শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে ২১ ফেব্রুয়ারির পর

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। তবে, সশরীরে পরীক্ষা চলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। রয়েছে জনসমাগমে বিধিনিষেধ। এ বিধিনিষেধ আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এরপর নতুন করে আর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে না বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে। ফলে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া এবং সীমিত পরিষরে ক্লাস শুরু ও পাঠদান শুরুর আশা করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেছেন, নতুন করে আর কোনো বিধি-নিষেধ আরোপের চিন্তা-ভাবনা নেই। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ওসমানী মেডিকেল কলেজে নিয়মিত পরিদর্শনে গেলে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফৌজিয়া জাফরীন এনডিসি বলেন, ‘চলমান বিধি নিষেধ আর বাড়বে না বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে। আমরাও জাতীয় করিগরি কমিটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগোযোগ অব্যাহত রেখেছি। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের টিকার প্রথম ডোজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ চলমান রয়েছে। কওমি শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় ভালো সংবাদের অপেক্ষায় সবাই।’
স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, করোনার মধ্যে স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হলেও আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকেই কেটে যেতে পারে বিধিনিষেধ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রথমে সীমিত আকারে সশরীরে পরীক্ষার সঙ্গে ক্লাসও শুরু হবে। এরপর শুরু হতে পারে নিয়মিত ক্লাস।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত ২০২০ সালের অনার্স ৪র্থ বর্ষ, একই বছরের ডিগ্রি পাস ও ২০১৮ সালের ডিগ্রি (পুরাতন) পরীক্ষা গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে, চলবে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রয়ক অধ্যাপক এসএম গাউসুল আজম জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাজিল (স্নাতক) পাস ১ম, ২য় ও ৩য় বর্ষ পরীক্ষা-২০২০ গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষাসমূহ চলমান রয়েছে।
এছাড়া দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। আর ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা হবে একই মাসের ২২ তারিখে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আগামী ১ এপ্রিল এমবিবিএস আর ২২ এপ্রিল বিডিএসের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা সংক্রান্ত সব কিছু গাইডলাইন আকারে শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।
অন্যদিকে চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের পরীক্ষা চলমান রয়েছে। সেশনজট ও চাপ কমাতে বন্ধের মাঝেও কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
সরকারি সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, চলমান ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষ, মাস্টার্স প্রথম পর্ব ও বিভিন্ন বর্ষের চলমান ব্যবহারিক পরীক্ষাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে। পরিস্থিতি খারাপ না হলে অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষাও পূর্বঘোষিত সম্ভাব্য সময়ে অনুষ্ঠিত হবে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে। পরীক্ষার্থীদের আসন বিন্যাস করা হয়েছে সেভাবে। এ জন্য পরীক্ষা শেষ করতে সময় বেশি লাগছে। শিক্ষার্থী-পরীক্ষার্থীরাও সেটি মেনে নিয়েছে। তাদের সুবিধা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিসিএস’র আবেদনের সময় এক মাস বাড়ানো হয়েছে।
করোনার সংক্রমণ গত কিছুদিন থেকেই নিম্নমুখী। গত সপ্তাহে সংক্রমণ ৪৭ শতাংশ থেকে কমে গতকাল মঙ্গলবার ২০.০৩ শতাংশে এসেছে। তবে, হঠাৎ করেই মৃত্যু হার ১৩ জন থেকে বেড়ে ৪৩ জনে গিয়েছে। যাদের সংক্রমণ হচ্ছে এবং যারা মৃত্যুর মুখে পড়ছেন, তাদের অধিকাংশই টিকা নেননি বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
করোনার সংক্রমণ গত কিছুদিন থেকেই নিম্নমুখী হওয়ায় করোনার সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও নতুন করে বিধি নিষেধের সুপারিশ করবেন না। তবে, স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালনের উপর বেশি জোর দেবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্ধারকরাও তাই ২১ ফেব্রুয়ারির পর নতুন করে আর ছুটি বাড়ানোর কথা ভাবছেন না। সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More