বিদায়ের আগে ভোট চ্যালেঞ্জের মুখে ইসি

স্টাফ রিপোর্টার: বিদায়ের পথে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন। পাঁচ মাস মেয়াদ রয়েছে এই নির্বাচন কমিশনের। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি বিদায় নেবেন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। তার পরই সাংবিধানিক সংস্থাটিতে দায়িত্ব নেবেন নতুন ব্যক্তিরা, যাদের অধীনে হবে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন। তবে বিদায়ের আগে নির্বাচনী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে বর্তমান কমিশন। গত সোমবার ইসির ৮৪তম সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব নির্বাচন শেষ করার। এক্ষেত্রে সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন হবে ৪ সেপ্টেম্বর। এ ছাড়া কুমিল্লা-৭ আসনে উপনির্বাচন, স্থগিত ১৬৭ ইউপি, দেশব্যাপী ইউপি, নারায়ণগঞ্জ সিটি, জেলা পরিষদ ও ৯ পৌরসভার নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে করতে চায় ইসি। নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়ন পরিষদ, নির্বাচনী উপযোগী পৌরসভা, জেলা পরিষদ ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠান কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এইসব নির্বাচন নিয়ে সাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে কমিশনকে। এর মধ্যে রয়েছে- (১) করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কম সময়ে এতো বেশি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। (২) এই সব নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। (৩) বিদায়ের আগে ভোটারের আস্থা অর্জন করে ভোট কেন্দ্রে ফেরানো। (৪) নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে সুনামের সঙ্গে বিদায় নেয়া। (৫) নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসএসসি ও ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার কথা বলছে সরকার। তবে এই দুই পরীক্ষার মধ্যে সারাদেশে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা কঠিন হবে। কেননা সব স্কুল-কলেজগুলো ভোট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে ইসি। (৬) পার্শ্ববর্তী দেশে আগামী অক্টোবরে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসার সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। তাই এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে পারে। তাই অক্টোবর-নভেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠান চ্যালঞ্জ হবে। সেই সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠান দেশের মানুষকে করোনা ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। (৭) দীর্ঘ দিন বিভিন্ন স্থানীয় সরকারের নির্বাচন বন্ধ থাকায় জেলা পরিষদের ভোটার তালিকা তৈরি করা নিয়েও জটিলতা দেখা দেয়ার কথা বলছেন ইসির নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন কমিশন গঠনের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির; সংবিধানে বলা আছে, একটি আইনের অধীনে তিনি এই নিয়োগ দেবেন। তবে বিগত সময়ের মতো এবারে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আভাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য আগামী জানুয়ারিতে সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। এরপরে গঠন হবে নতুন নির্বাচন কমিশন। তবে সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশন ঠিক করে দেবে না, তারা রাষ্ট্রপতিকে সহায়তা করতে কিছু নাম বাছাই করে দেবে। রাষ্ট্রপতি তা থেকে নিয়োগ দেবেন। স্বাধীনতার পর ১২ জন সিইসি ও ২৭ জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পেয়েছেন। এর মধ্যে সিইসি পদে বিচারপতি এ কে এম নুরুল ইসলাম সাড়ে সাত বছর ছিলেন।
যে ভাবে গঠন হয় হুদা কমিশন : নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করার পরে ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের হাতে সেই তালিকা তুলে দেয় সার্চ কমিটি। এরপরে ওই দিন নতুন ইসি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন সিইসি কে এম নূরুল হুদাসহ নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সদস্যরা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন এ কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। সেই হিসাবে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হবে।
ডিসেম্বরে নারায়ণগঞ্জ সিটি ভোট: গত ১১ আগস্ট থেকে নির্বাচন উপযোগী হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। ইসি জানিয়েছে, ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর এই সিটিতে ভোট গ্রহণ হয়। প্রথম সভা হয় ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসাবে মেয়াদ শেষ হবে (প্রথম সভা থেকে পরবর্তী ৫ বছর) ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে সিটি নির্বাচন করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ বিষয়ে ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে নারারণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউপি, জেলা পরিষদসহ অন্যান্য নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন : গত ২৮ জুলাই সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর এক দিন আগে আদালতের আদেশে ভোট স্থগিত করা হয়। ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, আদালতের বাধ্যবাধকতা মেনে সিলেট-৩ উপনির্বাচন ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে করতেই হবে।
স্থগিত ইউপি ও পৌরসভার ভোট : করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে সবশেষে ২১ জুন ভোট প্রথম ধাপে ২০৪ ইউপির নির্বাচন হয়। এ সময় ১৬৭ ইউপির নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়। সোমবার কমিশন সভায় সব আটকে থাকা ভোট ডিসেম্বরের মধ্যে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও নোয়াখালীর ১৬৭ ইউপি এবং ৯টি পৌরসভা।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More