ভারতীয় ২৩ সেনা নিহতসহ গুরুতর আহত ১১০ : পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি

চীন প্ররোচনা দিলে যে কোনো পরিস্থিতিতে ভারত উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত

মাথাভাঙ্গা মনিটর: সীমান্ত পর্বতমালা লাদাখে গত সোমবার গভীর রাতে ভারত ও চীনা সেনাবাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘাতের পর উভয়পক্ষে বহু হতাহতের ঘটনায় চীনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিবৃতি দিয়েছেন। পাশাপাশি ভারতকে হুঁশিয়ার করে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সংঘাতের পর ওই সীমান্তে দুপক্ষই পূর্ণ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। নতুন করে আর কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। দিল্লির পক্ষ থেকে গতকাল বলা হয়েছে, লাদাখ সীমান্তে চীনের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১১০ জন ভারতীয় সেনা গুরুতর আহত হয়েছেন। নিহত সেনার সংখ্যা বেড়ে ২৩ জনে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে চীনা সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অবশ্য হতাহতের বিষয়ে কোনো বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি। সরকারিভাবে ক্ষয়ক্ষতির কথাও জানানো হয়নি। তবে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সে দেশেরও বেশ কিছু সেনার মৃত্যু হয়েছে। জানা গেছে, সোমবার গভীর রাতে লাদাখের সুউচ্চ পর্বতমালায় গালওয়ান নদীর পূর্ব পাড় ধরে পেট্রোলিংয়ে বেরিয়েছিল ভারতীয়
সেনাবাহিনীর বিহার রেজিমেন্টের একটি পেট্রোল টিম। তাদের সঙ্গেই চীনা সেনাদের তীব্র সংঘাত হয়। গত প্রায় এক মাস ধরে এই অঞ্চলটি নিয়ে বিতর্ক চলছে। ভারতের অভিযোগ, লাইন অফ কন্ট্রোল উপেক্ষা করে তাদের সীমান্তে ঢুকে পড়ে চীনা সেনারা। বেইজিংয়ের পাল্টা অভিযোগও একই রকম। এ নিয়ে সীমান্তে ভারত এবং চীনের সেনারা একাধিকবার হাতাহাতিতেও জড়িয়েছে। দুপক্ষই সেনা এবং অস্ত্র মজুদ করেছিলো সীমান্তের খুব কাছে। তারই জেরে গত সপ্তাহে দুপক্ষের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকও হয়। তবে সোমবার রাতের ঘটনা সেই পুরো প্রক্রিয়া ভেস্তে দেয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক আহত জওয়ান গণমাধ্যমকে বলেন, মাঝ রাতে পেট্রোলিংয়ের সময় বিহার রেজিমেন্ট দেখতে পায় গালওয়ান নদীর পশ্চিম প্রান্তে লাইন অফ কন্ট্রোল পার করে পেট্রোল পয়েন্ট ১৪ তে তাঁবু তৈরি করেছে চীনের পিপলস আর্মি। ওই এলাকাটি ভারতের। ফলে পেট্রোল পার্টি দ্রুত সেখানে পৌঁছায় এবং তর্কাতর্কি শুরু হয়। এ নিয়ে সামান্য হাতাহাতি শুরু হতেই চীনা সেনারা রডে কাঁটাতার জড়িয়ে আক্রমণ করে। পাল্টা আঘাত করে ভারতীয় সেনারাও। ওই উচ্চতায় রাতের তাপমাত্রা ছিলো হিমাঙ্কের অনেক নিচে। সঙ্গে ছিলো অক্সিজেনের সমস্যা। তার মধ্যেই দুপক্ষের সংঘর্ষ চরমে পৌঁছায়। আহত সেনা জওয়ানদের কেউ কেউ নদীতে পড়ে যায়। মঙ্গলবার সকালে বহু সেনার মৃতদেহ নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। কোনো কোনো সূত্রের খবরে বলা হয়েছে, প্রায় আট ঘণ্টা ধরে দুপক্ষের মধ্যে লড়াই চলে। দুপক্ষের সেনাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ভারতের অভিযোগ, চীন তাদের বেশ কিছু সেনাকে আটক করে নিজেদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের ওপর অত্যাচার চালানো হয়। পরে মঙ্গলবার সকালে দুইপক্ষ বৈঠকের পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম সংঘাতের কথা স্বীকার করে বিবৃতি প্রকাশ করেছিলো ভারতীয় সেনাবাহিনী। গভীর রাতে তারা নতুন বিবৃতি প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, অন্তত ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে একজন অফিসার। ভারতীয় সেনা সূত্র জানিয়েছে, বুধবার সকালে নিহতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি : গতকাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করার সময় দেয়া বিবৃতিতে বলেন, ‘ভারতীয় সেনাদের আত্মবলিদান বৃথা যাবে না। ভারত শান্তি চায়। কিন্তু কেউ (চীন) প্ররোচনা দিলে যে কোনো পরিস্থিতিতে ভারত উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত।’ তিনি ভারতীয় সেনাদের নিহত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের বীর জওয়ানদের নিয়ে দেশবাসী গর্ব করতে পারেন। কারণ তারা মারতে মারতে মরেছেন।’ তিনি উল্লেখ করেন, দেশে অখন্ডতা আমাদের কাছে সবার উপরে, তা নিয়ে কোনো সমঝোতা করা যাবে না। এদিকে গতকাল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিঝিয়ান বলেছেন, ‘ভারতীয় বাহিনী যেনো সীমান্ত পেরনো বা একতরফা পদক্ষেপের মতো কিছু না করে। তার ফলে আরও জটিল হতে পারে সীমান্ত পরিস্থিতি।’ তিনি বলেন, ‘বেইজিংয়ের সঙ্গে আলোচনায় না থেকে নয়াদিল্লি যেনো কোনো নতুন পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে পরিণতি শুভ হবে না।’ তিনি এও অভিযোগ করেন, দুদেশই শান্তিরক্ষার জন্য উত্তেজনা প্রশমন করতে আলোচনা চালাচ্ছিলো। এ অবস্থায় শান্তি বিঘিœত করে ভারতীয় সেনারা সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিলো, ‘ভারতীয় বাহিনী সীমান্ত পেরিয়ে চীনা বাহিনীর ওপর অতর্কিতে হামলা চালিয়েছিলো। সেই হামলার পাল্টা উত্তর দিতেই চীন আক্রমণ করে।’ যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি : লাদাখে ভারত-চীন সংঘাতের পরে পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। দুপক্ষের একাধিক সেনা হতহত হওয়ার পর হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে এ কথা জানানো হয়। দুই দেশের মধ্যে সমস্যা দ্রুতই শান্তিপূর্ণভাবে মিটবে বলে বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করা হয়। হোয়াইট হাউসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গতকাল ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিহত সদস্যদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, ‘লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে ভারত-চীন উভয়পক্ষই তৎপর হয়েছে। আমরা বর্তমান পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান আশা করছি। আমেরিকা এই পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, সেই চেষ্টা করা হবে মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে।’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More