বড় পরিবর্তন ছাড়াই পাস হচ্ছে বাজেট

স্টাফ রিপোর্টার: বড় কোনো পরিবর্তন ছাড়াই পাস হচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট, যাতে প্রায় পৌনে ছয় লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের ফর্দ ধরা হয়েছে। আজ সোমবার অর্থবিল পাস হবে। কাল মঙ্গলবার পাস হবে মূল বাজেট। ১ জুলাই বুধবার থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর। করোনাভাইরাস মহামারীতে দেশ তথা বিশ্ব অর্থনীতিতে নজিরবিহীন সঙ্কটের মধ্যে একেবারেই ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এবারের বজেট উপস্থাপন করা হয়েছিলো। সেই বাজেট পাসের আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, “করোনা ভাইরাসের এই আতঙ্কের সময় বাজেটের উপর সংসদে খুব বেশি আলোচনার সুযোগ হয়নি। তারপরও যে বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে বাজেট পাস হবে। “বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসবে না।” তবে বাজেট প্রস্তাবে মোবাইল সেবার উপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার যে প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী করেছিলেন, তা কমতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কথায়। গত ১১ জুন এই বাজেট প্রস্তাব জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। কিছু জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ইতোমধ্যে মতামত দিয়েছেন। সোমবার আরও কয়েকজন বাজেটের উপর আলোচনা করবেন। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেটের উপর আলোচনা করবেন। প্রথা অনুযায়ী, সবার আলোচনা বা মতামতের ভিত্তিতে বাজেটে কিছু সংযোজন-বিয়োজন আনা হতে পারে। অর্থবিল পাসের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবিত বাজেটের উপর বক্তব্য রাখবেন। তারপর অর্থমন্ত্রী বাজেটের উপর সমাপনী বক্তব্য দেবেন এবং অর্থবিল পাসের জন্য উত্থাপন করবেন। কোনো সংশোধনী আনতে হলে অর্থমন্ত্রীর সমাপনী বক্তব্য এবং অর্থবিল পাসের আগে প্রধানমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ আমলে নিয়ে সেসব বিষয়ে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যদের এবার অধিবেশনে যোগ দিতে নিরুসাৎহিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কম সংখ্যক সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে অধিবেশন চলেছে। সাংবাদিক-অতিথিদের অধিবেশনে ঢোকার অনুমতি ছিল না। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, জাসদের হাসানুল হক ইনুসহ কয়েকজন সংসদ সদস্য প্রস্তাবিত বাজেটের উপর আলোচনা করেন। শিক্ষামন্ত্রী কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়াকে ‘অনৈতিক’ বলেছেন। মোবাইলে বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক কমানোর দাবি করেন তিনি। হাসানুল হক ইনুও মোবাইলে সম্পূরক শুল্ক কমানোর দাবি জানান। স্বাস্থখাতে বরাদ্দ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রস্তাবিত বাজেটের উপর মাত্র ৩ ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে এবারের বাজেট অধিবেশন ‘নিস্তেজ’ ছিলো বলা যায়। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় অধিবেশন শুরু হবে। কয়েকজন সংসদ সদস্যের বক্তব্যের পর বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বক্তব্য রাখবেন। এরপর সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বাজেটের উপর সমাপনী বক্তব্য দেবেন এবং অর্থবিল ২০২০ পাসের জন্য উত্থাপন করবেন। তবে সংসদের বাইরে প্রতিবারের মতো এবারও প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছে, সঙ্কটকালের বাজেট প্রস্তাবে ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি আর ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের বড় লক্ষ্যকে নিয়ে। অর্থনীতিবিদরা এই দুই লক্ষ্যকে ‘অবাস্তব’ বললেও মুস্তফা কামাল তার সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়েছেন নিজস্ব ভঙ্গিতে। পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটের ৬৬ শতাংশ অর্থ রাজস্ব আয় থেকে যোগানোর পরিকল্পনার ব্যাখ্যায় বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “টাকা কোথা থেকে আসবে সে চিন্তা আমরা করিনি। “মানুষকে বাঁচাতে হবে, কমর্সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামের অর্থনীতিসহ সামষ্টিক অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করতে হবে। অর্থ যাই লাগবে সেটা জোগাড় করা হবে।” মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে ঢালাওভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া নিয়েও বেশ আলোচনা হয়েছে। মহামারীর এই সময়ে যখন পারস্পরিক যোগাযোগ, লেখাপড়া ও ব্যবসা-বাণিজ্য মোবাইলে কথা বলা ও অনলাইনভিত্তিক হয়ে উঠছে, সেই সময়ে এই সেবার ওপর কর বৃদ্ধি গ্রাহকের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১১ জুন অর্থমন্ত্রী তার বাজেট প্রস্তাবে মোবাইল সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন। এর ফলে মোবাইল ফোনে কথা বলা, এসএমএস পাঠানো এবং ডেটা ব্যবহারের খরচ বেড়েছে। বাজেটে ঘোষণা আসার পর এনবিআর এসআরও জারি করায় ওইদিন মধ্যরাত থেকেই বাড়তি হারে টাকা কাটা শুরু করেছে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। সংসদের ভেতরে-বাইরে সব জায়গাতেই এ বিষয়টি নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, অর্থমন্ত্রী বাজেটে যে সব কর প্রস্তাব করেছেন তার প্রায় সবই থাকছে। পরিবর্তন আনা হতে পারে কেবল দু-একটি বিষয়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, “করোনা ভাইরাসের মহামারীকালে দেশের মানুষকে স্বস্তি দিতে নতুন বাজেটে অনেক ছাড় দেয়া হয়েছে। সে কারণে সংশোধনী প্রস্তাবে তেমন কোনো বড় পরিবর্তন আনা হবে না। “তবে মোবাইল সেবায় কর বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করেননি। মূলত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাড়তি কর প্রত্যাহারের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।” অর্থ বিল পাসের মধ্য দিয়ে নতুন বাজেটের কর প্রস্তাবসমূহ কার্যকর হয়। এফবিসিসিআইসহ ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপেক্ষিতে আয়কর ও আমদানি পর্যায়েও কয়েকটি কর প্রস্তাবের সংশোধনী আনা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More