায় হয়েছিল এবং তার সরকার দুজন খুনিকে আমেরিকা ও থাইল্যান্ড থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু পুনরায় খালেদা জিয়া ২০০১ সালে সরকারে এসে সেই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি দিয়ে আবারও তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে।’
বাংলাদেশের মানুষের ওপর জাতির পিতার অগাধ বিশ্বাসের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি সব সময় বিশ্বাস করতেন, পাকিস্তানিরা যখন চেষ্টা করে তাকে হত্যা করতে পারেনি। বাঙালিরা কেন মারবে। তিনি এ প্রসঙ্গ জাতির পিতার একটি কথার উদ্ধৃতি দেন- জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘এরা আমরা সন্তানের মতো। আমাকে কেন মারবে।’ জাতির পিতার সেই বিশ্বাসে চরম আঘাত দিয়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
যে ৭ মার্চের ভাষণ এক সময় নিষিদ্ধ ছিল সেই ভাষণ আজ বিশ্বের সবচেয়ে উদ্বুদ্ধকারী একটি ভাষণ হিসেবে বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান করে নিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতাসহ ১৫ আগস্টের শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং শহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলি, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More