শেষ হলো প্রচারণা : কঠোর নিরাপত্তায় কাল দেশের ৫৭ জেলা পরিষদের ভোট

গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের ঘটনার পর এ নির্বাচনকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে ইসি

স্টাফ রিপোর্টার: শেষ হলো জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে এ প্রচারণা শেষ হয়। সোমবার (১৭ অক্টোবর) দেশের ৫৭টি জেলায় একযোগে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্দলীয় এ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। এরই মধ্যে নির্বচন কমিশন (ইসি) নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলার অধীনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই কেবল এ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। তিনটি পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দুটি জেলা ভোলা ও ফেনীতে সব পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় সেখানে ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না। এছাড়া দুই জেলা নোয়াখালী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাচন আদালতের নির্দেশে স্থগিত করা হয়েছে। আদালতের রায়ে স্থগিত নোয়াখালী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৭ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও সাধারণ সদস্য পদে ৬৯ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৯ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

ইসির তথ্য অনুযায়ী নির্বাচনে ৩৪টি জেলা পরিষদে মোট ৯০ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। অপরদিকে সংরক্ষিত সদস্য পদপ্রার্থী ৬২০ জন আর সাধারণ পদে মোট প্রার্থীর সংখ্যা এক হাজার ৫০৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সব মিলিয়ে তিন পদে মোট দুই হাজার ১২৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অবশ্য স্থগিত নোয়াখালী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রার্থী বাদ গেলে এই সংখ্যা কিছুটা কমবে।

এদিকে নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত রাখতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে নির্বাচন কমিশন। বিশেষ করে গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের নানা ঘটনার পর এ নির্বাচনকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে ইসি। কোনও জেলায় যাতে স্থানীয় এমপি, মন্ত্রী বা প্রভাবশালী কোনও ব্যক্তি ভূমিকা রাখতে না পারে সেজন্য এরমধ্যেই তাদের সতর্ক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।

নির্বাচন কমিশন থেকে একাধিক নির্দেশনা দিয়ে নির্বাচনি কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়েছে। ভোটকক্ষের গোপনীয়তা রক্ষা নিশ্চিতকরণ ও ভোট কক্ষে ভোটাররা যাতে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে না পারে প্রিজাইডিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সেই নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য ৯৪ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা ভোটগ্রহণের আগে দুইদিন, ভোট গ্রহণের দিন ও ভোটগ্রহণের পরের দিন মোট ৫দিন দায়িত্ব পালন করবেন।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার ৬৩ হাজার ১৫৯ জন। এর মধ্যে নারী ১৪ হাজার ৯২৩ ও পুরুষ ৪৮ হাজার ২৩৬ জন। দেশের ৬১টি জেলার স্থানীয় সরকারের ৪টি প্রতিষ্ঠানের (সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্যের ভিত্তিতে এ ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার তৈরি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য পদ ৪৬৩টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদ ১৭২টি। চেয়ারম্যান পদ রয়েছে ৬১টি। ৪৭৭টি ভোটকেন্দ্রের ৯৫৫টি ভোটকক্ষে এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের কথা রয়েছে।

ভোটের নিরাপত্তায় যা থাকছে: নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় পুলিশের অস্ত্রসহ মোট তিনজন, আনসারের অস্ত্রসহ দুইজন ও অঙ্গীভূত আনসারের দুুই জন, মোট সাত জন নিয়োগ করা হবে। ভোটগ্রহণের আগের দিন, ভোটগ্রহণের দিন ও পরের দিন মোট তিনদিন ভোটকেন্দ্রে ও সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় এরা দায়িত্ব পালন করবেন। এক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্রের গুরুত্ব অনুসারে জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের সাথে পরামর্শক্রমে পুলিশ সুপার, ক্ষেত্রবিশেষে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার প্রাপ্যতা সাপেক্ষে ফোর্সের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারবেন।

প্রতিটি উপজেলার জন্য পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে ১টি মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং র‌্যাবের ১টি করে মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করতে হবে। তবে বাস্তব অবস্থা ও স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্সের সংখ্যা হ্রাস/বৃদ্ধি করা যাবে। ফোর্সের ন্যূনপক্ষে ১টি দল ভোটকেন্দ্রের আশেপাশের এলাকায় নিবীড় টহল দানের ব্যবস্থা করবে। যতদূর সম্ভব মহিলা ভোটকক্ষের জন্য মহিলা ও পুরুষ ভোটকক্ষের জন্য পুরুষ অঙ্গীভূত আনসার নিয়োগ করতে হবে।

