শঙ্কার মধ্যেই দ্বিতীয় ধাপের ৬০ পৌরসভায় আজ ভোট

 

স্টাফ রিপোর্টার: সংঘাত ও সহিংসতার শঙ্কার মধ্যেই দ্বিতীয় ধাপের ৬০ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আজ। সকাল আটটা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট নেয়া হবে। ২৯টিতে ইভিএম এবং ৩১টিতে কাগজের ব্যালটে ভোট নেয়া হবে। বিভিন্ন স্থানে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপসহ নানা ঘটনায় ওইসব এলাকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভোটের সময় সংঘর্ষের বিষয় মাথায় রেখেই বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে নির্দিষ্ট এলাকায়। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে বসুরহাট পৌরসভার সবকটি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা দিয়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ২৪ জেলার ৩৮ পৌরসভায় মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে আছেন। তাদের বড় অংশই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী। দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের তৎপরতার কারণেও ভোটের দিন সহিংসতার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দ্বিতীয় ধাপে যে ৬০টি পৌরসভায় ভোট নেয়া হবে সেগুলো হলো- চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ও কেন্দুয়া, কুষ্টিয়ার কুষ্টিয়া সদর, ভেড়ামারা, মিরপুর ও কুমারখালী, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, নারায়ণগঞ্জের তারাব, শরীয়তপুরের শরীয়তপুর সদর এবং কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী। এছাড়াও রয়েছে গাইবান্ধার গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ, দিনাজপুরের দিনাজপুর সদর, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, মাগুরার মাগুরা সদর, ঢাকার সাভার, দিনাজপুরের বিরামপুর ও বীরগঞ্জ। নওগাঁর নজিপুর, পাবনার ভাগুড়া, ফরিদপুর, সাঁথিয়া ও ঈশ্বরদী, রাজশাহীর কাকনহাট, আড়ানী ও ভবানীগঞ্জভ সুনামগঞ্জের সুনামগঞ্জ সদর, হবিগঞ্জের মাধবপুর ও নবীগঞ্জ, ফরিদপুরের বোয়ালমারী, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, নাটোরের নলডাঙ্গা, গুরুদাসপুর ও গোপালপুর। বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও শেরপুর, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ও বেলকুচি, সুনামগঞ্জের ছাতক ও জগন্নাথপুর, পিরোজপুরের পিরোজপুর সদর, মেহেরপুরের গাংনী এবং ঝিনাইদহের শৈলকুপা। খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের লামা, সিরাজগঞ্জের সিরাজগঞ্জ ও রায়গঞ্জ, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি, কুমিল্লার চান্দিনা, ফেনীর দাগনভূঞা, কিশোরগঞ্জের কিশোরগঞ্জ সদর ও কুলিয়ারচর, নরসিংদীর মনোহরদী, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, বগুড়ার সান্তাহার, নোয়াখালীর বসুরহার ও বাগেরহাটের মোংলাপোর্ট।

কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের আচরণ, দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষসহ নানা ধরনের ঘটনা ভোটের সময় সংঘর্ষের শঙ্কাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে দুপক্ষের মধ্যে মারামারি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ, চোরাগোপ্তা হামলা হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। এতে আহত-নিহতের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত মেয়র ও কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যেই সংঘর্ষ বেশি হচ্ছে। শুক্রবারও সকালে শরীয়তপুরের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও আহত হয়েছে ১১ জন। বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহীর আড়ানীতে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা হয়। হবিগঞ্জের মাধবপুরে সরকারি দলের প্রার্থী লক্ষ্য করে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে দুষ্কৃতকারীরা। বুধবার ঝিনাইদহ-শৈলকুপায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে এক প্রার্থীর ভাই মারা গেছেন। এর ৫ ঘণ্টা পর প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রার্থী মারা যাওয়ায় ওই ওয়ার্ডের নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন পৌরসভায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়। এসব ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে গেছেন শতাধিক। সহিংসতার শঙ্কায় ১৭টি পৌরসভা নির্বাচনে নির্দিষ্ট সংখ্যার অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম ধাপে ২৩টি পৌরসভায় মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হলেও দ্বিতীয় ধাপে সংঘাত-সহিংসতা বেড়েছে। তৃতীয় ধাপের বেশ কয়েকটি পৌরসভাতেও সহিংসতা শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে সহিংসতার মাত্রা বেড়ে গেছে। গত ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের ২৩ পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতায় একজন মারা যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, দ্বিতীয় ধাপের যেসব পৌরসভা নিয়ে শঙ্কা আছে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য দেওয়া হয়েছে। তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন ঘিরে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। তবে আশা করছি আমাদের কঠোর প্রস্তুতির কারণে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটার উপস্থিতিও বেশি থাকবে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ৬০টি পৌরসভার ৫৬টিতে মেয়র পদে ভোট হবে। নারায়ণগঞ্জের তারাব, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, পাবনার ভাঙ্গুরা ও পিরোজপুর- এ চারটিতে ভোটের আগেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মেয়র পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। বাকি ৫৬টিতে মেয়র পদে ভোট হবে। তবে ৬০টি পৌরসভার সবকটিতেই কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ হবে। ২৯টি পৌরসভার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) শুক্রবার পৌঁছানো হয়েছে। বাকি ৩১টি পৌরসভায় কাগজের ব্যালটে ভোট হবে। সেগুলোতে আজ শনিবার ভোটগ্রহণ শুরুর আগে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। নির্বাচন উপলক্ষে ভোটকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

আরও জানা গেছে, মেয়র পদে ২১১ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ২৩২ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭২৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ছাড়া বাকি ৫৪টি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ দুটি পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নেই। সবকটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। অনেকগুলো পৌরসভায় দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছেন। এই ধাপের নির্বাচনে বড় দুই দল ছাড়াও জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপির প্রার্থীরা অংশ নিয়েছেন। প্রথম ধাপে ৫টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। দ্বিতীয় ধাপে ৬১টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার একজন প্রার্থী মৃত্যুবরণ করায় ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More