শাবি উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে ছয় দিন ধরে চলছে টানা আন্দোলন

সব শিক্ষার্থী অনশনে বসার হুমকি : অন্ধকারে উপাচার্য
স্টাফ রিপোর্টার: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে টানা ছয় দিন ধরে আন্দোলনেও কোনো ফল আসেনি। তাই এবার সব শিক্ষার্থীকে নিয়ে একসঙ্গে অনশনে বসার হুমকি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনের অংশ হিসাবে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ। সোমবার এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অন্ধকারে উপাচার্য। বিদ্যুৎ না থাকায় পানিও শেষের দিকে বলে জানা গেছে। বন্ধ রয়েছে তার বসভবনের কেবল ইন্টারনেট সেবাও। জেনারেটরের মজুদ জ্বালানিও সোমবার রাতে শেষ হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছিলো।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের দেয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনকারীরা। তারা বলেন, এই আন্দোলনে কেউ কেউ বহিরাগত তকমা দেয়ার চেষ্টা করছেন। এটি একেবারেই অযৌক্তিক এবং হাস্যকর। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলশী কুমার দাস বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক মনে হয়েছে। তারা পুলিশের জঘন্য হামলার শিকার। আর এখানে আমরা যারা শিক্ষক, আন্দোলনকারীদের দেখছি, তাদের বহিরাগত বলার সুযোগ নেই।
এ ছাড়া অনশনস্থলে গোপনীয়তায় অভিযোগও উঠেছে। এ প্রসঙ্গে এই শিক্ষক নেতা বলেন, গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সবাই তাদের অনশনস্থলে যাচ্ছে, সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষকরাও কয়েক দফা সেখানে গিয়েছেন, এখনও যাচ্ছেন, কোথাও গোপনীয়তা রয়েছে বলে মনে হয়নি।
রোববার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আন্দোলন হচ্ছে তাতে বহিরাগতদের ইন্ধন রয়েছে। অনশনস্থলে গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। অন্যদিকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল একটি বিদেশি গণমাধ্যমের কাছে এই আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলে দাবি করেন। এসব বিষয় নিয়ে সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে মুহাইমিনুল বাশার বলেন, আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এখানে বহিরাগতের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এজন্য আমরা আজ সকাল ৮টা থেকে সবার পরিচয় যাচাই করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা আর এই উপাচার্যকে চাই না। তার পদত্যাগের দাবিতেই আমরা আন্দোলন করছি। এখানে তৃতীয়পক্ষের ইন্ধনের অভিযোগ অযৌক্তিক।
নিজেদের আন্দোলন অহিংস উল্লেখ করে মুহাইমিনুল বলেন, আমাদের অনশন যখন ১০০ ঘণ্টায় যায় তখন বাধ্য হয়েই আমরা উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেই। তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। দীর্ঘ অনশনে আমাদের সহপাঠীদের শারীরিক অবস্থা যখন ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে তখন এমন মন্তব্য বড়ই বেদনাদায়ক।
সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে প্রবেশকারীদের পরিচয় যাচাই করতে দেখা গেছে আন্দোলনকারীদের। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি দল প্রবেশকারী সবার পরিচয় শনাক্ত করে একটি খাতায় নাম পরিচয় লিখে তবেই প্রবেশ করতে দিচ্ছেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা বলেন, উপাচার্য এবং সরকার বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের জীবনের চেয়ে উপাচার্যের চেয়ারের দাম বেশি।
এদিকে দুই দফায় আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে। প্রতি ঘণ্টায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন কেউ না কেউ, আবার সুস্থ হয়েই ফিরছেন অনশনস্থলে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১৭ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাকি ১০ শিক্ষার্থীকে অনশনস্থলেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আন্দোলনের ভাষা হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়াল আর গোলচত্বর : উপাচার্য ফরিদের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনের অন্যতম ভাষা হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরটি এখন শিক্ষার্থীদের অন্যরকম প্রতিবাদের ভাষা। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের সেøাগান যেন বলছে গোলচত্বরটি। যা রংতুলির ছোঁয়ায় ফুটে উঠেছে। রোববার গভীর রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘সেভ সাস্ট’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে দেয়া সেøাগানগুলো সড়কে-দেয়ালে ফুটিয়ে তুলেছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, গোলচত্বরের অর্ধেক অংশজুড়ে ‘পতন পতন পতন চাই, স্বৈরাচারের পতন চাই’, ‘যেই ভিসি মিথ্যা বলে, সেই ভিসি চাই না’, ‘যেই ভিসি বোমা মারে, সেই ভিসি চাই না’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, শাবিপ্রবি মুক্তি পাক’ ইত্যাদি সেøাগান লেখা হয়েছে।
প্রায় ২৪ ঘণ্টা অন্ধকার বাসভবনে উপাচার্য: রোববার রাত ৭টা ২০ মিনিটে উপাচার্য ফরিদের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার পর প্রায় ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় কেটে গেছে। বাসভবনে পুলিশ ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিচ্ছেন না আন্দোলনকারীরা। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সরেজমিন দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা মানবপ্রাচীর তৈরি করে রেখেছেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না তারা। বিকালে উপাচার্যের বাসায় প্রক্টর ড. আলমগীর কবীরের নেতৃত্বে প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্যরা খাবার নিয়ে যেতে চাইলে বাধা দেন শিক্ষার্থীরা। পরে বাধার মুখে ফিরে যান তারা। তবে শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্যের খাবারের প্রয়োজন হলে খাবার সরবরাহ করবে আন্দোলনকারীরা।
অস্ত্রোপচারেও ভাঙেনি অনশন: অনশনরত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী মাহিন শাহরিয়ার রাতুলের শরীরে অস্ত্রোপচার করা হলেও অনশন ভাঙেননি তিনি। রোববার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে রাগীব রাবেয়া হাসপাতালে তার অ্যাপেনডিক্সে অস্ত্রোপচার হয় বলে জানা যায়। তার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। রাতুলের সহপাঠী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলেন, সে অনশনরত অবস্থায় দ্বিতীয় দিন তার হঠাৎ ব্যথা শুরু হয়েছিল। রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. নুরুল কাইয়ুম মোহাম্মদ মোরসালিন বলেন, তার অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লাস্ট স্টেজ ছিল। অপারেশন না করালে ব্লাস্ট হয়ে যেত। এখন তাকে স্টেপ ডাউন ইউনিটে (এসডিইউ) রাখা হয়েছে। সে এখন আশঙ্কামুক্ত।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More