প্রতিটি জেলায় জন্য একজন করে মোট ৬১জন ম্যাজিস্ট্রেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ প্রতিরোধ ও আচরণ বিধি সংক্রান্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য নির্বাচনী এলাকায় ভোটগ্রহণের পূর্বের দু’দিন ভোটগ্রহণের দিন ও ভোটগ্রহণের পরের দুদিন অর্থাৎ ১৫ অক্টোবর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত মোট পাঁচ দিনের জন্য নিয়োজিত রয়েছেন।

নির্বাচনী অপরাধসমূহ ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৯৮ এর ধারা- ১৯০ এর উপ-ধারা (১) এর অধীন বিচারার্থে আমলে নিয়ে বিচার সম্পন্ন করার জন্য ৬১ (একষট্টি) জেলার মধ্যে ১১টি জেলা যথা- ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, রংপুর, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা এর জন্য প্রতিটিতে ৪ (চার) জন করে মোট ৪৪ জন এবং অবশিষ্ট ৫০ জেলায় প্রতিটিতে এক জন করে মোট ৫০ জনসহ সর্বমোট ৯৪ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটকে ভোটগ্রহণের পূর্বের দুইদিন, ভোটগ্রহণের দিন ও ভোটগ্রহণের পরের দুইদিন অর্থাৎ ১৫ অক্টোবর, থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত মোট পাঁচ দিনের জন্য দায়িত্ব পালন রয়েছেন।

এছাড়া বিজিবি/কোস্টগার্ড/আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ১/২টি প্লাটুন জেলা সদরে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে, দ্বীপাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় কোস্টগার্ড দায়িত্ব পালন করবে। এক্ষেত্রে কোস্টগার্ড কোন কোন ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম তার একটি তালিকা নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে। বিজিবি এবং কোস্টগার্ড উভয়ে ফোর্স মোতায়েনের বিষয়টি সমন্বয় করবে। রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারের চাহিদা ব্যতিরেকে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোট গণনাকক্ষে কোনো প্রকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে না।

সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ প্রবেশ/নির্বাচনের জন্য হুমকীস্বরূপ কোন ব্যক্তি/বস্তুর যাতায়াত/চলাফেরা ইত্যাদি আইন অনুযায়ী রোধ করা, মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে, নির্বাচনী এলাকায় সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে, বিশেষ পরিস্থিতিতে রিটার্নিং অফিসার সহায়তা কামনা করলে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় তাকে সহায়তা করবে, রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারের চাহিদা ব্যতিরেকে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোট গণনাকক্ষে কোন প্রকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে না।

ভোটদানের জন্য ভোটারগণ যাতে নির্বিঘ্নে ও স্বাচ্ছন্দে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন, সে জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী ভ্রাম্যমাণ ইউনিটসমূহ কর্তৃক নিবিড় টহল দানের ব্যবস্থা করা, নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীর। ভোট কেন্দ্রের অভ্যন্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করাই হবে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রধান কাজ। এছাড়া নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল সরঞ্জাম ও দলিল দস্তাবেজ আনা নেয়ার সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্বাচন কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্বাচন কার্যালয়সমূহ, রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের নিরাপত্তা বিধান করা, স্থানীয় জননিরাপত্তা, ভোটকেন্দ্রে ভোটারগণের সুশৃংখল লাইন করানোসহ স্থানীয় শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, ভোটারগণের জন্য আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ। পুলিশ বাহিনী কর্তৃক নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে। অস্ত্র ও গোলাবারুদ স্ব স্ব বাহিনীর সদর দপ্তর নির্ধারণ করবে, স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় পূর্বক আবাসন ব্যবস্থা নির্ধারণ করতে হবে, স্ব স্ব বাহিনীর সদর দপ্তর তাদের রেশন নির্ধারণ করবে।

৬১টি জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৬৩ হাজার ১৫৯ জন। এদের মধ্যে নারী ভোটার ১৪ হাজার ৯২৩ জন ও পুরুষ ভোটার ৪৮ হাজার ২৩৬ জন। নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য পদ রয়েছে ৪৬৩টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদ রয়েছে ১৭২টি। আর চেয়ারম্যান পদ রয়েছে ৬১টি। এসব নির্বাচনে ৪৭৭টি ভোটকেন্দ্রের ৯৫৫টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী রয়েছে ৯৬ জন, সাধারণ সদস্য পদে এক হাজার ৫১৩ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে রয়েছেন ৬২২ জন প্রার্থী।

নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৬ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৬৬ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৯ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে নোয়াখালী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচন আদালতের নির্দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More