মুক্তির শর্তে আটকা খালেদার রাজনীতি

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করা হলেও শর্তসাপেক্ষে মুক্তি হওয়ায় তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারছেন না। যদিও ওই সময় শর্ত প্রকাশ করা হয়নি। তবে কয়েকটি সূত্র বলছে, খালেদা জিয়াকে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসতে পারবেন না এমন কয়েকটি শর্ত ছিলো। তার পরও তার দল বেগম জিয়াকে কতটুকু ‘ফিল’ করছে? অনেকেই মনে করেন, খালেদা জিয়াকে সেভাবে মনে রাখছেন না নেতারা। অবশ্য দলের নেতাকর্মীদের অনেকেই বলছেন, খালেদা জিয়া শর্তের বেড়াজালে পড়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারছেন না। রাজনীতিতে সক্রিয় হতে গেলে তাকে আবার কারাগারে যেতে হতে পারে, এমন শঙ্কাও আছে নীতিনির্ধাকরদের মাঝে। তাই ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আগে সক্রিয় খালেদা জিয়া কারামুক্তির পরও এখন ‘নিষ্ক্রিয়’। কারামুক্তির পর দলীয় কার্যক্রমে দীর্ঘ নিষ্ক্রিয়তায় দলের ভেতরেও খালেদা জিয়াকে নিয়ে আলোচনা কমতে থাকে। দলের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তার মতামত কী নেয়া হচ্ছে? এমন নানা প্রশ্ন দলের নীতিনির্ধারকসহ তৃণমূল নেতাদেরও। কারণ তিনি এখনো বিএনপি চেয়ারপারসন, কিন্তু দলীয় অনেক সিদ্ধান্ত-ই তিনি নেন না। এর কারণ কী জানতে চাইলে দলের এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, খালেদা জিয়াকে নিয়ে আগের মতো তেমন উচ্ছ্বাস দেখান না অধিকাংশ নেতা। সিনিয়র নেতা ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বেগম জিয়ার প্রতি ভালোবাসা, আবেগ ও উচ্ছ্বাস থাকলেও মধ্য সারির মধ্যে তার ঘাটতি আছে। দলের মধ্যে প্রভাব ধরে রাখতে সবাই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে ঝুঁকছেন বেশি। জানা গেছে, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর গঠনতন্ত্র মোতাবেক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান তারেক রহমান। কিন্তু কারাগার থেকে বের হওয়ার পর খালেদা জিয়া চেয়ারপারসন পদে থাকলেও তারেক রহমানও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও গয়েশ্বরচন্দ্র রায় প্রায় একই সুরে বলেন, সাময়িক মুক্তি পেলেও আইনগতভাবে খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না। তাই দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দল পরিচালনা করছেন। তিনি তো দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে বেশ ভালোই চালাচ্ছেন। গয়েশ্বর রায় বলেন, বেগম জিয়া সুস্থ হলে ও আইনি জটিলতা কেটে গেলে তিনি আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। দেশবাসী সেই আশা নিয়েই তার দিকে তাকেই আছেন। বিএনপি নেতারা বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে রেখে দৃশ্যমান কোনো আন্দোলন কর্মসূচি না করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি জোট। ওই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেন তারেক রহমান। এ অবস্থায় গত বছরের ২৫ মার্চে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত হলে শর্তসাপেক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লক থেকে মুক্ত হয়ে গুলশানের ভাড়াবাসা ফিরোজায় উঠেন। তার পর থেকে ওই বাসায়ই আছেন খালেদা জিয়া। তিনি চিকিৎসক, পরিবারের কয়েকজন সদস্য, দলের কয়েকজন নেতা ছাড়া তেমন কাউকেই সাক্ষাৎ দেন না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত নন, তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। জেলখানায় থাকা আর বাসায় থাকার মধ্যে একটিই পার্থক্য যে, তিনি ঘরোয়া পরিবেশে থাকতে পারছেন। এর বেশি কিছু নয়। আসলে তিনি গৃহ অন্তরীণ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More