মেহেরপুরে আউশ ধান কর্তনের উদ্বোধনে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক

কৃষি পণ্য বাজারজাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে
মেহেরপুর অফিস: কৃষক উৎপাদিত পণ্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারজাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা দিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, শুধু খাদ্যের জন্য আবাদ নয়, কৃষি পণ্য বিক্রি করে কৃষক যাতে উন্নত জীবনযাপন করতে পারে তার জন্য সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গতকাল শনিবার মেহেরপুরে আউশ ধান কর্তন অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। মেহেরপুর জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সদর উপজেলার কালাচাঁদপুর মাঠে আউশ ধান কর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তৃতায় কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আগে আউশে যে পরিমাণ ধান বীজ বপণ করা হতো সেই পরিমাণ ফলন হতো। লাভের মধ্যে পুরাতন থেকে নতুন। এখন আমন ও বোরো মধ্যবর্তী সময়ে আউশ মরসুমে উচ্চফলনশীল ধান জাত ও আধুনিক প্রযুক্তির সংস্পর্শে বিঘায় ফলন প্রায় ২০ মণ। এতে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন আমাদের কৃষকরা। মেহেরপুর কৃষির অপার সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, উঁচু সমভূমির এ জেলায় তেমন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেই। ফলে প্রায় সব ফসলই এখানে উৎপাদন করেন চাষিরা। বিশেষ করে এখানকার হিমসাগর আম জাপানে ও নিরাপদ সবজি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি।
আমেরিকায় একটি ফুলকপি ৫/৬ ডলারে বিক্রি হয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষকের উৎপাদিত সবজি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি করতে পারলে কৃষকরা ব্যাপক লাভবান হবেন। নিরাপদ সবজি রফতানির জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে।
কৃষিতে আধুনিকতা ও যান্ত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রসঙ্গ টেনে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গেলো বোরো মরসুমে যন্ত্র দিয়ে ধান কাটা, মাড়াই করায় হাওয়ার অঞ্চলে দারুণ ফলাফল এসেছে। আগামীতে রোপণ, বপন, কর্তন, মাড়াই কাজে শতভাগ যন্ত্র নিশ্চিত করা হবে। এর মাধ্যমে কৃষক লাভবান হবেন। তবে কৃষি শ্রমিকরা যাতে বেকার না হয়ে পড়েন সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একশো অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ছেন। যেখানে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করণ করে বিক্রি ও বিদেশে পাঠানোর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে। মেহেরপুরসহ বিভিন্ন জেলায় আউশ ধানের আবাদ বৃদ্ধি ও ধান বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
কৃষিপণ্য বিক্রি করে কৃষকরা উন্নত জীবনযাপন করবেন এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে মন্ত্রী বলেন, মেহেরপুরে সবজি, ধান, গমসহ বিভিন্ন ফসল হয়। এখানে ব্লাক বেঙ্গল ছাগল ও গরু পালন হয় ব্যাপকভাবে। তাই কৃষকরা যাতে তার উৎপাদিত পণ্য ভালো দামে বিক্রি করতে পারেন সেক্ষেত্রে নানামুখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার। শুধু খাদ্যের চাহিদা মেটাতে আবাদ নয় কৃষি পণ্য বিক্রি করে কৃষক পরিবার যাতে উন্নত জীবন ব্যবস্থায় আসতে পারে সেদিকে সরকারের সর্বোচ্চ সতর্ক গুরুত্ব রয়েছে।
ঐতিহাসিক মুজিবনগরে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের ইতিহাসের সাথে মেহেরপুর জেলা পরম গৌরবের উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, স্বাধীনতার সুতিকাগার এ জেলার কৃষির উন্নয়নে মেহেরপুরের কৃতিসন্তান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর সাথে তিনি একাত্ম হয়ে কাজ করবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন ও কৃষির চিত্র তুলে ধরেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন। প্রধান বক্তার বক্তব্যে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের কৃষকদের জাগিয়ে তুলতে হবে। কৃষি এবং কৃষকদের প্রাধান্য দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছেন কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতির ওপর। আমাদের এলাকার আশা আকাক্সক্ষা, সম্ভাবনা ও স্বপ্নই কৃষিকে ঘিরে। তাই ডেল্টা প্লানিংয়ের আওতায় এ জেলার নদী ও খাল খনন এবং বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়ে জেলার কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করা হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মুনসুর আলম খাঁন। বিশেষ অতিথি ছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর পল্লব ভট্টাচার্য। মেহেরপুর জেলার কৃষির চিত্র তুলে ধরেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক স্বপন কুমার খাঁ। অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিরুজ্জামান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. মুইদ, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবির, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইং পরিচালক শাহ মো. আকরামুল হক ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেকসহ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে কালাচাঁদপুর মাঠে আউশ ধানের নমুনা কর্তন করা হয়। এতে দেখা যায় বিঘায় প্রায় ২০ মণ ফলন হয়েছে। আবাদে কৃষকের খরচ হয়েছে নয় হাজার টাকা। আর ধান বিক্রি করে ১৭ হাজার টাকার উপরে পাওয়া যাবে। ফলে আউশ ধান আবাদ লাভজনক বলে সন্তোষ প্রকাশ করেন উপস্থিত কৃষক ও অনলাইনে যুক্ত থাকা অতিথিবৃন্দ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসেব মতে মেহেরপুর জেলায় এ বছর ২০ হাজার ৫৯৪ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ২০ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More