লিটারে ৪০ টাকারও কম দামে ডিজেল দেবে রাশিয়া

তেল কেনা ও লেনদেনে মুদ্রার বিনিময় পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার: বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামে অস্থিতিশীলতার কারণে চাপের মুখে বাংলাদেশ। লোকসান এড়াতে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়েছে সরকার। এর প্রভাব পড়েছে সব ধরনের দ্রব্যমূল্যে, যা নিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া থেকে কম দামে জ্বালানি তেল কেনার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ। এখন তেল কেনা ও লেনদেনে মুদ্রার বিনিময় পদ্ধতি কী হবে তা নিয়ে কাজ করছে সরকার। যদিও এর আগে রাশিয়া তেল বিক্রির আগ্রহ দেখালেও এগোয়নি বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা হয়। এ সভায় রাশিয়ার থেকে তেল আমদানি নিয়ে আলোচনা ওঠে। কীভাবে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা যাবে, তা পর্যালোচনা করে দেখার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবেশী দেশ ভারত যদি পারে, বাংলাদেশও রাশিয়া থেকে তেল কিনতে কেন পারবে না সেই প্রশ্নও করেছেন সরকারপ্রধান। জানা গেছে, রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের নানা রকম নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। ফলে তেল কেনার গ্রাহক খুঁজছে দেশটি। গত সপ্তাহে বাংলাদেশের কাছে আবারো পরিশোধিত তেল বিক্রির প্রস্তাব পাঠায় রাশিয়ার তেল উৎপাদন ও বিপণন কোম্পানি রজনেফ্ট। আগে তেল কেনায় আগ্রহী না হলেও এখন বাংলাদেশ বিষয়টি ভেবে দেখছে। এরই মধ্যে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয়ে আলোচনা করতে কমিটিও গঠন করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)।

সূত্র জানিয়েছে, রাশান প্রতিষ্ঠান রসনেফট প্রতি ব্যারেল ডিজেল ৫৯ ডলারে বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করতে চায়। প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত এই দরে ডিজেল সরবরাহ করতে রাজি আছে। গত সপ্তাহে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব পায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এমন আরও একাধিক প্রস্তাব পেয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। সব প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে দেখছে তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে পরিশোধিত ডিজেলের দাম প্রায় ১৩৫ ডলার।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাশিয়ার জ্বালানি তেল রপ্তানি কমে যায়। ফলে এশিয়া ও আফ্রিকায় নতুন বাজার খুঁজতে শুরু করে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উত্তোলনকারী দেশটি। এর আগে বাংলাদেশকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিল মস্কো। দেশে রাশিয়ান ক্রুড পরিশোধন সক্ষমতা না থাকায় সেই প্রস্তাবে অগ্রসর হয়নি ঢাকা। তবে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়টি পর্যালোচনার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মুদ্রার বিনিময় পদ্ধতি নিয়েও কাজ করতে বলেন। এরপরই সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এ বিষয়ে জোর তৎপরতা শুরু করেছে।

বিপিসির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার প্রস্তাবগুলো নিয়ে কাজ করছে। এ জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোন পদ্ধতিতে কীভাবে রাশিয়ার তেল কেনা হবে, মুদ্রা বিনিময় পদ্ধতি কী হবে সে বিষয়ে তারা সুপারিশ করবে।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, তারা রাশিয়ার প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখছেন। কম দামে তেল কিনতে পারলে বাংলাদেশের জন্য লাভ।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়ার তেল কিনলে অর্থ পরিশোধ কীভাবে হবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। রুবলে তেলের মূল্য পরিশোধ করতে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টি মাথায় রাখা হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সোভিয়েত আমলের মতো বাটা পদ্ধতিতে লেনদেনের বিষয়ে মস্কোকে প্রস্তাব দেয়ার কথা ভাবছে। এ পদ্ধতিতে বাংলাদেশের ব্যাংকে রাশিয়ার অ্যাকাউন্ট থাকবে। বাংলাদেশ তেল আমদানি করে তার বিনিময়ে টাকা সেই হিসাব নম্বরে জমা দেবে। ওই টাকা দিয়ে বাংলাদেশে কেনাকাটা করবে রাশিয়া। এ ছাড়া আরও পদ্ধতি নিয়ে ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, পরিকল্পনা কমিশনসহ সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশের বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৬৫-৭০ হাজার টন। এর মধ্যে পরিশোধিত তেল আনা হয় প্রায় ৫০ লাখ টন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More