বিশ্ব ক্যান্সার দিবস আজ

 

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের ক্যান্সার চিকিৎসার সীমিত সুযোগের মধ্যে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। ক্যান্সার চিকিৎসায় সীমিত সুযোগ থাকার কারণে অনেকে বিদেশে যাচ্ছে চিকিৎসার জন্য। ফলে প্রতি বছর দেশ থেকে কয়েক শ’ কোটি টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে। প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ক্যান্সার দিবসটি পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে এবারের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে-‘ক্যান্সার সেবায় বৈষম্য দূর করি’। মারাত্মক ও প্রাণঘাতী এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করে এ রোগে আক্রান্তদের সহায়তা সবাইকে উৎসাহিত করাই প্রতি বছর দিবসটি উদযাপনের উদ্দেশ্য।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বছরে দেড় লাখ মানুষ আক্রান্ত হয় ক্যান্সারে। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) রিপোর্ট অনুযায়ী বছরে এক লাখ আট হাজার ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন। তাদের বেশির ভাগই যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে মারা যান। ফুসফুস ক্যান্সারেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়। ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্তদের একটি অংশ ধূমপান ও জর্দায় আসক্ত। ২০১৮-২০২০ সময়ের মধ্যে ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে প্রায় ৩৬ হাজার রোগীকে পরীক্ষা করে সবচেয়ে বেশি ফুসফুস ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী পেয়েছে। ক্যান্সার হাসপাতালের গবেষণা অনুসারে, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে পুরুষদের ফুসফুসের ক্যান্সার আক্রান্তের হার ছিলো সবচেয়ে বেশি ২৬.৬ শতাংশ। অন্য দিকে নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৯.৩ শতাংশ ছিল স্তন ক্যান্সার আক্রান্ত। জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতালে ২০১৮ থেকে ২০২০ সময়ের মধ্যে নিবন্ধিত রোগীদের ১৯ হাজার ৫৪৬ জন (৫৫ শতাংশ) পুরুষ ও ১৬ হাজার ১৮৭ জন (৪৫ শতাংশ) নারীকে ক্যান্সার আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শীর্ষ ১০ ক্যান্সারের মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সার ১৭.৪ শতাংশ, স্তন ক্যান্সার ১৩.৪ শতাংশ, জরায়ুমুখ ক্যান্সার ১০.৯ শতাংশ, খাদ্যনালীর ক্যান্সার ৪.৯ শতাংশ, পাকস্থলীর ক্যান্সার ৪.৩ শতাংশ, লিভার ক্যান্সার ৩.৯ শতাংশ, লসিকা গ্রন্থির ক্যান্সার ৩.৮ শতাংশ, মলাশয় ক্যান্সার ৩.১ শতাংশ, গালের ভেতরে ক্যান্সার ৩ শতাংশ ও পিত্তথলির ক্যান্সার ১.৫ শতাংশ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসায় রয়েছে বিশাল বৈষম্য। সরকারিভাবে দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার চিকিৎসা দেয়া হয় মহাখালীর জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। তবে এখানেও সীমিত পরিসরে ক্যান্সারের বিভিন্ন চিকিৎসা হয়। এই হাসপাতালে থেরাপি দেয়ার ৬টি মেশিনের মধ্যে ৫টি মেশিনই দীর্ঘ দিন থেকে অকার্যকর হয়ে আছে। ফলে রোগীদের বাধ্য হয়ে বিদেশ চলে যেতে হচ্ছে, না হয় দেশের বেসরকারি হাসপাতালে বেশি ব্যয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার বৈষম্য সম্পর্কে অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, সরকারি হাসপাতালে রোগীর প্রচ- ভিড়ের কারণে সব ক্যান্সার আক্রান্তরা চিকিৎসার সমান সুযোগ পায় না। ক্যান্সার চিকিৎসা করতে সময় লাগে। ক্যামোথেরাপি নিতে কমপক্ষে দেড় মাস সময় লাগে, রেডিও থেরাপি দিতে লাগে এক বছর। এই দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের গরিব মানুষ ঢাকায় এসে ক্যান্সার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারে না। ডা: হাবিবুল্লাহ তালকুদার বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসার ওপর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে কোনো গবেষণা নেই। তবে আসিয়ান জোটের দেশগুলোতে একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, আসিয়ান জোটের সদস্য দেশগুলোতে ক্যান্সার চিকিৎসার পরবর্তীতে ৭৫ শতাংশ রোগী মারা যায় এবং তারা সবাই পরে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়েন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More