লাল জোনে সাধারণ ছুটি : হলুদ সবুজে সীমিত অফিস

স্টাফ রিপোর্টার: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ওপর ভিত্তি করে ঘোষিত লাল জোনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। হলুদ এবং সবুজ জোনে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে অফিস চলবে। একই সময় পর্যন্ত অনুমোদিত অঞ্চলে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। তবে সব অবস্থায় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। গতকাল সোমবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে ভাগ করা হয়েছে। অধিক সংক্রমিত জোনকে ‘লাল’ ও মাঝারি সংক্রমিত জোনকে ‘হলুদ’ এবং কম সংক্রমিত জোনকে ‘সবুজ’ বলা হয়েছে। এরমধ্যে লাল জোনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এ জোনে বসবাসরত চাকরিজীবীরা সাধরণ ছুটির আওতায় আসবেন। হলুদ এবং সবুজ জোনের সব অফিস সীমিত পরিসরে চালু রাখা হবে বলে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে যেভাবে অফিস চলছে, হলুদ ও সবুজ জোনে অবস্থিত অফিসগুলো আজ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সেভাবেই চলবে।
আদেশে বলা হয়, ‘লাল অঞ্চলে অবস্থিত সামরিক বা অ-সামরিক সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বয়ত্তশাসিত বা বেসরকারি দফতরগুলো এবং লাল অঞ্চলে বসবাসকারী এসব দফতরের কর্মকর্তারা সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবেন। হলুদ ও সবুজ অঞ্চলে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। সীমিত পরিসরে অফিস খোলা থাকার সময় অর্থাৎ, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সব ধরনের গণপরিবহনও চলাচল করতে পারবে। অনুমোদিত অঞ্চলে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান, রেল ও বিমান চলাচল করতে পারবে।’
গত ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটির সময় সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ ছিলো। ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে অফিস খুলে দিয়ে এই সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। সীমিত পরিসরে অফিস চালু রাখার ওই সিদ্ধান্তের মেয়াদ নতুন করে ১৬ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর পাশাপাশি ওই সময় পর্যন্ত গণপরিবহন চালানোরও অনুমতি দেয়া হলো।
মানতে হবে যেসব বিধি-নিষেধ: আদেশে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে এবং পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ১৫ জুনের পর নি¤œলিখিত শর্তসাপেক্ষে দেশের সার্বিক কার্যাচবলী এবং জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। নির্দেশনাগুলো হলো ১. আগামী ১৬ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। সাপ্তাহিক ছুটি এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ২. রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত অতীব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (প্রয়োজনীয় ক্রয়-বিক্রয়, কর্মস্থলে যাতায়াত, ওষুধ ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে আসা যাবে না। তবে সর্বাবস্থায়ই বাইরে চলাচলের সময় মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৩. নিষেধাজ্ঞাকালীন জনসাধারণ ও সব কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশমালা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। ৪. হাটবাজার, দোকানপাটে ক্রয়-বিক্রয়কালে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে। শপিংমলের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শপিংমলে আগত যানবাহনগুলোকে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাটবাজার, দোকানপাট এবং শপিংমলগুলো আবশ্যিকভাবে বিকাল ৪টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। ৫. আইনশৃঙ্খলা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কাজে নিয়োজিত সংস্থা এবং জরুরি পরিসেবা, যেমন- ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুত, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। ৬. সড়ক ও নৌপথে সব প্রকার পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত যানবাহন (ট্রাক, লরি, কার্গো ভেসেল প্রভৃতি) চলাচল অব্যাহত থাকবে। ৭. কৃষিপণ্য, সার, বীজ, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্পপণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। ৮. চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মী এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মী, গণমাধ্যম (ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া) এবং ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কে নিয়োজিত কর্মীরা নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবেন। ৯. ওষুধ শিল্প, কৃষি এবং উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো, উৎপাদন ও রফতানিমুখী শিল্পসহ সব কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে চালু রাখতে পারবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রণীত ‘বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণে নির্দেশনা’ প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে। ১০. নিষেধাজ্ঞাকালীন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না। তবে অনলাইন কোর্স বা ডিসটেন্স লার্নিং অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি প্রশাসনিক কাজ চালু রাখা যাবে। ১১. অঞ্চলভিত্তিক নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। ১২. অনুমোদিত অঞ্চলে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান, রেল ও বিমান চলাচল করতে পারবে। তবে সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্য বিভাগের জারি করা নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। ১৩. নিষেধাজ্ঞাকালে সব প্রকার সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত ও অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ থাকবে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুশাসন ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদগুলোতে জনসাধারণের জামাতে নামাজ আদায় এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠান অব্যাহত থাকবে। ১৪. স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রণীত ‘বাংলাদেশ রিস্ক জোন-বেইজড কোভিড-১৯ কন্টেইমেন্ট ইমপ্লিমেন্টেশন স্ট্র্যাটেজি/গাইড’ অনুসরণ করে সংক্রমণের ভিত্তিতে ‘সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ এর কর্তৃত্ব অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ লাল অঞ্চল (রেড জোন), হলুদ অঞ্চল (ইয়েলো জোন) ও সবুজ অঞ্চল (গ্রিন জোন) হিসেবে ভাগ করে জেলা/উপজেলা/এলাকা/বাড়ি/মহল্লাভিত্তিক জনচলাচল/জীবনযাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। হলুদ ও সবুজ অঞ্চলের ক্ষেত্রে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
১৫. প্রত্যেকটি লাল জোনের জন্য কোভিড নমুনা পরীক্ষা, কোভিড-ননকোভিড স্বাস্থ্যসেবা প্রোটোকল, কোয়ারেন্টাইন/আইসোলেশন, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, জনচলাচল, যানচলাচল, অর্থনৈতিক কর্মকা-, খাবার ও ওষুধ সরবরাহ, দরিদ্র লোকদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদান, মসজিদ-মন্দির অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ধর্মচর্চা, জনসচেতনতা তৈরি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ব্যাংকিং সুবিধাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান/শিল্প প্রতিষ্ঠান/বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) তৈরি করতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
১৬. সিটি করপোরেশন এলাকায় অঞ্চলভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার সার্বিক দায়িত্ব থাকবে সিটি করপোরেশনের। সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাইরে জেলা প্রশাসন সার্বিক সমন্বয় করবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা/উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো সমন্বিতভাবে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। এ কার্যক্রমে সংসদ সদস্যরাসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ স্বেচ্ছাসেবীসহ অন্যদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
১৭. লাল অঞ্চলে অবস্থিত সামরিক ও অসামরিক সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি দফতরসমূহ এবং লাল ও হলুদ অঞ্চলে বসবাসকারী বর্ণিত দফতরের কর্মকর্তারা সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
১৮. হলুদ ও সবুজ অঞ্চলে সব সরকারি/আধা-সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিসগুলো নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। এ নিষেধাজ্ঞাকালে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না। ঝুঁকিপূর্ণ, অসুস্থ কর্মচারী এবং সন্তানসম্ভবা নারীরা কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এক্ষেত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে জারি করা ১২ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্র ছাড়া সব সভা ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে আয়োজন করতে হবে। এবং ১৯. স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অনুরোধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংক্রান্ত বিষয়াদি সমন্বয় করবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More