বিধিনিষেধের মেয়াদ ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারী

সমাবেশে ১০০-এর বেশি লোক নয় : লাগবে টিকা সনদ
স্টাফ রিপোর্টার: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান এবং জনসমাগমে বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ল আরও দুই সপ্তাহ। সরকার চলমান বিধিনিষেধ ২১ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়িয়েছে। করোনা সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিদ্যমান বিধিনিষেধের সঙ্গে নতুন দুটি বিষয় যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-সব স্কুল-কলেজ ও সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ থাকবে। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ওপর বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। বিধিনিষেধ মোতাবেক এসব অনুষ্ঠানে ১০০ জনের বেশি মানুষের সমাবেশ করা যাবে না। যারা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তাদের অবশ্যই করোনা টিকার সনদ অথবা পিসিআর টেস্টের নেগেটিভ সনদ থাকতে হবে। গতকাল এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এতে বলা হয়, করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কভিড-১৯)-এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও বাংলাদেশে এ রোগের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের জারি করা সব বিধিনিষেধ ও নির্দেশনার সঙ্গে নিম্নবর্ণিত শর্ত সংশোধন করে সার্বিক কার্যাবলি চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো। এই বিধিনিষেধ আগামী ৭ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত বহাল থাকবে। এদিকে অর্ধেক জনবল দিয়ে ব্যাংক চালানোর সময়সীমাও ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আগের সব বিধিনিষেধ বহাল থাকবে। আগে জারি করা বিধিনিষেধের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৬ ফেব্রুয়ারি।
নতুন দুটি বিধিনিষেধ দিয়ে আদেশে বলা হয়- উন্মুক্ত স্থানে ও ভবনের ভেতরে সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ১০০-এর বেশি জনসমাবেশ করা যাবে না। এসব ক্ষেত্রে যারা যোগ দেবেন তাদের অবশ্যই কভিভ টিকা সনদ অথবা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর সার্টিফিকেট আনতে হবে। এ ছাড়া সব স্কুল, কলেজ এবং সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কক্ষে পাঠদান বন্ধ থাকবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। নতুন ধরন ওমিক্রনসহ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ১০ জানুয়ারি সারা দেশে বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। যা ১৩ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। তখন ১১টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে ২১ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারি থেকে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্ধেক জনবল নিয়ে সরকারি-বেসরকারি অফিস পরিচালনার নির্দেশনা দেয় সরকার। নির্দেশনাগুলো হলো- ১. দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে ২. অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারা দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে ৩. রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা টিকার সনদ প্রদর্শন করতে হবে ৪. ১২ বছরের ঊর্ধ্বের কোনো ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকার সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে না ৫. স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দরসমূহে স্ক্রিনিং-এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। পোর্টসমূহে ক্রুদের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতেও দেশের বাইরে থেকে আসা ট্রাকের সঙ্গে শুধু ড্রাইভার থাকতে পারবে। কোনো সহকারী আসতে পারবে না।
বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে ৬. ট্রেন, বাস ও লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সর্বপ্রকার যানবাহনের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে কভিড-১৯ টিকার সনদধারী হতে হবে ৭. বিদেশ থেকে আগত যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কভিড ১৯ টিকার সনদ প্রদর্শন এবং র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে ৮. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে দেশের সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন ৯. সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার ও উদ্যোগ নেবে। এক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা গ্রহণ করবে ১০. কভিড আক্রান্তের হার ক্রমবর্ধমান হওয়ায় উন্মুক্ত স্থানে সর্বপ্রকার সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা সমাবেশসমূহ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে এবং ১১. কোনো এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে পরীক্ষা : আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা চলবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ দফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More