সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ : রেকর্ড ভেঙে ছুটছে করোনা

আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়লেও বাড়ছে না সচেতনতা : কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই
স্টাফ রিপোর্টার: দেশে করোনা সংক্রমণের হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ইতোমধ্যে আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিনে শনাক্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। গত দুই দিনে শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজারের বেশি। দৈনিক মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে অর্ধশতর কাছাকাছি। দুই দিনে ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ইতোমধ্যে ১৮ দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। মুমূর্ষু রোগীদের জন্য কোথাও ফাঁকা নেই আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) শয্যা। তবে মহামারির এই মহাবিপর্যয়েও দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো ধরনের সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। হাটবাজার, বাস-লঞ্চ, ট্রেন, শপিংমল এমনকি রাস্তাঘাট কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। জনসমাগম এড়িয়ে চলার প্রবণতাও উধাও। ঘন ঘন হাত ধোয়ার অভ্যাসও চলে গেছে। প্রতিদিন এতো শনাক্ত ও মৃত্যুও মানুষের মধ্যে করোনা ভীতি কাজ করছে না।
এদিকে দেশে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো মঙ্গলবার পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। মারা গেছেন ৪৫ জন। ফলে মোট মৃত্যু পৌঁছে গেছে নয় হাজারের কাছাকাছি। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫ হাজার ৪২ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। দেশে এক দিনে রেকর্ডসংখ্যক মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে সোমবার। ওইদিন ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৫ হাজার ১৮১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে এবং ৪৫ জনের মৃত্যু হয়। একদিনে শনাক্ত রোগীর এই সংখ্যা দেশে মহামারি শুরুর পর থেকে সর্বোচ্চ। এর আগে গত বছরের ২ জুলাই মোট ৪ হাজার ১৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিলো। এতোদিন এই সংখ্যাই ছিলো একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। আর গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসের মৃত্যুর ওই সংখ্যা গত সাত মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে গত বছর ২৮ আগস্ট এর চেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছিল। সেদিন ৪৭ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিলো স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার বেড়ে ১৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ হয়েছে, যা ২৪ আগস্টের পর সবচেয়ে বেশি।
পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশে করোনা সংক্রমণের হার যে হারে বাড়ছে তাতে এখনই এলাকাভিত্তিক লকডাউন দেয়া না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। তবে এখনই সাধারণ ছুটি বা লকডাউন ঘোষণার চিন্তাভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ১৮টি নির্দেশনা জারি করার পর সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনা সাংবাদিকদের শুনিয়ে বলেন, আগের অভিজ্ঞতা থেকেই এসব নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সাধারণ ছুটি দেয়ার কোনো চিন্তাভাবনা সরকারের আছে কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের এ রকমের কোনো সিদ্ধান্ত নেই, সাধারণ ছুটি দেয়ার ব্যাপারে এ পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি। এখন পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বা ওই ধরনের চিন্তাভাবনা নেই। তবে আমরা সতর্ক হলে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত বছর ২৩ মার্চ প্রথমবারের মতো ‘সাধারণ ছুটির’ ঘোষণা দিয়েছিলো সরকার। শুরুতে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ‘ছুটি’ ঘোষণা হলেও পরে তার মেয়াদ বাড়ে কয়েক দফা। ছুটির মধ্যে সবকিছু বন্ধ থাকার সেই পরিস্থিতি ‘লকডাউন’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৬ লাখ ৫ হাজার ৯৩৭ জনে। গত এক দিনে মারা যাওয়া ৪৫ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট ৮ হাজার ৯৯৪ জনের মৃত্যু হলো। বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ২ হাজার ১৬২ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত একদিনে। তাতে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ৪০ হাজার ১৮০ জন হয়েছে।
বাংলাদেশে গত বছর ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার এক বছর পর সোমবার প্রথমবারের মতো একদিনে পাঁচ হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্তের খবর আসে। আর এর মধ্যদিয়ে দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়িয়ে যায়। গত বছরের ৩০ নভেম্বরের পর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে সংক্রমণের হার ধারাবাহিকভাবে কম ছিলো। কিন্তু মার্চের শুরু থেকে দৈনিক শনাক্ত রোগী, মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫ লাখ থেকে সাড়ে ৫ লাখ হতে যেখানে ৭৭ দিন সময় লেগেছিল, তা ছয় লাখে পৌঁছুতে সময় নিয়েছে মাত্র ২২ দিন। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More