স্টাফ রিপোর্টার:রাজধানীর মিরপুর এলাকায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)-এ কর্মরত কনিষ্ঠ সহকারী লাইনম্যান আবু হানিফ-এর বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম, প্রতারণা ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি মিরপুরের একাধিক ব্যবসায়ী ও ভুক্তভোগী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন, যেখানে বিস্তারিতভাবে এসব অনিয়মের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত টেলিফোন সংযোগ প্রদানের নামে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন আবু হানিফ। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গ্রাহকরা সঠিক সেবা পাননি।
অভিযোগকারীরা দাবি করেছেন, হানিফ ও তার সহযোগীরা এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন এবং অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা থেকে রেহাই পেয়েছেন।
এই মহাদুর্নীতিবাজ হানিফের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে—তার দুর্নীতির খতিয়ান লিখতে গেলে এক ইতিহাস তৈরি হবে। এসব অভিযোগ অনুসন্ধান শেষে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে।
সরকারি নথি অনুযায়ী, ১৬/০৭/২০২৪ তারিখে বিটিসিএলের সরকারি ব্যবস্থাপক (ফোনস-৩) স্বাক্ষরিত স্মারক নং: এ.এম/পি-৩, মির (উত্তর)/কর্মচারী/আচরণ ও শৃঙ্খলা/২৪-২৫ অনুযায়ী আবু হানিফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপ-মহাব্যবস্থাপক (ফোনস-১)-কে পত্র দেওয়া হয়।
এছাড়া ১৯/১২/২০১৭ তারিখে, বিভাগীয় প্রকৌশলী (জনশক্তি) স্মারক নং-১৪.৩৩.০০০০.৬৫২.১০.০০১ এর মাধ্যমে দায়িত্বে অবহেলার কারণে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধান কর্মাধ্যক্ষকে অনুরোধ করা হয়। পরবর্তীতে সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সালাহ উদ্দিনও একই অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।
কিন্তু একাধিক কর্মকর্তা ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করলেও, অদৃশ্য শক্তির এশারায় আবু হানিফ সব অভিযোগ ধামাচাপা দিতে সক্ষম হন।
বর্তমানে আবু হানিফ ও তার পরিবারের নামে মিরপুর সেকশন–১০, ব্লক–ডি, রোড–৩৪, বাসা–১৪-এ আড়াই কাঠা জমির ওপর ৭ তলা ভবন, এবং সেকশন–১০, ব্লক–বি, মেইন রোড–১, বাইতুল কুদ্দুস জামে মসজিদ মার্কেট এলাকায় রেন্ট-এ-কার ব্যবসা রয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, তার ৫–৬টি নোহা ও হাইয়েস গাড়ি আছে, যার মধ্যে একটি গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো ট-১৫-৭০৩০। এছাড়া সেকশন–১৩ এর রাকিন সিটিতে দুটি প্লট এবং মিরপুর–১০ গোলচত্বর সংলগ্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি মার্কেটে ৬১ ও ৬২ নম্বর দোকান তার নামে রয়েছে।
অভিযোগকারীরা আরও জানান, ৮০১৩৪০৮ নম্বর টেলিফোনটি জনৈক মজিবুর রহমানের নামে বরাদ্দ থাকলেও, হানিফ জালিয়াতির মাধ্যমে নাম ও ছবি পরিবর্তন করে তা অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় ব্যবহার করে সাত দিনে ৭৩০০০০ টাকা বিল হয়, ২০০৭ সালে এরকম ৩০টিরও বেশি টেলিফোন সংযোগ ব্যবহার করে তিনি অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন বলে জানা যায়
।
এছাড়া ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জনৈক তুষার নামের এক ব্যবসায়ির ব্যবসায়িক পার্টনার হিসাবে ভিওআইপি এর মাধ্যমে বিপুল অর্থ লেনদেনেরও অভিযোগ রয়েছে হানিফের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হানিফের বিরুদ্ধে পূর্বেও প্রতারণা ও আর্থিক অনিয়মের একাধিক মামলা হয়েছিল, যা এখনো তদন্তাধীন। কাফরুল থানায় তার বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজি মামলা (নং–৯৩, তারিখ ৩১-০৭-২০১১, ধারা ৩৪২/৩২৩/৩৭৯/৫২৬) রয়েছে।
এছাড়া, ওয়ার্কচার্জড কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। হানিফ বর্তমানে টি অ্যান্ড টি ফেডারেল ইউনিয়ন জাতীয় শ্রমিকলীগের অন্তর্ভুক্ত মিরপুর বিভাগীয় কমিটির সহ-সভাপতি, তবে অভিযোগ রয়েছে, তিনি এখন বিএনপির নাম ভাঙিয়ে মিরপুর বিটিসিএলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানিয়েছেন, হানিফের রয়েছে বিশাল নেটওয়ার্ক ও সন্ত্রাসী বাহিনী। তার বিরুদ্ধে মুখ খুললে ওই বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা শারীরিকভাবে নির্যাতিত হতে হয়।
একটি নির্ভরশীল সূত্রে জানা যায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যে আবু হানিফের অবৈধ সম্পদ ও অনিয়ম তদন্ত করছে তাহাও হানিফ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে যানা যায়, আবু হানিফের মতামতের জন্য একাধিকবার তার অফিসে গিয়ে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সচেতন মহল হানিফের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ যথাযথভাবে তদন্তের জন্য বিটিসিএলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), এনএসআই ও ডিজিএফআইসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.