শহরের সুবিধা গ্রামেই : বাস্তবায়ন করা হচ্ছে স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম প্রকল্প

স্টাফ রিপোর্টার: শহরের সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে তৈরি হবে দেশের প্রতিটি গ্রাম। উন্নত বিশ্বের ন্যায় প্রতিটি গ্রাম হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা হিসেবে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি করা হবে দেশের গ্রামগুলো। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দেশের ৮ বিভাগে ১৫টি গ্রামকে মডেল হিসেবে বেছে নেয়া হবে বলে জানা গেছে। পর্যায়ক্রমে তা বাড়িয়ে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত বাংলাদেশের সকল গ্রামকেই এর অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ২০৪১ সালে হবে উন্নত বাংলাদেশ। সেভাবেই সকল ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ক্রমান্বয়ে শহর ও গ্রামের ব্যবধান ঘোচানো হবে। নাগরিকদের প্রাপ্য সকল প্রকার সুবিধা নিশ্চিত করতে যৌথভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। শহরের নাগরিকদের দেয়া সরকারের সকল প্রকার সেবার সুযোগ দেয়া হবে গ্রামে বসবাসকারীদের। উন্নত বিশ্বের ন্যায় দেশের প্রতিটি গ্রামকেই শহরের আদলে তৈরি করা হবে। প্রতিটি স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামে বিদ্যুত, পানি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, উন্নত স্যানিটেশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, আধুনিক রাস্তা ঘাট, মার্কেট, খেলার মাঠ, পার্ক এবং বিনোদন কেন্দ্র তৈরি করা হবে। প্রাপ্য সকল নাগরিক সুবিধা দিয়ে তৈরি করা হবে ‘মডেল গ্রাম’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী উন্নত বাংলাদেশ গঠনে তার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে এমন আধুনিক সুবিধাযুক্ত গ্রাম গড়ে তোলার উদ্যোগ বাস্তবায়নের দিকেই সরকার এগোচ্ছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী (এলজিআরডি) তাজুল ইসলাম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে দেশের প্রতিটি গ্রামে নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়ার জন্য ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী সরকারের কয়েকটি মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে কাজ শুরু করেছে। মূলত নাগরিকদের শহরমুখিতা ঠেকাতে এবং শহর ও গ্রামের ব্যবধান ঘোচাতেই এমন উদ্যোগের মাধ্যমে ‘গ্রাম হবে শহর’ পরিকল্পনা ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়নের দিকেই এগোচ্ছে সরকার। এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে মূল নেতৃত্বে থাকবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। যার কাজে সহায়তা করবে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দফতর বা প্রতিষ্ঠান। এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হলে শহরের ওপর চাপ কমবে। কাজের উদ্দেশ্যে গ্রাম থেকে ছুটে আসতে হবে না সাধারণ ও নিম্নআয়ের মানুষকে। গ্রামেই তৈরি করা হবে নানা নাগরিক সুবিধাযুক্ত উন্নত জীবনের জন্য সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। বেকারত্ব দূর করতে শিল্প কারখানা স্থাপনসহ নানা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে গ্রামেই তৈরি করা হবে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান।

প্রাথমিকভাবে দেশের আটটি বিভাগের আটটি গ্রাম এবং সাতটি বিশেষ অঞ্চলের সাতটি মোট ১৫টি গ্রাম নিয়ে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা হিসেবে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’-এর উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য প্রাথমিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। পরিকল্পনায় শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, সবার জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা, প্রতিটি নাগরিকের জন্য উন্নত ও আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা গড়ে তোলা হবে। এছাড়া সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুত ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি,কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেয়া হবে। একইসঙ্গে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্য পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরে রূপান্তরিত করা হবে।

