সংসদে নির্বাচন কমিশন গঠনে আলোচিত বিল পাস

খসড়া আইনটি তড়িঘড়ি করে আনা হয়েছে : সার্চ কমিটিতে থাকবেন একজন নারী
স্টাফ রিপোর্টার: সার্চ কমিটিতে রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুই বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন নারী রাখার বিধান যুক্ত করে বহুল আলোচিত নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন বিল পাস করেছে জাতীয় সংসদ। বৃহস্পতিবার আলোচিত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এখন রাষ্ট্রপতির সই করার পর গেজেট আকারে প্রকাশ হলেই প্রথমবারের মতো প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে আইন পাবে বাংলাদেশ। দেশের পরবর্তী নির্বাচন কমিশন এই আইনের অধীনেই গঠন করা হবে। বিলে সার্চ কমিটির কাজ ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে। যা সংসদে উত্থাপিত বিলে ১০ কার্যদিবস ছিলো। বিলটি পাস হওয়ার সময় এই দুটি সংশোধনী এমপিদের থেকে সুপারিশ আকারে এসেছে। এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাইবাছাই কমিটিতে পাঠানো হয় এবং জাতীয় পার্টি, বিএনপি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্যরা বিলের ওপর সংশোধনী প্রস্তাব দেন। ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন সার্চ কমিটিতে দুই জন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন নারী রাখার প্রস্তাব দেন। আইনমন্ত্রী সেই প্রস্তাব গ্রহণে সায় দিলে, সংসদ তা ভোটে গ্রহণ করে। ফলে, ইসি গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নাম সুপারিশের জন্য যে সার্চ কমিটি থাকবে সেখানে একজন নারী থাকবেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমামের সংশোধনী সংসদ গ্রহণ করে বিলে থাকা সার্চ কমিটির কাজ ১০ কার্যদিবস করার বিধানটি ১৫ কার্যদিবস করা হয়েছে। প্রথমে এই বিলের নাম ছিল, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল।’ সংসদে সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে এখন নাম হবে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল।’ বিলে বলা ছিল রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন, যার সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক। সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুইজন বিশিষ্ট নাগরিক। তাদের মধ্যে একজন হবেন নারী। তিনজন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির সভার কোরাম হবে। কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানো প্রস্তাবগুলো পাসের সময় জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা সার্চ কমিটিতে সংসদের প্রতিনিধিত্ব দাবি করেন। তারা বিলটির নানা দিকের সমালোচনা করেন। এছাড়া বিলের ওপর বিভিন্ন শব্দ ও ছোটখাটো কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। খসড়া আইনটি ‘তড়িঘড়ি করে’ আনা হয়েছে। বিলটি পাসের সময় জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যদের এমন অভিযোগের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ করে। যারা সংলাপে যায়নি এবং গিয়েছেন তারা সবাই আইনের কথা বলেছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আইনের বিষয়ে তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। আমরা তড়িঘড়ি করিনি। এ আইনের কথা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালেই এই আইনের কথা উঠেছিল।’ আইনমন্ত্রী এটিএম শামসুল হুদা কমিশন এবং সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) এ আইন সংক্রান্ত খসড়া থেকে পড়ে বলেন, ওই দুটির সঙ্গে সরকারের আনা বিলের মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। গত ২৩ জানুয়ারি বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সাত দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। ২৬ জানুয়ারি দুটি পরিবর্তনের সুপারিশসহ প্রতিবেদন সংসদে তোলেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার। সংসদে উত্থাপিত বিলে সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতা সংক্রান্ত ৫(গ) ধারায় বলা ছিল, সিইসি ও কমিশনার হতে গেলে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই ধারায় সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদের পাশাপাশি ‘স্বায়ত্তশাসিত ও পেশায়’ যুক্ত করার সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। অর্থাৎ সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে সার্চ কমিটি কাউকে সুপারিশের ক্ষেত্রে এমন কাউকে করতে হবে, যার কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা আছে। আর অযোগ্যতার ক্ষেত্রে ৬ (ঘ) ধারায় বলা আছে, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হলে সিইসি ও কমিশনার হওয়া যাবে না। এখানে দুই বছরের কারাদ- উঠিয়ে দিয়ে শুধু কারাদ-ের সুপারিশ করে কমিটি। অর্থাৎ, নৈতিকস্খলন ফৌজদারি অপরাধে যে কোনো মেয়াদের সাজা হলেই সিইসি বা কমিশনার হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। সার্চ কমিটির (অনুসন্ধান কমিটি) কাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বেঁধে দেয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নাম সুপারিশ করবে। অনুসন্ধান কমিটি সিইসি ও কমিশনারদের প্রতি পদের জন্য দুইজন করে ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে। কমিটির গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে দেবে বলে বিলে বলা হয়েছে। বিলে বলা আছে-সার্চ কমিটি সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনার পদে যোগ্যদের অনুসন্ধানের জন্য রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে। সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে কাউকে সুপারিশের ক্ষেত্রে তিনটি যোগ্যতা থাকতে হবে বলে বিলে বলা হয়েছে। তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে; ন্যূনতম ৫০ বছর বয়স হতে হবে; কোনো গুরুত্বপুর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এছাড়া সিইসি ও কমিশনার পদের জন্য ছয়টি অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে। ১. আদালত অপ্রকৃতিস্থ ঘোষণা করলে; ২. দেউলিয়া হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি না পেলে; ৩. কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে; ৪. নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদন্ডে দন্ডিত হলে; ৫. ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট-১৯৭৩ বা বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনালস) অর্ডার-১৯৭২ এর অধীনে কোনো অপরাধের জন্য দন্ডিত হলে ৬. আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ব্যতীত প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More