ভয়ঙ্কর রূপে করোনা সংক্রমণ : উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধির নানা সুপারিশ

করোনায় আরও ২৬ জনের মৃত্যু : নতুন রোগী শনাক্ত এক হাজার ৮৬৮ জন

স্টাফ রিপোর্টার: এক সপ্তাহের ব্যবধানে করোনা শনাক্তের হার বেড়েছে ৯১ দশমিক ৪৯ ভাগ। মৃত্যু বেড়েছে ৮৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণ এমন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এর পেছনে ভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয় থেকে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়গুলো প্রায় কোনো সুপারিশই আমলে নিচ্ছে না। উল্টো তারা স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন- অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, রাজধানীতে বর্তমানে ১০টি সরকারি এবং ৯টি বেসরকারি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে মোট শয্যা রয়েছে ৩২৪৪টি। এরমধ্যে বতর্মানে ভর্তি আছেন ১৯৯২ জন রোগী এবং ১২৫২টি শয্য খালি রয়েছে। অন্যদিকে এসব হাসপাতালে আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) শয্যার সংখ্যা ২৮৬টি। এর মধ্যে ভর্তি আছে ২১৫ জন এবং খালি আছে ৭১টি শয্যা। রোগী বৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে খুব শিগগিরই হাসপাতালগুলোয় শয্যা সংকট দেখা দেবে। আইসিইউ সংকট তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছে নানা সুপারিশ দেয়া হয়েছে। সুপারিশগুলো বিবেচনা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশগুলো যথাযথভবে আমলে নিচ্ছে না বা বাস্তবায়ন করছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সুপারিশ করতে পারে, কিন্তু তা বাস্তবায়নের জন্য বাধ্য করতে পারে না। মাত্র ১৫ দিন ২৫ লাখ মানুষ কক্সবাজার ভ্রমণ করেছে। গত বছর আমরা জানতাম না কোভিড বিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় বা চিকিৎসা ব্যবস্থা কি। কিন্তু এখন আমরা জানি। কিন্তু জনগণের প্রত্যাক্ষ সহায়তা ছাড়া এই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এভাবে চলতে থাকলে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যার চেয়ে রোগী বেড়ে গেলে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, শিগগিরি নতুন সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। বিশেষ করে, সামাজিক অনুষ্ঠানে গেস্ট কন্ট্রোল করা, মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা, বিনোদন কেন্দ্রগুলো সাময়িক বন্ধ রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা।
দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কতোটা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে গত দুই সপ্তাহের রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে সেটা প্রতীয়মান হয়। গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষার হার বেড়েছে ২০ দশমিক ১৬ ভাগ। শনাক্তের হার বেড়েছে ৯১ দশমিক ৪৯ ভাগ এবং মৃত্যুর হার বেড়েছে ৮৫ দশমিক ৫৩ ভাগ। সংখ্যাবাচকভাবে উল্লেখ করলে দেখা যায়, গত সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা হয়েছিলো ১ লাখ ১৬ হাজার ২৩২টি, এ সপ্তাহে হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৬টি। গত সপ্তাহে শনাক্ত হয়েছিলো ৬ হাজার ৫১২ জন এবং চলতি সপ্তাহে ১২ হাজার ৪৭০ জন। গত সপ্তাহে মৃত্যু হয়েছিল ৭৬ জনের, এ সপ্তাহে ১৪১ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত একদিনে আরও ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে আরও ১ হাজার ৮৬৮ জন। গত একদিনে মারা যাওয়া ২৬ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে ৮ হাজার ৬৬৮ জনের মৃত্যু হলো। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১ হাজার ৮৬৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৭০৬ হয়েছে। শনাক্তের হার গত দুদিনের তুলনায় কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৩৯ হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। সেটি ইতোমধ্যে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। কিন্তু আমাদের ভয় দেখাতে পারছে না। সেজন্যই নানা ধরনের সমাবেশ হচ্ছে, বিসিএস পরীক্ষা হচ্ছে, বইমেলা হচ্ছে, নির্বাচন হচ্ছে, কক্সবাজার সেন্ট মার্টিনে লাখ লাখ মানুষ বেড়াতে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যবিধি ভাঙার ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করে পুরো বিষয়ের গুরুত্ব কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ যতই অসচেতন হোক, একটি বৈশ্বিক মহামারি চলাকালীন সময়ে স্বাস্থ্যকর্মী, বিশেষজ্ঞ, প্রশাসনিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন-নিপসমের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ জামালউদ্দিন বলেন, সময়টা এখন আবারও সচেতন হওয়ার। করোনা সংক্রমণে দেশে মার্চ ২০২০ এবং মার্চ ২০২১-এর মধ্যে বেশ সাদৃশ্য লক্ষণীয়। আমরা যারা সরাসরি ভাইরাসটি নিয়ে ল্যাবে সময় কাটাই, সবার আগে আমরাই দেখতে পাই ভাইরাসের এর ক্রমহ্রাস বা ক্রমবৃদ্ধি। তবে এবার তারাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন যারা গতবার আক্রান্ত হননি। সাম্প্রতিক সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন গা-ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে তাতে পরিস্থিতি গতবারের চেয়ে খারাপ হবে, সেটা অনুমেয়। দেশের করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে ঠেলে না দিতে অথবা ফের লকডাউন এড়াতে সবার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, জীবন আপনার আর তাই সিদ্ধান্তও আপনার।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More