গ্রামের মানুষকে অবহেলিত রেখে উন্নত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। তাই গ্রামে শহরের সকল সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেয়া হবে। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আমার গ্রাম আমার শহর : প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির প্রথম সভায় সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। এ সময় মাঠ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই নির্দেশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদেরকে উপস্থিত থাকতে চিঠি দেয় এলজিআরডি মন্ত্রণালয়। এরপরই বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিব এবং মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাসহ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলেন। সভায় উদ্যোগ বাস্তবায়নে নানা দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে গ্রামে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেয়ার চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এর গুণগতমান এবং টেকসই হওয়া নিশ্চিত করা। গ্রামে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা তৈরি করার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তাই এ বিশাল উদ্যোগ ফলপ্রসূ করতে সব মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এ পরিকল্পনা বিভিন্ন পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে। এছাড়া সরকারের এ বিশেষ উদ্যোগ ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে স্ব স্ব কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানোর জন্য সচিবদের নির্দেশ দেয়া হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবরা কর্মপরিকল্পনা পাঠানোর পর তা যাচাই-বাছাই করে মডেল গ্রাম উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ নেবে ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে দেয়া হবে বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এলজিআরডি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আমার গ্রাম আমার শহরকে পাইলট প্রজেক্ট করার জন্য টেকনিক্যাল প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে চ্যালেঞ্জ হিসেবে একটি গ্রামে এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিভাবে সফলতা আসে তা দেখা হবে। এতে সফলতা পেলে পরবর্তীতে ১৫টি মডেল গ্রাম তৈরি করা হবে। এরপরই দেশের প্রতিটি গ্রামকে এর অন্তর্ভুক্ত করতে মাঠে নামবে সরকার।

গ্রামীণ অর্থনীতি অত্যন্ত শক্তিশালী করে প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানো হবে। গ্রামে আয় উপার্জনের যে ব্যবস্থা রয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হবে। যার সবই হবে পরিকল্পিত। যার ফলে ক্রমান্বয়ে সমগ্র বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ শীর্ষক আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ উদ্যোগ গ্রহণের বিশেষ অঙ্গীকার করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ ওয়াদা পূরণে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাই ক্রমান্বয়ে শহর ও গ্রামের ব্যবধান ঘোচানো হবে। নাগরিকদের প্রাপ্য সকল প্রকার সুবিধা নিশ্চিত করতে যৌথভাবে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেবে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। শহরের নাগরিকদের দেয়া সরকারের সকল প্রকার সেবার সুযোগ দেয়া হবে গ্রামে বসবাসকারীদের। উন্নত বিশ্বের ন্যায় দেশের প্রতিটি গ্রামকেই শহরের আদলে তৈরি করা হবে। প্রতিটি গ্রামে রাস্তা, খেলার মাঠ, পার্ক তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে গ্রাম হবে শহর। ক্রমান্বয়ে প্রতিটি গ্রামেই প্রাপ্য সকল নাগরিক সুবিধা দিয়ে তৈরি করা হবে ‘মডেল গ্রাম’। যার স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে দেশের আটটি বিভাগের আটটি গ্রাম এবং সাতটি বিশেষ অঞ্চলের সাতটি মোট ১৫টি গ্রামকে আমার গ্রাম, আমার শহরের উদ্যোগের আওতায় আনতে প্রাথমিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে উন্নত যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়োনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকবে। এছাড়া বিদ্যুত ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরে রূপান্তরিত করা হবে। মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে গ্রামে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেয়ার চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এর গুণগতমান এবং টেকসই নিশ্চিত করা। গ্রামে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা তৈরি করার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তাই সব মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

তাজুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে একটা গ্রামকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। যে গ্রামটাকে উদ্যোগ বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়া হবে। আমরা যদি গ্রামের মানুষের জীবনমানের উন্নতি করতে পারি, রোজগারের ব্যবস্থা করতে পারি, কোন ব্যক্তি যদি মাসে ২০-৩০ হাজার টাকা রোজগার করতে পারে, তাহলে তার জীবনমান উন্নত হবে। এ রকম একটা গ্রাম করব। এটার জন্য সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, গ্রামের মানুষকে অবহেলিত রেখে উন্নত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়, তাই গ্রামে শহরের সকল সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেয়া হবে। তিনি বলেন, উন্নত জীবনের আশায় মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে আসছে। আমরা যদি গ্রামে শহরের সব সুবিধা নিশ্চিত করি তাহলে মানুষ আর শহরে আসবে না। গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন কল-কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি করা হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More