যোগ্যদের স্থান দেয়া হলেই সার্থক হবে কাউন্সিল

আওয়ামী লীগের সম্মেলন : ডাকের অপেক্ষায় ত্যাগী ও অভিমানী নেতারা

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও অভিমানী নেতারা দলের হাইকমান্ডের ডাকের অপেক্ষায় রয়েছেন। তারা মনে করছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। তাই আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের সরকারের শাসনামলের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। বিগত দুই সংসদ নির্বাচন যেভাবে হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তির সুযোগ এবার থাকছে না। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধদের সরিয়ে যোগ্য নেতাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেয়া হলেই সার্থক হবে কাউন্সিল।

আগামী ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় নেতারা সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পরবর্তী এক বছর সময় পাবেন। তাই এই সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে যাদের ঠাঁই হবে তাদের বেশি সৌভাগ্যবান ভাবা হচ্ছে। দলের হাইকমান্ডের আস্থা অর্জন করে কেন্দ্রীয় কমিটিতে যেতে পারলে ব্যাপক সাংগঠনিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণের সুযোগের পাশাপাশি মিলতে পারে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নও। সে বিষয়টি মাথায় রেখে ত্যাগী এবং অভিমানী নেতাদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে আগ্রহ। এদের মধ্যে অবশ্য কেউ কেউ শুধু রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি শক্তিশালী সংগঠন। জন্মলগ্ন থেকেই এ দলের নেতারা সর্বোচ্চ ত্যাগ করে এসেছেন। জীবনের সব কিছু বিলিয়ে দিয়ে দলের সঙ্গে কাজ করে গেছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ভোগের নয়, ত্যাগের। তাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে হলে ত্যাগী হতে হবে।

সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, এখন যারা নেতা হতে চান তারা বড় বড় গাড়ি হাঁকিয়ে চলার চেষ্টা করছেন, যা আওয়ামী লীগ পছন্দ করে না। ত্যাগী ও মানুষের ভালোবাসার পাত্ররা দাপট দেখান না। দাপট তারাই দেখান যারা নব্য, আওয়ামী লীগে বিভিন্ন পর্যায় থেকে এসেছেন। দলকে সুসংগঠিত করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও মানুষের ভালোবাসার নেতাদের মূল্যায়ন করা উচিত। তারাই দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে থাকে।

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ বলেন, আমি মনে করি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশ ও আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে দলের জয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সেজন্য দলকে সুসংগঠিত করতে হবে। দলের আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলে যোগ্য নেতা নির্বাচন করে প্রস্তুতি নেয়া হলে জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে আবারো ক্ষমতায় যাবে আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অনেক নেতাকর্মী এতদিন ধরে অভিমান করে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন। আবার অনেকে ছিটকে পড়েছেন সংস্কার ইস্যুতে। এক-এগারোর প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশ তাদের করেছে সর্বস্বান্ত। কিন্তু এসব নেতার রয়েছে সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন। উপেক্ষিত ও অভিমানী এসব নেতা ক্ষমতায় থেকেও বিরোধী দলের কর্মীর মতো রয়েছেন। দলের কর্মকা-ে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেন না। অন্যদিকে অনেকে একসময় আওয়ামী লীগ বা সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের এখন কোনো কাজ নেই। এ কারণে অনেকটা নিভৃতে জীবনযাপন করছেন তারা। এসব নেতা দলের হাইকমান্ডের ডাকের অপেক্ষায় রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আখতারুজ্জামান ও সাবের হোসেন চৌধুরী, প্রতিকূল সময়ের ছাত্রলীগ নেতা উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মানু ও হারুন অর রশীদ হাওলাদার, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ, সাবেক ছাত্র নেতা সফি আহমেদ, সুভাষ সিংহ রায়, মাঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরী, বাহাদুর বেপারি, অজয় কর খোকন ও বলরাম পোদ্দার এবং সাবেক যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ মহি দলে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চান। এরকম আরও অনেক নেতা ছড়িয়ে রয়েছেন ঢাকাসহ সারা দেশে।

এসব নেতার কেউ কেউ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনের অভ্যন্তরে সুবিধাবাদীদের আধিপত্য বেড়ে গেছে। আর এই সুযোগ তৈরি হয়েছে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমতাবান হওয়ার মনোবাসনা থেকে। ফলে সংগঠন দুর্বল হচ্ছে। কেউ কেউ পারিবারিক উত্তরাধিকার সূত্রে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছেন অথবা দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এমপি হয়েছেন। তাদের অধিকাংশই নানা কারণে বিতর্কিত। তারা দলকে পুনরায় ক্ষমতায় নিতে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এ অবস্থায় অতীতের মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। একমাত্র ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগই সব প্রতিকূলতা জয় করতে পারে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More