মজুত বাড়াতে চাল আমদানির পথে হাঁটছে সরকার

ধান-চাল মিলে সাড়ে ৮ লাখ টনের বিপরীতে সংগ্রহ এক লাখেরও কম
স্টাফ রিপোর্টার: চলতি আমন মৌসুমে দুই লাখ টন ধান ও সাড়ে ছয় লাখ টন চাল সংগ্রহের টার্গেট ছিলো খাদ্য মন্ত্রণালয়ের। ১৫ মার্চ সংগ্রহের সময়সীমা শেষ হলেও সারা দেশে ধান-চাল মিলে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৮৭ হাজার ৩৪১ টন। যা চাল আকারে পাওয়া যাবে ৮৩ হাজার ২০২ টন। সরকারি গুদামে আপৎকালীন মজুত কমবেশি ১০ লাখ টন থাকার কথা থাকলেও আছে ৪ লাখ ৮৮ হাজার টন। গত বছর এই সময়ে মজুত ছিলো ১৫ লাখ ৭২ হাজার টন। বাজার মূল্যের চেয়ে সংগ্রহ মূল্য কম থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মজুত সন্তোষজনক না থাকায় লকডাউনে ওএমএসের পরিধি বাড়াতে পারছে না খাদ্য মন্ত্রণালয়। মজুত বাড়াতে চাল আমদানির পথে হাঁটছে সরকার।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০২০ সালে বোরো মৌসুমে সাড়ে ১৯ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের টার্গেট ছিলো, কিন্তু বছর শেষে মাত্র ৫৪ ভাগ অর্জন করা সম্ভব হয়। টার্গেটের মধ্যে আট লাখ টন ধান, ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল ও দেড় লাখ টন আতপ চাল ছিলো। প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে ধান, ৩৬ টাকা দরে সিদ্ধ চাল এবং ৩৫ টাকা দরে আতপ চাল কেনার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিলো। এবারও টার্গেট পূরণ হচ্ছে না। চলতি আমন সংগ্রহ মৌসুমে টার্গেটের বিপরীতে মাত্র ৭৪ হাজার ৯৯৯ টন চাল ও ১২ হাজার ৩৪২ টন ধান সংগৃহীত হয়েছে। ৬ এপ্রিলের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুসারে মজুতের পরিমাণ ছিলো চাল ৩ লাখ ৯৯ হাজার টন ও গম ৮৯ হাজার টন। এটা নিরাপদ খাদ্য মজুতের অর্ধেকেরও কম।
এক প্রশ্নের উত্তরে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারি হিসাবেই বাজারে যেখানে মোটা চালের দাম ৪১-৪৬ টাকা, সেখানে মিলাররা কেন ৩৭ টাকা দরে সরকারি গুদামে চাল দেবে? প্রতি কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা লোকসান দিয়ে চাল দিতে আগ্রহ নেই চালকল মালিকদের। প্রায় অভিন্ন কারণ ধানের বেলায়। বাজারের সঙ্গে মিল রেখে মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মতে, রাষ্ট্রের নাগরিকদের খাদ্য নিরাপত্তায় সরকারিভাবে কমপক্ষে ৬০ দিনের খাদ্য মজুত রাখা প্রয়োজন। আমাদের একদিনের খাদ্য চাহিদা প্রায় ৪৬ হাজার টন। সে হিসাবে ৬০ দিনের জন্য খাদ্য মজুত রাখার কথা ২৭ লাখ টন। কিন্তু দেশের এ সংক্রান্ত নীতিমালায় আপৎকালীন খাদ্যশস্য মজুতের পরিমাণ চাল-গম মিলিয়ে সাড়ে ১০ লাখ টন রাখতে বলা হয়েছে। তবে দেশের মানুষের ঘরে ঘরে, মিল, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় খাদ্যপণ্য যথেষ্ট মজুত রয়েছে বলে মনে করে সরকার। এ অবস্থায় জি-টু-জি পদ্ধতিতে ভারত থেকে এক লাখ টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ৩৬৮ কোটি টাকা। এর আগে কয়েক দফায় ভারত থেকে প্রায় দুই লাখ টন চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকেও চাল আমদানির চেষ্টা করা হচ্ছে বলে খাদ্য অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে।
করোনার প্রথম ধাক্কায় কর্মসংস্থান হারিয়েছেন অনেকে। ফলে সরকারি ত্রাণ সহযোগিতার ওপর মানুষের নির্ভরতাও বেড়েছে। এখন দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর কারণে ‘লকডাউন’ দেয়া হয়েছে। এর মেয়াদ আরও বাড়তে পারে। ফলে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে, তা মোকাবেলায় সরকারি খাদ্যগুদামগুলোয় এখনই মজুত বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে মজুত পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে খাদ্যসচিব বলেন, আমদানির সিদ্ধান্তের শুরুতে কিছুটা দাম কমলেও পুনরায় ধান ও চালের দাম বাড়ছে। ভারত থেকে ধীরগতিতে চাল আসায় পর্যাপ্ত মজুত গড়ে তোলা যাচ্ছে না। বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ওএমএসও বিতরণ করা যাচ্ছে না। খাদ্যসচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, ‘নানা কারণেই টার্গেট অনুযায়ী ধান-চাল সংগ্রহ হচ্ছে না। বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানির মাধ্যমে মজুত বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি এবং চাল পরিবহনে জাহাজ না-পাওয়ায় দেরি হচ্ছে। বাম্পার ফলন হওয়ায় সামনে বোরো মৌসুমে আশা করি ভালো সংগ্রহ হবে।’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More